মহিষাদলের দু’শো বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের রথকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি
শ্যামল সেন, হলদিয়া

মহিষাদলের দু’শো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কাঠের রথকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকরা। ১৮০৪ সাল নাগাদ ওই রথ শুরু করে মহিষাদল রাজ পরিবার। তবে মহিষাদলের রথের নির্মাণ ও চালু করার দিনক্ষণ নিয়ে ইতিহাস গবেষকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। কারও মতে, মহিষাদলের রানি জানকী দেবী ১৭৭৬ সালে প্রথম রথযাত্রার সূচনা করেন। তবে মহিষাদল রাজবাড়ির উপর প্রামাণ্য দু’টি বই ভগবতীচরণ প্রধানের ‘মহিষাদল রাজবংশ’ এবং কে সি আইচের ‘মহিষাদল রাজ এস্টেট’ বই দু’টি ১৮০৪ সালকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওই বছর রানি জানকীর পোষ্য মতিলাল পাঁড়ে(উপাধ্যায়) রথ শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। সমস্ত সরকারি দলিল, রাজবাড়ির নথির উপর ভিত্তি করে ওই বইগুলি লেখা হয়েছিল। যদিও রাজ পরিবার মতিলাল পাঁড়েকে স্বীকার করে না। রাজ পরিবারের দাবি, ওই রথে এখনও দু’শো বছরের পুরনো শাল, সেগুন কাঠের ৭০-৮০শতাংশই অক্ষত রয়েছে। তিন চারবার সংস্কার হলেও এত বছর ধরে মূল কাঠামোর কোনও পরিবর্তন হয়নি। রথের চাকাও কাঠের এবং এক্সেলগুলি কাঠ দিয়েই তৈরি।  
রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন বার্মা থেকে জাহাজে করে আনা শাল ও সেগুন কাঠ দিয়ে ছ’হাজার সিক্কা খরচ করে রথ তৈরি হয়েছিল। রথের ‘ধূরি’ এবং ‘মুথুন’ দু›শো বছর ধরে অক্ষত। এগুলিই ৫০ ফুট উঁচু ১৩ চূড়া রথের মূল কাঠামো। এই ধূরি’র সঙ্গে সাতটি কাঠের এক্সেলের মাধ্যমে রথের ৩৪টি কাঠের চাকা যুক্ত। প্রতিটি চাকা চার খণ্ড কাঠ দিয়ে তৈরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মহিষাদলের সুউচ্চ কাঠের রথ দু’শো বছর ধরে সচল ও অক্ষত রয়েছে, এটি সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার। তাঁদের পরামর্শ, অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে এই রথের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ভীষণ জরুরি। রোদজলের মধ্যে সারাবছর রথ পড়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী রথ সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। এজন্য ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের রথকে সরকারিভাবে হেরিটেজ ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ অধ্যাপক ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক হরিপদ মাইতি বলেন, ভারতে এতবড় প্রাচীন কাঠের রথ সম্ভবত আর নেই। ইতিহাস, দেশীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল এবং পর্যটন সব দিকে তাকিয়ে এই রথকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সংরক্ষণ করা দরকার। সংস্কার করে হয়তো আরও ৫০বছর চালানো যেতে পারে। কিন্তু এই সুবিশাল অনুপম সুন্দর কাঠামো কোনও কারণে একবার নষ্ট হলে আর গড়া সম্ভব নয়। এজন্য নতুন কোনও ভাবনা প্রয়োজন। রথকে হেরিটেজ ঘোষণার জন্য বছর পাঁচেক আগেই জেলা প্রশাসনকে হেরিটেজ উপদেষ্টা কমিটির পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীও রথকে হেরিটেজ ঘোষণার ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি বলেন, গত ৭-৮ বছরে দু’দফায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচে রথ সংস্কার হয়েছে। কাঠামো সংস্কার, রং করা এবং শিল্পীদের মাধ্যমে নতুন করে চিত্রায়িত করা হয়েছে। আগামী বিধানসভায় পর্যটন স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে হেরিটেজ করার দাবি রাখব। জানা যায়, প্রথমে ওই রথ ছিল ১৭ চূড়ার। পরে ১৮৬০ সালে রাজা লছমন প্রসাদ গর্গের ফরাসী বন্ধু মঁসিয়ে পেরু রথ দেখতে এসে রথ সংস্কারের একটি নকসা করেন। ওই রথের খিলানের উপর চারটি চূড়া বাদ দিয়ে ১৩ চূড়ার নকসা করেন এবং নতুনভাবে নির্মিত হয় রথ। সেই ১৩ চূড়ার রথই চলছে আজও। দেশীয় মিস্ত্রিদের সঙ্গে চিনা মিস্ত্রিরাও রথ তৈরির কাজ করেছিল সেদিন। ১৯৩২ সালে রথের মেলায় পিকেটিং ঘিরে স্বদেশীদের তীব্র অত্যাচার করে বৃটিশ পুলিস। তার প্রতিবাদে সেবার ২০০হাত রথ টানার পর মানুষ রথ টানা বন্ধ করে দেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী নীলমণি হাজরার ডায়েরিতে সেকথা লেখা আছে। অধ্যাপক হরিপদ মাইতির গবেষণাগ্রন্থ ‘মহিষাদল রাজপরিবার’ রথের ইতিহাস নিয়ে বহু অজানা তথ্যের সন্ধান দেয়। মহিষাদলের রথ জগন্নাথদেবের রথ নয়। ওই রথে প্রথম ওঠেন রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনগোপাল জিউ, এরপর শালগ্রাম শিলা শ্রীধরজিউ এবং শেষে ওঠেন জগন্নাথ জিউ। রাজবাড়ির রথে জগন্নাথদেবের ভোগকে কেন্দ্র করে ‘মেলান ভাত’, ‘রাধার মানভঞ্জন’এর মতো নানা মজার প্রথা চালু রয়েছে।
মহিষাদলের দু’শো বছরের পুরনো কাঠের রথ।-নিজস্ব চিত্র
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে  উন্নতি ও সাফল্যের যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.২৮ টাকা৮৬.০২ টাকা
পাউন্ড১০৪.৮৬ টাকা১০৮.৫৭ টাকা
ইউরো৮৬.৮৬ টাকা৯০.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা