পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
সোমবার কাকভোরে সেখানেই দেখা তাঁর সঙ্গে। ঠান্ডার মধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে রয়েছেন। পাশে পলিথিন ঢাকা দিয়ে শুয়ে পরিবারের বাকিরা। তাঁরা ঘুমোচ্ছেন। রবিবার গভীর রাতে এসেছেন। মঙ্গলবার স্নান সেরেই ফিরে যাবেন। আলাপচারিতায় উঠে এল মধ্যপ্রদেশে বিজেপি বিদায়ের প্রসঙ্গ। বললেন, দলের অন্দরের কোন্দল পদ্মফুলকে ডুবিয়েছে। কিছুটা তফাতে আরও দশজনের একটি দল বসেছিল। ওই রাজ্যের রতলাম জেলার বাসিন্দা তাঁরা। দলের কর্তা মানকলাল শর্মার কানে যায় নটবরলালের কথা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, বিষয়টি অত সরল করে দেখলে হবে না। আসলে কংগ্রেসের রাজনীতির মারপ্যাচে বিজেপি কুপোকাত হয়েছে। তাঁর সংযোজন, মধ্যপ্রদেশে আলু, পিয়াজ ও রসুন চাষ করেই কৃষকদের রোজগার। এর দাম একেবারে কমে গিয়েছিল। ফলে চাষিরা চাপের মধ্যে ছিল। এরমধ্যে চাপ আরও বেড়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্কের ঋণে জড়িয়ে পড়ায়। কংগ্রেস এই জায়গাকে কাজে লাগিয়েছে। ভোটের সময় রাহুল গান্ধী মধ্যপ্রদেশে এসে সরাসরি ঘোষণা করেন—কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে চাষিদের ঋণ মকুব করে দেবে। তাতেই কৃষকরা বিজেপির থেকে সরে কংগ্রেসের দিকে চলে এসেছে। সাগরতটে গিয়ে দেখা গেল সেখানে জব্বলপুরের রামচরণ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর এক সঙ্গীর জোর তর্ক চলছে। রামচরণ বিজেপির সমর্থক। পাশে বসা কমলা বাঈ কংগ্রেসের হয়ে বলছেন। এরমধ্যে এক সঙ্গী শঙ্করলাল শর্মা ফুট কাটলেন। বললেন, মধ্যপ্রদেশে প্রজাপালন ঠিকভাবে হচ্ছিল না। কৃষকরা অনেকে ফসলের দাম না পেয়ে মারা গিয়েছেন। এটা শাসকদলের দেখা উচিত ছিল। তা হয়নি। তাই পাল্টে দিয়েছে জনতা। ৫ নং ঘাটের কাছে রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা রূপনারায়ণ কুমারের সঙ্গে দেখা। তাঁর কথায়, রাজস্থানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়। তবে বসুন্ধরা রাজের অহংকার হয়েছিল খুব। পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে অফিসাররা মন্ত্রীদের একাংশের কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দলের অন্তর্কলহ। রাজস্থানের শঙ্কর বিশ্বকর্মা অবশ্য বিজেপির পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর কথায়, জনতা ওই সরকারের কাছ থেকে পরিষেবা নিল। কিন্তু ভোটের সময় বেইমানি করল। এর বিরোধিতা করতে দেখা গেল পাশে বসা হরিপ্রসাদ ত্রিপাঠিকে। তিনি বলেন, সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা গণেশ শর্মা বলেন, পদ্মফুল ক্ষমতায় এসে মানুষের জন্য কোনও কাজ করেনি। নেতাদের শুধু পকেট ভরেছে। ভোটে তার জবাব দিয়েছে মানুষ। ভক্তদের সভায় পুরীর শঙ্করাচার্য বলেছেন, রাজনীতি হল ধর্মের একটা অংশ। যার নাম ক্ষত্রিয় ধর্ম। তাই ধর্মীয় স্থানে তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে, তাতে দোষ নেই।
অন্যদিকে, এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগরতটে ভিড় জমে যায়। একদিকে স্নানের হিড়িক, অন্যদিকে মন্দিরে ঢোকার লাইন। তটের বিভিন্ন জায়গায় পুণ্যার্থীরা ইট পেতে কাঠের আগুনে রান্না করতে বসেছেন। কোথাও কোথাও সন্ন্যাসীরা নিজেরাই আটা মেখে রুটি গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রণামী নেওয়ার জন্য ভিক্ষাপাত্র নিয়ে বসেছেন শ’য়ে শ’য়ে মহিলা, পুরুষ ও বাচ্চা। তারমধ্যে ভিক্ষাপাত্র হাতে বসে থাকতে দেখা গেল রাজস্থান থেকে আসা ভরনা ও গিরিজা দেবীকে। সচ্ছল অবস্থা। কিন্তু এখানে স্নান করতে এসে ভিক্ষা করছেন। কেন? বললেন, চারদিন ধরে এখানে বসে ভিক্ষা করছি। যা পাচ্ছি, সব সাধুদের দিয়ে দিচ্ছি। এতে আমাদের পুণ্য আরও বেশি হবে। থ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সামনে কিছুটা এগতেই দেখা গেল একটি মূর্তি। অনেক লোক ভিড় করে দেখছেন। মেলা কর্তৃপক্ষ বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। একেবারে মিশরের রাজার অনুকরণে তৈরি। সামনে গিয়ে ভুল ভাঙল। জীবন্ত। বহুরূপী হিসেবে এই কাজ করছে ডায়মন্ডহারবারের বেড়িয়া হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি। দোলনঘাটায় বাড়ি। সঙ্গে তার মা কৃষ্ণা মিস্ত্রিও এসেছেন। প্রসেনজিৎ বলল, বাবা ভ্যানচালক। বলেছেন, পয়সা নেই। পড়াতে পারবে না। তাই বহুরূপী সেজে পয়সা রোজগার করছি। এই পয়সা দিয়েই পড়াশোনা চালাব।