উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের এক প্রতিনিধি ফোন করে বনগাঁ লোকসভা এলাকার এক বিধায়ক সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই বিধায়ক নাকি ভোটের আগে থেকেই পদ্ম শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ভোটে তাদের হয়েই গোপন অপারেশন চালিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই লোকসভা আসনে স্বরূপনগর ছাড়া বাকি ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপির কাছে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ফোনের উদ্দেশ্য, কথাটা যাতে জায়গামতো পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এই চোরাগোপ্তা গেরুয়া স্রোত বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভোটের ফল উল্টে দিয়েছে বলেই তাঁর দাবি। কোনও ক্ষেত্রে তৃণমূল জিতলেও ব্যবধান অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু উঁচুতলা পর্যন্ত এই ‘খবর’ পৌঁছে দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। পাছে তাঁকেই না ‘গদ্দার’ ঠাওড়ে বসে উচ্চতর নেতৃত্ব। তাই এই গোপন ফোন। এই সব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার দুপুরে তিন বিধায়ক সহ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক পুরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে ভিড়ে গিয়েছেন। যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে রেখেছেন আরও কয়েকজন। ওই জেলারই নেতা তথা রাজ্যের এক মন্ত্রী কিছুটা হতাশার সুরেই বললেন, জনা ২০ কাউন্সিলার দলবদল করতে পারে বলে শোনা গিয়েছে। বাস্তবে সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। তাঁরা দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। রাজ্যের আরেক মন্ত্রী বললেন, লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপি একলাফে ২ থেকে বেড়ে ১৮ হয়েছে এবং তৃণমূল ৩৪ থেকে নেমে ২২ আসন পেয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দলবদলের ঘটনা আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়। আটের দশক থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা ওই নেতার মতে, শুধুমাত্র ধর্মীয় মেরুকরণ নয়, দলীয় অন্তর্ঘাত এবং গোষ্ঠী কোন্দল নির্বাচনী ফলাফলের জন্য দায়ী। পাশাপাশি জনমানসে দলের স্থানীয় থেকে শীর্ষ স্তরের নেতৃত্বের একাংশের ভাবমূর্তিও ভোটহ্রাসের কারণ বলে মনে করেন তিনি। গত শনিবার দলীয় বৈঠকে এই ঘরশত্রুদের বিষয়টি গোচরে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর। টাকা ছড়িয়ে ভোট করা হয়েছে বলে কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে যেমন নির্দিষ্ট তথ্য তিনি হাতে পেয়েছেন, তেমনই কারা কারা গোপনে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে ভোট করিয়েছেন, তাও খুঁজে বের করার কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সূত্রেই, বিভিন্ন জেলা থেকে নিচু স্তরের নেতা-নেত্রীরা অনেকেই রাজ্য দপ্তরে যোগাযোগ করে গোপনে ‘খবর’ দিতে চাইছেন। তাঁদের মধ্যেও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন কেউ কেউ। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার মতে, অভিযোগ পেলেও তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করা উচিত হবে না। এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে ‘টাইট’ দিতে বিশ্বাসঘাতকের তকমা দিতে পারে। তাই স্রেফ সন্দেহের বশে এখনই কোনও পদক্ষেপ করা সঠিক হবে না। এতে দলের প্রকৃত অনুগামীদের উপরও কোপ পড়তে পারে। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। স্বভাবতই বাড়তি সতর্কতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের নিষ্পত্তি করা উচিত। কিন্তু গদ্দারদের ব্যাপারে তিনি যে কঠোর এবং আপসহীন তা নেত্রী নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আগামী ৩১ মে পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়ে আরও কিছু সাংগঠনিক পদক্ষেপ হবে বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।