নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নির্বাচনের পর রাজ্যে পরিকল্পিতভাবে অশান্তি পাকানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের গঙ্গারামপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গের সন্দেশখালি, সর্বত্র গোলমালের নেপথ্যে বিজেপি এবং আরএসএস। রবিবার এমনই অভিযোগে সরব হয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের মহাসচিবের বয়ানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি চিঠিও পাঠানো হচ্ছে। তাতে দলের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে একটা উপসংহারে পৌঁছে গিয়েছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। সত্যাসত্য এবং বাস্তব বিবেচনা না করে, রাজ্য সরকারের রিপোর্ট না নিয়েই তারা বলে দিয়েছে, বাংলার আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। গত ছ’মাস ধরে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং আদর্শ আচরণবিধির সুযোগ নিয়ে বিজেপির গুণ্ডারা রাজ্যে অশান্তি ছড়িয়েছে। এখন যেহেতু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একই ব্যক্তি, খুব স্বাভাবিকভাবে তাঁর দল যা বলছে, চোখ বন্ধ করে তা মেনে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সাংবিধানিক অধিকারের উপর আঘাত হানছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক হিংসা ছড়ানো হয়েছে। ঘটনার আগের দিন বিজেপির তিন এমপি ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর চক্রান্ত করেছেন। ন্যাজাটের হাটগাছিতে তৃণমূলের বৈঠকের সময় বিজেপির গুণ্ডারা আক্রমণ করেছে। তাদের গুলিতে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। রাজ্য সরকার ঘটনার তদন্ত করছে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তৃণমূলের তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, বাংলার মতো একই সুপারিশ বা নির্দেশিকা কি উত্তরপ্রদেশের জন্যও জারি হয়েছে? ওই রাজ্যেও কিন্তু যাদব সম্প্রদায়ের ২৫ জনকে খুন করা হয়েছিল। অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে ক্ষমতা দখলের জন্যই এমন ষড়যন্ত্র চলছে। চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সাংবাদিক সম্মেলন করেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় একই দাবি তুলেছেন। হিংসার বিরুদ্ধে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সত্যাগ্রহের মাধ্যমে তাঁরা এর জবাব দেবেন বলে জানান মন্ত্রী। এদিকে, সন্দেশখালির ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপির প্ররোচনার ফাঁদে পা না দিতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এদিন তঁার নেতৃত্বে নিহত কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল প্রতিনিধিদল। মন্ত্রী তাপস রায়, সুজিত বসু, বিধায়ক নারায়ণ বিশ্বাস, প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র প্রমুখ ওই দলে ছিলেন। তবে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজয় মিছিলের নামে তাণ্ডব করছে বিজেপি। গত সপ্তাহে উত্তর দমদমের নিমতায় এক তৃণমূল কর্মী খুনের প্রতিবাদে জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রী এমনই দাবি করেছিলেন। আর সন্দেশখালির ঘটনার পর পার্থবাবু এদিন দাবি কছেন, বিজেপি রাজ্যজুড়ে অশান্তি পাকাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল মহাসচিব। তাঁর দাবি, এটা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। রাজ্যে যে শান্তির বাতাবরণ রয়েছে, তা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই রক্তপাত ঘটাচ্ছে বিজেপি। এর নেপথ্যে আরএসএসের হাতও রয়েছে বলে মনে করেন পার্থবাবু। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, বিজেপি নানাভাবে অশান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল সন্দেশখালিতে গেলেও সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য নুসরত জাহানকে দেখা যায়নি। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন নুসরত। তাঁর দাবি, এটা কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে, শান্তির পক্ষে।