অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরপর দু’দিনে মালদহে দৈনিক আক্রান্ত হয়েছেন ৪০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মালদহে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩২ জন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরী জানিয়েছেন, একদিনে জেলায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। শেষ ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ। পরিস্থিতি যে প্রবল উদ্বেগজনক তা মেনে নিয়ে জেলা প্রশাসন এবার প্রতিটি ব্লকে নতুন করে সেফ হোম খোলার পরিকল্পনা নিচ্ছে।
মালদহের করোনা আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। সম্প্রতি ১৬ জনেরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রবীণ চিকিৎসকদের পাশাপাশি তরুণ চিকিৎসকরাও এই মহামারীর শিকার হচ্ছেন বলে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল। বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার বেশ কয়েকজন কর্মীও ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যেসব চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের চেম্বার আপাতত বন্ধ। পরিস্থিতি বিবেচনা করে চেম্বারে রোগী দেখার সময় কমিয়ে দিয়েছেন অন্যান্য বেশ কয়েকজন চিকিৎসকও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, আমার চেম্বারের দু’জন সহায়ক করোনায় আক্রান্ত। ফলে স্যানিটাইজ করার পরেও বেশিক্ষণ রোগী দেখা সম্ভব হচ্ছে না। রোগীদের সমস্যা তো হচ্ছেই। কিন্তু, আমি এবং আমার মতো অনেক চিকিৎসকই কার্যত অসহায়।
হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে ইংলিশবাজারে চিকিৎসা করাতে আসা জিয়াউর রহমান বলেন, পরিচিত চিকিৎসককে পাইনি। বিকল্প চিকিৎসকের পরিষেবা পেতেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় বাড়ি থেকে যথাসম্ভব কম বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয় করে তোলার উপরেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। নতুন করে করোনা হাসপাতাল খোলা না হলেও ইংলিশবাজারের মডেল মাদ্রাসায় আগের মতোই সেফ হোম চালু করা হয়েছে। তাতে ৫০টি শয্যা থাকবে। এরপর পুরাতন মালদহের মুচিয়াতে আরেকটি সেফ হোম খোলা হবে। প্রতিটি ব্লকেই অন্তত একটি করে সেফ হোম খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে সকলকেই।
এদিকে করোনা নিয়ে উদ্বেগের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্কুলগুলিতেও। প্রায় সব স্কুল মাদ্রাসাতেই পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার একলাফে প্রায় তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।
মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক স্বামী তাপহরানন্দ বলেন, একথা ঠিকই সম্প্রতি পড়ুয়ারা ক্লাসে বেশ কম আসছে। করোনার কারণে অভিভাবকরা হয়তো তাঁদের স্কুলে পাঠাতে খুব একটা উৎসাহী হচ্ছেন না।
একটি মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, উপস্থিতি প্রায় তলানিতে এসে পৌঁছেছে বিশেষত করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার পর থেকে।নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অরুণ কুমার প্রসাদ বলেন, করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ থেকে পড়ুয়াদের নিরাপদ রাখতে অবিলম্বে স্কুল বন্ধ করা দরকার। ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকারাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সঙ্ঘের রাজ্য সহ সম্পাদক উজ্জ্বল তালুকদার বলেন, ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষশিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী সকলের কথা ভেবেই ফের ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া উচিত। অনলাইন ক্লাস ফের চালু করা হোক।