‘রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব,
রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব –
হাসে অন্তর্যামী।’
রথের কথা উঠলেই যে কোনও বাঙালির রবিঠাকুরের লেখা এই কয়েকটি পংক্তি মনে পড়া অনিবার্য। ক্লিশে হলেও তাই তাঁকে স্মরণ করেই রথযাত্রার কথার রশিতে টান দিলাম। একটা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে শুরু করি। আমার বাসস্থান নদীয়ার কল্যাণী শহরের যে পাড়ায়, তার নাম রথতলা। এখানকার শতাব্দীপ্রাচীন কৃষ্ণরাইজিউ মন্দির আদতে শ্রীচৈতন্যদেবের শিষ্য সেন শিবানন্দের শ্রীপাট। এই মন্দিরের সামনেই বিশ ফুট উঁচু লোহার রথ, যাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে ফি-বছর। সনৎ সিংহের সেই বিখ্যাত গানটা মনে পড়ে? ‘রথের মেলা, রথের মেলা বসেছে রথতলায়, আর ভরদুপুরে রথতলাতে ছেলেরা ভিড় জমায়...’ পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় হয়তো এমন কোনও গ্রাম-গঞ্জ নেই যেখানে একটা অন্তত রথতলা নেই! আর তাদের প্রতিটিতেই আষাঢ় মাসে রথের মেলা বসাটাও একপ্রকার অবধারিত।
মূলত পূর্ব ভারতের হিন্দুদের উৎসব এই রথযাত্রা। হিন্দুদের চারধামের অন্যতম পুরীর জগন্নাথধাম। কথায় আছে, ‘রথেতু বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।’ অর্থাৎ কি না রথযাত্রার দিনে রথে আসীন জগন্নাথদেবের দর্শন পেলে পুণ্যাত্মা ভক্তকে আর এই মরপৃথিবীতে পুনর্জন্ম লাভ করতে হয় না। মুক্তিলাভের পথ খুলে যায় তাঁর। কিন্তু রথযাত্রা আসলে কাদের ঐতিহ্য? হিন্দু, বৌদ্ধ নাকি জৈন? তিন পক্ষের মধ্যেই এ নিয়ে বিস্তর বাদানুবাদ রয়েছে। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েনের লেখা থেকে জানা গেছে, পঞ্চম খ্রিস্টাব্দে নাকি গৌতম বুদ্ধের মূর্তি বসিয়ে বিরাট রথ নিয়ে শোভাযাত্রা বেরত বিভিন্ন স্থানে। জগন্নাথের রথযাত্রাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অনেকে তাঁদের অনুসারী বলে দাবি করেন। এমনকী জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার তিনটি মূর্তিকে বৌদ্ধরা তাঁদের মতাদর্শ অনুযায়ী বুদ্ধ, সঙ্ঘ ও ধর্মেরই প্রতিরূপ বলে মানেন। আর জৈনরা? তাঁরা বলেন এই তিনজন আসলে তাঁদের প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেব কথিত ‘সম্যক জ্ঞান’, ‘সম্যক চরিত’ ও ‘সম্যক দৃষ্টির’ প্রতীক! বিতর্ক যাই থাক, যেটা অস্বীকার করে লাভ নেই, তা হল রথে আসীন দেবতাদের মূর্তি, রথের আকার আকৃতি ইত্যাদিতে এই তিন ধর্মেরই কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য প্রচ্ছন্নভাবে রয়ে গেছে। রথ কি শুধুই জগন্নাথের? তা-ও নয়। মহাদেব, ভগবান বিষ্ণু, ধর্মরাজ, সৌরাধিপতি ভানু বা সূর্য, রামচন্দ্র ইত্যাদি অনেকেরই রথযাত্রা পালিত হয়, রথে আসীন তাঁদের মূর্তি পূজিতও হন। তবে তাঁদের রথযাত্রায় কোনও উল্টোরথের ব্যাপার থাকে না, যা থাকে তা একমুখী গমন। আর অন্যান্য দেবতাদের রথযাত্রা আষাঢ় মাসেও হয় না। জগন্নাথ যেন বৈচিত্র্যময় ভারতের একতার প্রতীক। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, গাণপত্য, সৌর এমনকী বৌদ্ধ বা জৈনদের কাছেও তাই তিনি আরাধ্য প্রত্যেকের নিজের বিশ্বাস অনুসারে। বৈষ্ণবদের কাছে তিনি বিষ্ণুর অবতার। শাক্তদের কাছে তিনি দেবী বিমলার ভৈরব অথবা শিব। যে বিমলাদেবীর মন্দির, অন্যতম সতীপীঠের অবস্থান জগন্নাথধামের ভিতরেই।
রথ নিজে কোনও দেবতা নয়, দেবতার বাহনমাত্র। কঠোপনিষদ অনুসারে আমাদের দেহ রথের সঙ্গে তুলনীয়, আর আত্মা হল রথের রথী। ‘আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু। বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমে চ।।’
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ও রানি গুন্ডিচার তত্ত্বাবধানে পুরীর মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় আনুমানিক একাদশ শতকে। কিংবদন্তি অনুসারে এই গুন্ডিচাই জগন্নাথের মাসি। তাঁর বাড়ি যাওয়ার জন্যই রথযাত্রার আয়োজন। যদিও পুরাণ মতে জগন্নাথ তাঁর বান্ধবী ‘পৌর্ণমাসীর’ বাড়িতে যেতেন। কালক্রমে সেটাই কীভাবে যেন মাসির বাড়িতে পরিণত হয়েছে। পুরীর জগন্নাথধাম থেকে আট কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচার বাড়িতে ভক্তরা টেনে নিয়ে যান এই তিন রথ।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন কর্তৃক দারুব্রহ্ম জগন্নাথের মূর্তি গড়া বা মন্দির প্রতিষ্ঠার চমকপ্রদ গল্পটি তো প্রায় সকলেরই জানা। তাও সংক্ষেপে আরেকবার ফিরে দেখা যাক। শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুকালে তাঁর দাদা বলরাম নাকি শোকে কাতর হয়ে জ্বলন্ত চিতা থেকে তাঁর দেহটি তুলে সমুদ্রে ফেলে দেন। পরে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন পুরীর সৈকতে একটি বিশাল নিমকাঠের খণ্ড দেখতে পান, যা আসলে শ্রীকৃষ্ণের অর্ধদগ্ধ দেহ! স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী সেই কাঠ দিয়ে জগন্নাথের মূর্তি তৈরি করার মনস্থ করেন তিনি। কিন্তু এই বিশেষ মূর্তি তৈরির উপযুক্ত কারিগর মেলে না। তখন স্বয়ং বিশ্বকর্মা ঠাকুর ছদ্মবেশে এসে মূর্তি তৈরি করতে রাজি হন। কিন্তু শর্ত দেন তিনি কাজটি করবেন মন্দিরের গর্ভগৃহে দরজা বন্ধ করে। রাজা এতে রাজি হলেও পরে রানি গুন্ডিচার কৌতূহল আর অনুরোধ উপরোধে তিনি বাধ্য হয়ে দরজা খুলে ফেলেন। আর দেখেন ভিতরে কারিগর রূপী বিশ্বকর্মা নেই, মূর্তি তিনটিও অসম্পূর্ণ। হাত, পা, চোখ সবকিছুই অন্য রকম। তাঁর অনুশোচনা হয়। কিন্তু দৈব আদেশে ওই রূপেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার পুজো করা শুরু হয় সেই থেকে।
বাংলায় রথযাত্রার জনপ্রিয়তার শুরু মূলত শ্রীচৈতন্যদেবের সময় থেকে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলির মাহেশের রথ এখানকার প্রাচীনতম। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ গল্পে এই মাহেশের রথের মেলার কথা পেয়েছি আমরা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথ, গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবন চন্দ্র মঠের রথ ইত্যাদি। গুপ্তিপাড়ার রথের উচ্চতা ৩৬ ফুট। একমাত্র এখানেই উল্টোরথের আগের দিন ‘ভান্ডার লুঠ’ নামে একটি আশ্চর্য প্রথার প্রচলন আছে। হুগলির আরেকটি রথ হল রাজবলহাটের। মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথও ২৫০ বছরের বেশি পুরনো ঐতিহ্যে। আবার নবদ্বীপের শ্রীবাসঅঙ্গন রোডে সমাজবাড়ির নৃসিংহ মন্দিরের জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তিগুলির সম্পূর্ণ হাত-পা রয়েছে। ইস্কনের রথযাত্রার শুরু ১৯৬৮ সালের পর থেকে। আর বাংলাদেশে রয়েছে ধামরাইয়ের রথ। পুরাকালে যা ছিল যুদ্ধের অন্যতম যান, কালক্রমে তা হয়ে দাঁড়াল ভক্তদের পুণ্যলাভের চিহ্ন। রথের রশি ছুঁলেই মিলবে পুণ্যফল। তাই লাখো ভক্তের সমাগম হয় দেশের প্রায় সমস্ত বিখ্যাত রথযাত্রায়। রথযাত্রা আর রথের মেলা এই বঙ্গে সমার্থক। এই মেলার ইতিহাসও কম দিনের নয়। কলকাতা আর গ্রামেগঞ্জে অবশ্য রথের মেলার চরিত্রগত কিছু পার্থক্য আগে ভালোই ছিল, এখন বরং কিছুটা কমে এসেছে সেই ফারাক।
কাঁথির কাছে রামনগরের ডেমুরিয়ায় প্রায় ৩০০ বছর আগে যে রথযাত্রার সূচনা হয়, তার একটি বৈশিষ্ট্য অনন্য। এখানে রথযাত্রায় একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেন হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। জানা যায়, বহুকাল আগেও এখানে জগন্নাথের মন্দির ছিল। কিন্তু মধ্যযুগের বর্গি হানায় সে মন্দির ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পরে এগরার বাসুদেবপুরের জমিদার লক্ষ্মীকান্ত রায়ের দান করা জমিতে আবার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই মন্দির। তখন থেকেই এই রথের দড়িতে টান দেওয়া শুরু। রথে টান দেওয়া থেকে রথের মেলায় যোগ দেওয়া, সবকিছুতেই স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেন এলাকার হিন্দু ভক্তদের সঙ্গে। সম্প্রীতির ছবি এই রথের মেলাকে আলাদা করে তুলেছে।
এবার খাস কলকাতার কিছু রথযাত্রার কথা। জানা যায়, জানবাজারের রানি রাসমনির রথযাত্রা ছিল নাকি দেখার মতো। ১৮৩৮ সালে প্রায় সওয়া লাখ টাকা খরচ করে বানানো সেই রথ ছিল সম্পূর্ণ রূপোর। এখন এই রথযাত্রা হয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। বউবাজারে ১২৫ বছর ধরে যদুনাথ দত্তের বাড়িতে পালিত হচ্ছে রথযাত্রা। এখানে শুধুই জগন্নাথ বিগ্রহের পুজো হয়, বলরাম বা সুভদ্রা থাকেন না। এই অঞ্চলেরই রামকানাই অধিকারীর বাড়ির রথের বয়সও দেড়শো বছর পেরিয়ে গেছে। মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক প্রচলিত রথযাত্রাও শতাব্দীপ্রাচীন। আবার কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নৈহাটির বাড়ির কাছেও একটি রথের মেলার উল্লেখ পাওয়া যায় বঙ্কিমবাবুর নিকট প্রতিবেশী মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখায়। গ্রাম্য গৃহস্থালির রকমারি জিনিস, নানা রকম মিঠাই আর চারাগাছের পসরা বসত সেখানে। আর হুতোমের নকশা খ্যাত কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখায় চিৎপুরের রথের মেলার যে বিবরণ পাওয়া যায়, তাতে শহুরে বাবুদের উশৃঙ্খলতার চিত্র পরিস্ফুট। উত্তর কলকাতার বেলঘড়িয়ার ঘোষালদের বাড়ির রথযাত্রার বয়স পেরিয়েছে দুই শতকের বেশি। পুরনো জৌলুস কমে গেলেও সেই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এখনও এই রথের মেলা অব্যহত।
রথযাত্রার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের কথা একটু দেখে নেওয়া যাক এই প্রসঙ্গে।
চন্দন যাত্রা: এটি ৪২ দিনের একটি পর্ব, যা দুটি অর্ধে বিভক্ত। রথ নির্মাণের সূচনা হয় এই পর্বে। প্রথম ভাগের নাম বাহার চন্দন। এই সময় মদনমোহন অর্থাৎ জগন্নাথদেব, রাম, কৃষ্ণ, লক্ষ্মীদেবী, সরস্বতীদেবী আর পঞ্চপাণ্ডব নামে খ্যাত পাঁচটি শিব মন্দিরের অধিষ্ঠিত মূর্তিকে প্রতিদিন শোভাযাত্রা সহকারে বাইরে বের করে একটি আনুষ্ঠানিক নৌকা বিহারের ব্যবস্থা করা হয়। পরের ধাপ ভিতর চন্দন। নামের মতোই এই পর্যায়ের আচারাদি অধিকাংশই সাধারণের চোখের অন্তরালে ঘটে। পূজারিদের কিছু একান্ত গোপন বিধি পালিত হয় এর মাধ্যমে।
রথ নির্মাণ: রথ বানানো শুরু হয় বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিন, অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য তিথিতে। পুরীর রাজার প্রাসাদের সামনে অগ্নিপূজার মাধ্যমে ঘটে এই সূচনা পর্ব। পুরীর জগন্নাথধাম মন্দিরের ঠিক বিপরীতে এই জায়গা। এরপর দৈবীমূর্তিদের স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরের ভিতর থাকা কিছু পাথরের কুয়োতে। সেখানে চন্দনকাঠের নির্যাস, সুগন্ধি আতর আর ফুল দিয়ে সাজানো থাকে জল।
স্নান যাত্রা: জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমায় হয় জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। তারপর আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে হয় রথযাত্রা, আর একাদশী তিথিতে উল্টোরথ।
হেরা পঞ্চমী: রথযাত্রা শুরুর পঞ্চম দিনে হয় হেরা পঞ্চমী। হেরা অর্থে দর্শন করা। মনে করা হয় জগন্নাথের রথযাত্রার পাঁচদিন পরে এই তিথিতে দেবী লক্ষ্মীর রথযাত্রা শুরু হয়।
সুনা বেশা: উল্টোরথে আরাধ্য দেবতাদের মূর্তিসহ তিনটি রথ যখন গুন্ডিচা মন্দির বা মাসির বাড়ি থেকে আবার নিজের জায়গায় মূল জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে আসে, তখন তিন দেব-দেবীকে সোনার বেশভূষা পরানো হয়। অলঙ্কারে সাজিয়ে রথেই তাঁদের আরাধনা করা হয়। এরই নাম ‘সুনা বেশা’। কথিত আছে ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে এক যুদ্ধ জয় করে এসে রাজা কপিলদেব জগন্নাথকে সোনা দিয়ে পুজো করেছিলেন। সেই থেকেই এই প্রথার শুরু। বহু ভক্ত সমাগম হয় এই চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান চাক্ষুষ করার জন্য। এবারের ‘সুনা বেশা’র তারিখ আগামী ১৬ জুলাই।
যুগ বদলেছে। জগন্নাথধামের রথযাত্রা এখন ঘরে বসেই টেলিভিশনের পর্দায় বা মোবাইল স্ক্রিনে লাইভ দেখা যায়। অশক্ত, বৃদ্ধ ভক্তদের জন্য এই সুযোগ ঈশ্বরের আশীর্বাদতুল্য। বিশ্বায়ন আর নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে রথের মেলা ঘিরে উন্মাদনা, ছোটদের উৎসাহেও যেন কিঞ্চিৎ ভাটার টান। কালের প্রবাহে বহু ঐতিহ্যশালী রথযাত্রা টিকে আছে স্রেফ নামমাত্রই। তবু কিছু জিনিস যেন অপরিবর্তনীয়। সে প্রতি বছর আষাঢ় মাসে নীলাচলে ভক্ত সমাগমের ঢল হোক, অথবা গ্রামবাংলার মফস্সলের কোনও মেলায় হঠাৎ করে মাইকে বেজে ওঠা কোনও স্বর, যেখানে অত্যধিক ভিড়ের জন্য কোনও দর্শনার্থী খুঁজতে চাইছেন সঙ্গীকে, অথবা মেঘভাঙা বৃষ্টিতে কাদামাটি-মাখা মেলার মাঠে হাসিমুখে চেখে দেখা পাঁপড়ভাজা আর জিলিপি! রথযাত্রা ও রথের মেলার এই মিলনক্ষেত্রে এভাবেই বারবার বেজে উঠবে মঙ্গলশঙ্খ আর ঘণ্টাধ্বনি।