অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
ভোটে দাঁড়িয়েও হোটেলের ঘরে বসে থাকার ইঙ্গিত কাকে করলেন কৌশানী? তৃণমূলের দলবদলুদের প্রথম দিকের তালিকায় থাকা মুকুল রায় এখানকার প্রার্থী। কৃষ্ণনগর উত্তরের বাসিন্দারা বলছেন, তাঁকে প্রচারে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবু এখানকার ভোটে জয়ের গন্ধ পাচ্ছে বিজেপি। কেন?
কৃষ্ণনগর শহরের পাঁচমাথা মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে এলে শক্তিনগর মাঠের ধারে এক প্রাসাদসম বাড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালেন একজন। মস্ত বড় গেটের দু’দিকে সিংহের মূর্তি রয়েছে। ভদ্রলোক বললেন, এটা কৃষ্ণনগর পুরসভার সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহার বাড়ি। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসার সময় চেয়ারম্যানের এই বাড়িটা ছোট আর শ্যাওলাধরা ছিল। এখন এর হাল দেখুন। মানুষ কিন্তু এসব দেখছে। ওই ব্যক্তি আর-একটু এগিয়ে নিয়ে গিয়ে যে বাড়িটার সামনে দাঁড় করালেন, সেটি ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের বাড়ি। পেল্লায়, ঝাঁ-চকচকে। ওই ব্যক্তি বললেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগরের একটিমাত্র ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছিল তৃণমূল। বাকি সবকটা ওয়ার্ডে হেরে ভূত হয়েছিল বিজেপির কাছে। কৃষ্ণনগরের মানুষ এমনি এমনি বিজেপিকে ভোট দেবে না। তার অনেক কারণ আছে। তৃণমূলের নেতাদের বড়লোকিয়ানা অনেকেই মেনে নিতে পারছে না।
কোতোয়ালি থানার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে এবারের ভোট নিয়ে আলোচনা করছিলেন অনেকেই। খানিকটা নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ঢঙে একজন বললেন, ‘আর নয় অন্যায়’। এর আগের পুরসভা ভোটে তৃণমূলের জন্য জান লড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন পুরসভায় একটা কাজের জন্য বললাম, ছ’লাখ টাকা চাইল। ওই টাকাই যদি থাকবে, ব্যবসা করব। চাকরির দরকার কী? পাড়ায় একটা কলের জলের ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। সেটাও করল না। এবার বিজেপিকে ভোট দেব। দেখা যাক কী হয়।
এই বিজেপি ‘গন্ধ’ অনেকটাই ফিকে শহর লাগোয়া গ্রামগুলিতে। সেখানে কোথাও কোথাও তৃণমূলের ঘরোয়া কোন্দল রয়েছে ঠিকই। কেউ কেউ দলীয় প্রচারেও খুব একটা মন দিচ্ছেন না, এমন অভিযোগও আছে। কিন্তু সেসব আমল দিচ্ছেন না কৌশানী। ভোটে জেতার দায় অনেকটাই একা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। সকাল থেকে মাঠে নামছেন। প্রায় সারাদিন চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকার অনেকেই বলছেন, এই ভর দুপুরে পাড়ার মা-বউরাই তো এত রোদে বের হতে চায় না। এমনকী, অন্য নেতারা গরমের দুপুরে ভোট চাইতে আসে না। কৌশানী নায়িকা হয়েও সেসব বিলাসিতা জলাঞ্জলি দিয়েছেন। তোয়াক্কা করছেন না গ্ল্যামারের।
দিন কয়েক আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কৌশানী। ভাইরাল হয়েছিল একটি ভিডিও ক্লিপ, যা কার্যত বিকৃত করে বাজারে ছাড়া হয়েছিল। বাড়িতে মা-বোনেরা আছে। তাই তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ভোটটা তাঁকে দেওয়া উচিত, এমন মন্তব্যে বিতর্ক ছড়িয়েছিল। এত বিতর্কের পরেও অবশ্য নিজের সেই মন্তব্য থেকে একচুল সরছেন না কৌশানী। প্রচারে এখনও বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন মা-বোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত। এতে প্রচুর সাড়াও পাচ্ছেন কৌশানী।
সবাই যে তাঁকে নায়িকা হিসেবে চিনতে পারছে, এমন নয়। আদিবাসীদের গ্রাম বলে পরিচিত এলাকায় যখন প্রচারে যাচ্ছিলেন, এক তৃণমূল কর্মী গ্রামের এক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলন, একে চেনো? টিভিতে দেখেছ? অকপটে জবাব এল, না দেখিনি। কিন্তু তাতে কী। ও তো মমতাদিদির লোক। ওতেই হবে। কৌশানীর গ্ল্যামার দেখেও সেই ‘মমতা দিদি’র দিকেই তাকিয়ে আছে কৃষ্ণনগর উত্তরের গ্রামের পর গ্রাম। তাতেই জয়ের আঁচ পাচ্ছেন তৃণমূলের বহু কর্মী। জয় এনে দেবে গ্রামের ভোটই, আশায় তাঁরা। কৌশানীর প্রচারে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে একজন দলীয় কর্মীর আক্ষেপ, এই বাজারে যদি বিজেপি একবার তৃণমূলের দলবদলু গৌরীশঙ্কর দত্তকে প্রচারে নামাত, ষোলোকলা পূর্ণ হতো। একসময় ডাকসাইটে এই নেতার যে ‘ইমেজ’ এলাকায় তৈরি হয়েছে, তাতে বিজেপির ভোটবাক্স অর্ধেক ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কথা। এমনটাই বলছিলেন ওই কর্মী। তবে আপাতত তাঁদের নজর ২২ তারিখ ভোটের দিনের দিকে।