কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
এদিকে, দলের দুই সদস্যের মৃত্যুতে আজ, সোমবার ১২ ঘণ্টা বসিরহাট বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। এছাড়াও আগামী ১২ জুন একটি প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ওয়েলিংটন থেকে লালবাজার পর্যন্ত এই মিছিল হবে। এই ঘটনায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় রাজ্যপাল দুঃখিত। তিনি মৃতদের পরিবারবর্গকে গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। সকলের কাছে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন রেখেছেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠি।
অন্যদিকে, দিল্লিতে অমিত শাহ তাঁর মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গকে পরামর্শ পাঠান। কথা বলুন। সেই মতো মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যকে অ্যাডভাইসারি পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যে যে সংঘর্ষ চলছে, তা প্রশমিত করতে না পারা রাজ্যের ব্যর্থতা। রাজ্যবাসীর আস্থা অর্জনে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ব্যর্থ। শুধু তাই নয়, এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্যের থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিব মলয় দে তার জবাবও দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দেওয়া চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ভোটের পর কিছু বিচ্ছিন্ন হিংসার ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে। যার জন্য সমাজবিরোধীরা দায়ী। আর পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে নিজের বাংলোয় ডেকে পাঠিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে কেন্দ্র যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি আজ, সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও রাজ্যপালের বৈঠক রয়েছে।
এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, গোটা গ্রাম যেন নিস্তব্ধ শ্মশান। রাস্তার ধারে বুলেটের খোল। বাড়ির উঠোনে জমাট বেঁধে রয়েছে রক্তের শুকনো দাগ। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে যে ভাঙ্গিপাড়া গ্রামের বুথে বিজেপি ১৪৪ ভোটে লিড পেয়েছে, সেই গ্রামেই এখন চলছে ১৪৪ ধারা। সন্দেশখালির ন্যাজাট থানার ভাঙ্গিপাড়া গ্রামের গণ্ডগোলের ঘটনায় শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, আমাদের আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের দেহ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ এখনও ছ’জন। অন্যদিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, আমাদেরও ছ’জন কর্মী নিখোঁজ।
শনিবার বিকেলে তৃণমূল-বিজেপির গণ্ডগোলের ঘটনায় এই গ্রামেই হিংসার আগুন জ্বলে উঠেছিল। পুলিস জানিয়েছে, মৃত বিজেপি কর্মীর নাম প্রদীপ মণ্ডল (৩৫) ও সুকান্ত মণ্ডল (২৫)। তাঁরা জেঠতুতো-খুড়তুতো ভাই। ভাঙ্গিপাড়া গ্রামে তাঁদের বাড়ি। ওই গ্রামে দেবদাস মণ্ডল নামে এক বিজেপি কর্মী নিখোঁজ। মৃত তৃণমূলকর্মীর নাম কায়ুম মণ্ডল (২৬)। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ি গ্রামে। দিলীপবাবু বলেন, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাজাহানের নেতৃত্বেই এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ওর গ্রেপ্তার চাই। এদিন বসিরহাটের পুলিস সুপারের অফিসের সামনে বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভও দেখান। অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা রবিবার কায়ুমের বাড়িতে যান। তাঁর বাড়িতে শাজাহানও গিয়েছিলেন। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর দাবি, শাজাহান অসুস্থ। শনিবার তিনি এলাকায় ছিলেনই না। কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন।
গ্রামে ঢোকার মুখেই নলকোড়া বিদ্যালয়। শনিবার বিকেলে সেখানেই মিটিং করছিল তৃণমূল। গ্রামবাসীর দাবি, এখানে বিজেপি লিড পাওয়ায় ওই মিটিং থেকেই তৃণমূলের ৪০০-৫০০ লোক গ্রামে ঢুকে হামলা করে। তৃণমূল ছ’জন নিখোঁজ বলে দাবি করলেও ভাঙ্গিপাড়া গ্রামে তৃণমূলের কেউ নিখোঁজ নেই। উল্টে, যারা হামলায় যুক্ত ছিল, সেই তৃণমূল কর্মীরা ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, নিখোঁজরা হাটগাছির বাসিন্দা। পুলিস জানিয়েছে, বিজেপির যাঁরা নিখোঁজ বলা হচ্ছে, তাঁদের প্রায় সকলেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। একমাত্র দেবদাস মণ্ডলের কোনও হদিশ মেলেনি। গ্রামবাসীদের কথায়, খুন তো দূরের কথা, স্বাধীনতার পর থেকে এই গ্রামে কোনওদিন গণ্ডগোল হয়নি। আজ সেই গ্রামের মানুষ ভয়ে দিনের বেলাতেই দরজা বন্ধ রাখছেন। ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। শান্ত গ্রামে আজ শুধু হাহাকারের রোল।