অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি। প্রিয়জনের বিপদগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা। সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
খগেন্দ্রবাবুর এই এক চিলতে ছোট্ট গুমটিতে তেলেভাজা কিনতে রোজ সন্ধ্যায় ব্যাপক ভিড় জমে। শিঙাড়ার দাম এক টাকা হলেও দামের তুলনায় সাইজ কিন্তু খুব একটা সহজ নয়। সন্ধ্যায় শিঙাড়া, ফুলরি বিক্রি করা ছাড়াও সকালে গজা এবং নিমকি বিক্রি করেন তিনি। সকাল সন্ধ্যা তাঁর এই কাজে সাহায্য করেন স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী। তাঁদের একমাত্র ছেলে প্রীতম শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।
শান্তিপুর পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের চৌগাছাপাড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ট্যাচুর পাশে টিনের ছোট দোকানে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে একই দামে শিঙাড়া এবং ফুলুরি বিক্রি করে চলেছেন খগেন্দ্রনাথ দে। ৩০ বছর আগে বাবার হাত ধরে যখন প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি, তখন শিঙাড়ার দাম ছিল মাত্র তিন পয়সা। সেই দাম বাড়তে বাড়তে এখন এক টাকা হয়েছে। খগেন্দ্রবাবু বলেন, শিঙাড়ার দাম এক টাকা হলেও স্বাদ বা মানে অন্য কোনও দোকানের থেকে সাইজে ছোট নয়। স্বাদও ভালো। তিনি বাজার থেকে গোটা মশলা কিনে সেটাকে ভেজে হামাল দিস্তা দিয়ে গুঁড়ো করে পুরনো পদ্ধতিতে শিঙাড়া তৈরি করেন। কোনওরকম কেনা মশলা ব্যবহার করেন না। এছাড়া, শিঙাড়ায় আলুর সঙ্গে কখনও কপি, বিট আবার কখনও ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা দেন খগেন্দ্রবাবু।
খগেন্দ্রবাবুর কথায়, পুরনো পদ্ধতিতে এবং ঘরোয়াভাবে এই শিঙাড়া তৈরি করা হয় বলে গ্যাস অম্বল বা বুক জ্বালা হওয়ার আশঙ্কা কম। তারসঙ্গে কম দামের মধ্যে তেলেভাজা আমার দোকানে পাওয়া যায় বলে অন্য দোকান ফেলে বহু লোক আমার কাছে আসে। শিঙাড়া ও ফুলুরি ভাজা হয় কাঠের উনুনে। দিনে গড়ে প্রায় ৩০০ পিস শিঙাড়া এবং ৫০০ পিস ফুলুরি বিক্রি করেন খগেন্দ্রবাবু। তেলেভাজা বিক্রি করতে তাঁকে দোকানে কোথাও কোনও সাইনবোর্ড বা তেলেভাজার দাম লিখতে হয়নি। আবার দোকানে বসে তাঁকে হাঁকডাকও করতে হয় না।
পুরনো এই তেলেভাজার দোকান এলাকার মানুষকে সবাই চেনেন। একই দামে দীর্ঘদিন ধরে শিঙাড়া বিক্রি করে শহরের বুকে খুবই পরিচিত তিনি। এখন শহরের বুকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রচুর চপের দোকান হয়েছে। কিন্তু, এখনও শান্তিপুরের চৌগাছাপাড়ার এক টাকার শিঙাড়ার কথা শহরের মানুষ ভোলেননি। তাঁর শিঙাড়া আজও হিট।
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর ঘোষ বলেন, এই অগ্নিমূল্যের বাজারে চতুর্দিকে মানুষ যখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত, সেখানে দাঁড়িয়ে শহরের বুকে মাত্র ১ টাকায় শিঙাড়া পাওয়ার ঘটনা সত্যিই দৃষ্টান্ত। খগেন্দ্রবাবু বলেন, যতদিন পারব এই দামেই শিঙাড়া, ফুলুরি বিক্রি করার চেষ্টা করব। আগামী দিনেও বাধ্য না হলে মন থেকে দাম বাড়ানোর ইচ্ছা নেই।