অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
গৃহযুদ্ধে জেরবার গেরুয়া শিবিরকে এবার অশোকনগরে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে শাসকদল। শক্তপোক্ত সংগঠন ও ‘কাজের ছেলে’ হিসেবে পরিচিত নারায়ণ গোস্বামীকে প্রার্থী করে অশোকনগরে সুচতুর চাল দিয়েছে তৃণমূল। যদিও বিনাযুদ্ধে মাটি ছাড়তে নারাজ গেরুয়া শিবির। মেরুকরণ ও হাওয়ার উপর ভর করেছে তারা। তবে ভোটের পাটিগণিতে এবার অশোকনগরে শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে শাসকদল। কারণ, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ধীমান রায় বাম প্রার্থী সত্যসেবী করকে ২৭,৬৯২ ভোটে পরাজিত করেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও ধীমানবাবু বাম প্রার্থীকে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রবল বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও এখানে তৃণমূল প্রায় ১৩ হাজার ভোটে এগিয়েছিল। এবারও এই কেন্দ্রে প্রথমে ধীমানবাবুকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। কিন্তু দলের অন্দরে ক্ষোভ‑বিক্ষোভ তীব্র আকার নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ধীমানবাবুকে সরিয়ে এই কেন্দ্রে নারায়ণ গোস্বামীকে প্রার্থী করেছে তারা। পরিশ্রমী হিসেবে জেলায় পরিচিত নারায়ণবাবু আগে স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দেরিতে হলেও এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নিতে পেরেছে শাসক শিবির।
অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তী অশোকনগরে নতুন নন। ২০১৬ সালে তিনি ভোটে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার বিজেপির হাওয়া থাকলেও আদি ও নব্যের দ্বন্দ্ব মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে। এমনকী অশোকনগরের বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা পাশের হাবড়ার বিজেপি প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচার করলেও এখানে কোনও কাজ করছেন না। সম্প্রতি তনুজাদেবীর স্বামী চিন্ময় চক্রবর্তী বিজেপির আদি নেতা শ্যামলেন্দু দে’কে খুনের হুমকি ও ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালাগালি দেন বলে অভিযোগ। শ্যামলেন্দুবাবু অশোকনগর থানায় অনুগামীদের নিয়ে চিন্ময়বাবুর নামে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই কথোপকথন নকল বলে দাবি করে থানায় পাল্টা অভিযোগ করেন চিন্ময়বাবু। শুধু তাই নয়, অশোকনগরে দলের আদি ও নব্যদের মধ্যে মারপিট ও ঝামেলার ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। এই কেন্দ্র থেকেই ১৯৯৯ সালের উপ নির্বাচনে বিজেপির প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন বাদল ভট্টাচার্য। তারপর বিজেপি কর্মীদের কাজকর্মে হতাশ হয়ে বাম ও তৃণমূলে ভরসা রেখেছিলেন অশোকনগরবাসী। অশোকনগর স্টেশন চত্বরে কৈবর্তবাবুর মতোই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল বাঁশপুল গ্রাম পঞ্চায়েতের যুবক অভিজিৎ রায়, মনোরঞ্জন পাল, চিন্ময় বিশ্বাসের গলায়। তাসের আসর বন্ধ করে চিন্ময় বলেন, দাদা বিজেপি নেতাদের হাবভাব এই কয়েকদিনে বদলে গিয়েছে। ভোটের আগেই সরকার গড়ে নেওয়ার মতো ভাব। এলাকায় প্রভাব তৈরি করা নিয়ে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে মারপিট করছে। এরা জিতলে মানুষের জন্য কী কাজ করবে? সেই তুলনায় তৃণমূলের নেতারা অনেক নম্র ও ভদ্র। হাওয়া কোন দিকে প্রশ্নে বলেন, স্থিতাবস্থায়। অশোকনগর শহরের গৃহবধূ জোৎস্না রায়, মীনাক্ষি বিশ্বাস বলেন, এটা তো রাজ্যের ভোট। দিদি একজন মহিলা হয়ে কীভাবে লড়ছেন দেখেছেন? এবারও আমরা দিদিকে সুযোগ দিতে চাই।
তনুজা চক্রবর্তী বলেন, এবার অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। কোথাও কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। সব কর্মীরা প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমার স্বামীর গলা নকল করে ভুয়ো অডিও তৈরি করে বাজারে ছাড়া হয়েছে।
এসব তৃণমূলের চক্রান্ত। পায়ের তলায় মাটি নেই বলে এইসব করছে। আমার স্বামী অরাজনৈতিক মানুষ। ওরা হারার ভয়ে এত নীচে নামছে। আইএসএফ প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অশোকনগরের শিক্ষিত মানুষ দাদা ও দিদির নাটক ধরে ফেলেছে। এবার অশোকনগরে অলৌকিক ঘটনা ঘটবে। তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামী বলেন, অশোকনগরের শিক্ষিত, রুচিশীল ও সৃষ্টিশীল মানুষ শান্তিতে থাকতে চান। এখানকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে তাঁরা তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। এবার আমরা বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করব।