অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
চোখের। এই অনুভূতি নিত্যযাত্রীদেরই। টিকিট ঘর থেকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, এমনকী স্টেশন চত্বরের দেওয়ালেও এখন নানা কারুকৃতি। দেওয়ালজুড়ে যেন রঙের কবিতা। ব্যান্ডেল স্টেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, মডেল স্টেশন হিসেবেই এই গ্র্যাফিটি
করানো হয়েছে। মূল উদ্দেশ্যে, স্টেশন পরিষ্কার রাখার বার্তা দেওয়া।
মনোবিদরা বলছেন, এ অতি স্বাভাবিক প্রবণতা। নোংরা দেওয়ালকে আরও নোংরা করতে কারওর কোনও মানসিক বিকার হয় না। উল্টোদিকে, সৌন্দর্য্যের একটি স্বাভাবিক ধারা হলো, মানুষ তাকে সহজে নষ্ট করতে চায় না। তাই দেওয়ালে পোস্টার লাগানো বা পানের পিক ফেলার ক্ষেত্রে একটি স্বতঃস্ফূর্ত সংযম সক্ষ্য করা যায়। স্টেশন কর্তৃপক্ষ সেই পথেই হেঁটেছে। ব্যান্ডেলের স্টেশন ম্যানেজার পুষ্কর কুমার বলেন, ব্যান্ডেল একটি জংশন স্টেশন। সেই কারণেই এধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্র্যাফিটি দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজ প্রায় শেষের মুখে। গোটা স্টেশনকেই নানাভাবে সাজানো হয়েছে। আমরা পরিচ্ছন্নতার বার্তা দিতেই এই স্টেশন চত্বরকে এভাবে সাজিয়েছি। আরও কয়েকটি স্টেশন এভাবে সাজিয়ে তোলা হবে বলে শুনেছি। হাওড়া থেকে প্রতিদিনই ব্যান্ডেল হয়ে মগরায় যান নমিতা দাস। পেশায় বেসরকারি সংস্থার সাধারণ কর্মী তিনি। কথা প্রসঙ্গে বললেন, ব্যান্ডেল স্টেশনের চেহারাই বদলে গিয়েছে। একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে মন চায় না। স্থানীয় চা দোকানি থেকে ফলের দোকানদার— সকলেই এক কথায় বলছেন, একটা স্টেশন এমন হতে পারে, ভাবতেই পারছি না। এখন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী অমিতাভ ধর তাঁর কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, আমজনতার উদাসীনতার কারণেই স্টেশনগুলি কদর্য হয়ে উঠত। এভাবে স্টেশনকে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আশা করব, ট্রেনের যাত্রীরাও এই স্টেশনকে সুন্দর করে রাখার উদ্যোগ নেবেন এবং রেলকর্তারাও একই পদক্ষেপ করবেন।
বাংলার অনেক স্টেশনের মতোই শ্রীহীন ছিল ব্যান্ডেল স্টেশনটি। আশপাশের পরিবেশও যে খুব একটা সুন্দর, এমনটা দাবি করা যায় না। ট্রেন যাত্রী থেকে রেলের কর্মীদের একাংশের অসচেতনতা নানাভাবে গোটা স্টেশনকে কুৎসিত করে তুলেছিল। পানের পিক থেকে শুরু করে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনের স্থায়ী জায়গা হয়ে উঠেছিল এই স্টেশন। এই অবস্থা বদলাতে সম্প্রতি উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে শুরু হয়েছিল ট্রেনের ভিতরে ছবি আঁকা দিয়ে। ক্রমে তার ব্যাপ্তি ঘটে স্টেশন বিল্ডিং পর্যন্ত।
ব্যান্ডেল স্টেশনের অঙ্গপ্রতঙ্গে এখন নানা রঙের সাজ। টিকিট ঘরের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে আধবোজা চোখে বসে রয়েছেন বুদ্ধ। টিকিট ঘরের মাথার উপরে দু’দিকে সুপার ফাস্ট ট্রেনের ছুটে আসা ছবি। দর্শক মনে যা গতিকে উস্কে দেয়। পাশাপাশি কোথাও পাখি আর ফুলের অনবদ্য উপস্থিতি, তো কোথাও থ্রি ডি ছবির ধাঁচে ভাঙা দেওয়াল থেকে মাথা তুলছে চারাগাছ। কদর্যতা মুছে গিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে রঙের নয়নাভিরাম বর্ণমালা।