কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। ব্যবসায় অগ্রগতি ও প্রসার। অর্থাগম যোগ শুভ। স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ... বিশদ
গোবরডাঙার জমিদারদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কথা কারও অজানা নয়। কথিত আছে, সেই সময়ে হাতি পোষার শখ ছিল জমিদারদের। হাতিশালে থাকত হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। জমিদার বংশের সংগ্রহে ছিল বিভিন্ন দেশের হাতি। তাতে চেপে শিকারে যেতেন জমিদাররা। জমিদার বাড়ির পাশেই ‘পিলখানা’য় ছিল হাতিদের ‘আবাস’। সেই পিলখানা এখনও রয়েছে। এলিফ্যান্ট প্ল্যাটফর্ম নিয়ে অবশ্য নানা গল্প কথিত আছে। একটি মহল বলে, জমিদারদের হাতির খবর অধুনা বাংলাদেশের এক হাতিপ্রেমী নবাবের কানে যায়। সঙ্গে সঙ্গে হাতি চেয়ে জরুরি তলব। জমিদার পড়েন মহা ফাঁপরে। এত দূরে হাতি পাঠাবেন কী করে! সেই সময় শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ হয়ে খুলনা পর্যন্ত ট্রেন চলত নিয়মিত। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, মালগাড়িতে করে উপহারস্বরূপ হাতি পাঠানো হবে নবাবের কাছে। সমস্যা দেখা দেয় প্ল্যাটফর্ম নিয়ে। বিশালকায় হাতিদের ট্রেনে তোলা হবে কীভাবে? শেষ অবধি জমিদারের মান বাঁচাতে এগিয়ে আসে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। জমিদারের আব্দারে ট্রেনে হাতি তোলার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ বানিয়ে দেয় একটি অতিরিক্ত প্ল্যাটফর্ম। যা আজও গোবরডাঙায় সাড়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম বা এলিফ্যান্ট প্ল্যাটফর্ম নামেই পরিচিত।
গোবরডাঙা স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে এই ছোট প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আরেকটি মহলের বক্তব্য, উনিশ শতকে বাণিজ্যের দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে গোবরডাঙা। র্যালি ব্রাদার্সের তখন খুব নাম। পাট ও চিনির ব্যবসায় তাদের প্রতিপত্তি। সেই পণ্য পরিবহণের জন্যই এই স্টেশনে একটি গুডস প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তৎকালীন রেল প্রশাসন। এর মধ্যেই ১৯২১ সালে কলকাতায় আসার কথা প্রিন্স অব ওয়েলসের। তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বেঙ্গল গভর্নমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি গোবরডাঙার তৎকালীন জমিদার জগৎপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের কাছে হাতি চেয়ে পাঠান দূত পাঠান। সেই সময় ওই গুডস প্ল্যাটফর্মকেই ব্যবহার করা হয়েছিল হাতিদের ট্রেনে তোলার জন্য। ভারতীয় ইতিহাস সংসদের সদস্য ও আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক সুখেন্দু দাস এই তথ্য জানিয়েছেন।
কেন এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হল? কেনই বা এমন নামকরণ হল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। যদিও তার কোনও প্রামাণ্য নথি রেলের কাছে নেই। তথ্য জানার অধিকার আইনে এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন পাঁচপোতার বাসিন্দা শিক্ষক জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ। তিনি জানান, এই প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানতে চেয়েছিলাম। অ্যাডিশনাল ডিআরএম জানিয়েছেন, রেলের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। বরং গোবরডাঙার সাড়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের তথ্য খুঁজে না পাওয়ায় তাজ্জব পূর্ব রেলের আধিকারিকরাও। মূলত নিত্যযাত্রীরাই তিন নম্বরের পাশে বলে মজা করে এই ছোট প্ল্যাটফর্মকে সাড়ে তিন নম্বর বলে অভিহিত করেছেন। এই প্রাচীন এই প্ল্যাটফর্মকে হেরিটেজ ঘোষণারও দাবি উঠেছে বহুবার। বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মের অস্তিত্ব থাকলেও অবহেলায় দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে এটি। পাশে গুদাম ঘরটিও আর নেই। তাই এই প্ল্যাটফর্মের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে মাথায় রেখে সংস্কার ও রেলের ঐতিহ্য-স্মারকে স্থান দেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকেই। কার্টুন: সুব্রত মাজি