অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি। প্রিয়জনের বিপদগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা। সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
একবছর আগে মুরারইয়ের রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের পেটের বাঁদিকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। পেশায় পাথর ব্যবসায়ী বছর ২৭-এর ওই যুবককে রামপুরহাটে এক চিকিৎসককে দেখান। ওই চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খেয়ে সেই সময় ব্যথা কমলেও পরে মাঝে মধ্যে ব্যথা অনুভব করতেন তিনি। এভাবেই কয়েকমাস পেরিয়ে যায়। অবশেষে মাসতিনেক আগে পরিবারের সদস্যরা মিজানুরকে বেঙ্গালুরুর মনিপাল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পরীক্ষা করে তাঁকে ওষুধ দেন। এভাবেই তিনবার ছেলেকে নিয়ে বেঙ্গালুরু দৌড়াতে হয়েছে বাবা তোফাজ্জোল হোসেনকে।
তোফাজ্জোল সাহেব বলেন, ওখানকার চিকিৎসকেরা অপারেশনের কথা বললেও ঝুঁকি নিতে চাননি। অবশেষে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনি। কথায় কথায় তিনি পূর্ব পরিচিত রামপুরহাট শহর যুব তৃণমূল সভাপতি ওয়াসিম আলি ভিক্টরকে দুশ্চিন্তার কারণ জানান। ভিক্টর সাহেবের পরামর্শে তিনি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে ডাঃ সৌরভ মাজিকে দেখান। ডাঃ সৌরভ মাজি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতেই তাজ্জব হয়ে যান। সাধারণত মানুষের হার্ট বাঁদিকে থাকে। এই যুবকের ডান দিকে। লিভার, অ্যাপেনডিক্স, গলব্লাডারও একইভাবে এই যুবকের বাঁদিকে। ধমনি সহ সমস্ত অর্গানই ওই যুবকের শরীরে উল্টো দিকে এবং তাঁর গলব্লাডারে ছোট ছোট পাথর রয়েছে। চিকিৎসকের ভাষায় এধরনের মানুষের এই রোগকে ‘সাইটাস ইনভারসিস টোটালিস’ বলা হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও ওই যুবকের হাসপাতলেই অপারেশন করতে রাজি হন ডাঃ সৌরভ মাজি। সেইমতো বৃহস্পতিবার দুপুরে টানা একঘণ্টা ধরে মাইক্রো সার্জারির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে গলব্লাডার কেটে বাদ দেওয়া হয়। ডাঃ সৌরভ মাজি বলেন, গলব্লাডারে স্টোন থাকলে সাধারণত পেটের ডানদিকে ব্যথা হওয়ার কথা। কিন্তু, এই যুবকের বাঁদিকে ব্যথা ছিল। ফলে, কী জন্য এই ব্যথা তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। পরে আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে। এরপর অপারেশনের জন্য অন্যান্য রিপোর্ট করতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর সমস্ত অর্গানই উল্টো দিকে। তিনি বলেন, ২০হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র একজনের এধরনের হয়। এই অপারেশনের জন্য থিয়েটারের সমস্ত সেটআপ পরিবর্তন করা হয়েছিল। কারণ, রোগীর ডানদিকে দাঁড়িয়েই অপারেশন করতে অভ্যস্ত। কিন্তু, এক্ষেত্রে উল্টো। ফলে সেটআপ সেভাবেই সাজাতে হয়েছিল। অপারেশনও করতে হয়েছে বাঁ হাতে। ফলে, অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। এদিন অপারেশন টিমে ছিলেন সার্জেন অমিতাভ দত্ত সহ তিন অজ্ঞানের চিকিৎসক।
ওই যুবকের মা কোহিনুর বিবি বলেন, সরকারি হাসপাতাল কোনও অংশে কম নয়। এখানেও ভালো পরিকাঠামো ও চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি চিকিৎসকের পাশাপাশি তৃণমূল যুব সভাপতি ও রামপুরহাটের মতো জায়গায় মেডিক্যাল কলেজ গড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা একের পর এক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। ভিন রাজ্যে যে চিকিৎসা হয়নি, তা এই হাসপাতালে হওয়া আমাদের কাছে গৌরবের।