সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: সীমান্তে মহিলাদের কর্মসংস্থানের দিশা দেখাচ্ছে বিএসএফ। একইসঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা গড়ে পাচার, অনুপ্রবেশ রোধ করছে। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের টুঙ্গি, গেদে ও কাদিপুরে প্রায় ১০০ জন মহিলাকে সেলাই, মধু, মাশরুম, রজনীগন্ধা চাষ, কেক, ধূপকাঠিতৈরি শিখিয়ে স্বনির্ভর করছেন বিএসএফের কর্তারা।যা এই মুহূর্তে সীমান্তে চর্চার বিষয়।তাই ইদানীং কোনও অচেনা ব্যক্তি গ্রামে ঢুকলে খবর চলে যাচ্ছেবিএসএফে। রোখা যাচ্ছে পাচার, অপরাধমূলক কাজ।সীমান্ত মানে চোরাচালান, পাচার, বিধিনিষেধ, বিএসএফের বুটের শব্দ, চেকিং, কাঁধে ইনসাস রাইফেলের ছবি ভেসে ওঠে। স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, সীমান্তে বিএসএফের ৩২ নম্বর ব্যাটেলিয়ন দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই আমূল পরিবর্তন হয়েছে ছবির। উভয় দেশের যাত্রীদের জন্য মাথায় ছাউনি, বসার জায়গা, কোল্ডড্রিংস, বিস্কুট, ঠান্ডা পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ওপেন জিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।যেখানে সকাল ও বিকেল স্থানীয়রা ও ভ্রমণকারীরা শরীরচর্চা করতে পারেন। মহিলাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে স্নানাগার।
প্রসঙ্গত, গেদে আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট হলেও এখানে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা ছিল না। রোদ বৃষ্টিতে প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে সীমান্তে চেকিং, যাতায়াত করতে হতো। কিন্ত এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। তাই গোটা ব্লকের তিন জায়গায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশের মধ্যে ওপেন জিম ও পার্কের বন্দোবস্ত করেছে বিএসএফ। এখানে প্রতিদিন গ্রামের মানুষেরা শরীরচর্চা করছেন। মানুষের ভিড় হওয়ায় স্থানীয়রা ব্যবসাও শুরু করেছেন। গেদে বর্ডারের পশ্চিম দিকে এগলে পড়ে কাদিপুর চেকপোস্ট। বিএসএফ কাদিপুরে স্থানীয় মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্দেশ্যে সেলাই ও খাবারের ট্রেনিং দিয়েছে। এছাড়া মহিলাদের হাতে তৈরি স্বল্প মূল্যের পুষ্টিকর খাদ্য যেমন, কেক, বার্গার, পিৎজা ভালো বাজার নিয়েছে। গেদের পূর্ব দিকে বর্ডার ধরে এগলেই পড়ে টুঙ্গী। এই টুঙ্গী একসময়ে পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল। সেখানে মহিলাদের সেলাইয়ের ট্রেনিং দিচ্ছে ৩২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের বিএসএফের জওয়ানরা। বর্ডারের তারকাঁটার ঘেরাটোপের মধ্যে স্থানীয়দের সাহায্যে রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করা হচ্ছে। হচ্ছে মৌ থেকে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের চাষ। মহিলাদের ধূপকাঠি তৈরি ও প্যাকেজিংয়ের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে ধূপকাঠি তৈরির মেশিন সহ সমস্ত কাঁচামাল তুলে দিয়েছে বিএসএফ।স্থানীয় মহিলারা এখন ঘরে বসেই এই ধূপকাঠি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন।এই কর্মসংস্থান নিয়ে ধরমপুরের দীপা বিশ্বাস বলেন, ‹আমাদের সুতো কাটা থেকে সেলাই সব কাজ বিএসএফ হাতেকলমে শেখাচ্ছে। সেলাইয়ের কাজ করে আমরা খুশি। হাতে দুটো পয়সাও আসছে।› হুদো দিগম্বরপুরের অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, আমাদের এখানে বিএসএফের পক্ষ থেকে পিৎজা, বার্গার, কেক তৈরি করা শেখানো হয়েছে। আমাদের এই এলাকায় এত কম দামে এসব খাবার পেয়ে স্থানীয়রা কিনছে। আমরাও আয় করছি।› সীমান্ত কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের কাঁটাতার লাগোয়া গোটা এলাকায় বিএসএফের এই কর্মকাণ্ডে আগের থেকে পাচার, অপরাধমূলক কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএসএফের ৩২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ড্যান্ট সুজিত কুমার বলেন, ‹আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলছি। গ্রামে অচেনা মানুষ দেখলে তারা যেন আমাদের জানায়। একইসঙ্গে গ্রামের মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এতে পাচার, অনুপ্রবেশ কমে গিয়েছে।’