পুরুষোত্তম শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভু হলেন জগৎ সংসারে সকলের নাথ। শ্রীক্ষেত্রে রত্নবেদির উপর তিনি অবস্থান করছেন। তাঁর দুই বাহু প্রসারিত করে আকর্ষণ করছেন ভক্তের হৃদয়কে। তাঁর মধ্যে লীন হয়ে যায় সর্বধর্ম ও দর্শন। তাই তিনি পুরুষোত্তম— অনাদি, অনন্ত, অতল। তিনি অব্যক্ত এবং বিকাররহিত।
শ্রীজগন্নাথ ভক্তের ভগবান বলেই তিনি মন্দিরের গর্ভগৃহ ছেড়ে বাইরে বের হন। সকল ভক্তকে দর্শন দেন। এখানে তিনি কোনও ধর্মাধর্মের বা উচ্চ-নীচ জাতের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকেন না। মিশে যান জনগণের মাঝে জনগণাধিপতি হয়ে। শ্রীজগন্নাথের তাই একাধিক যাত্রা হয়ে থাকে। যেমন বৈশাখ মাসে শ্রীচন্দন যাত্রা, জ্যৈষ্ঠ মাসে স্নানযাত্রা, আষাঢ় মাসে রথযাত্রা প্রভৃতি। স্নানযাত্রা ও রথযাত্রায় শ্রীজগন্নাথ স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। এইসব যাত্রার মধ্যে শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব সবথেকে বেশি প্রসিদ্ধ ও শ্রীক্ষেত্র পুরীধামের শ্রেষ্ঠ উৎসব।
পুরীর রথযাত্রা বহুদিন পূর্ব থেকে প্রচলিত ছিল। তবে কত প্রাচীন সেই তথ্য পাওয়া যায় না। শতপথ ব্রাহ্মণ, রামায়ণ, মহাভারতে রথের উল্লেখ পাওয়া যায়। সাম্ব পুরাণ মতে পিতামহ ব্রহ্মা প্রথমে সূর্যদেবের রথ প্রস্তুত করান। এই রথ দেখার পর দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা সোমাদি বিভিন্ন দেবতার রথ নির্মাণ করেন। সূর্যের কাছ থেকে রথ পান বৈবস্বত মনু। তাঁর কাছ থেকে আবার সেই রথ পান ইক্ষ্বাকু। সেই থেকে মর্ত্যলোকে রথের প্রচলন।
বিভিন্ন শাস্ত্রে রথযাত্রার তাৎপর্য নানাভাবে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় বলা হয়েছে আত্মা হল রথী আর শরীর রথ— ‘আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু।/ বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমেব চ।।/ ইন্দ্রিয়াণি হয়ানাহুর্বিষয়াংস্তেষু গোচরান্। আত্মেন্দ্রিয় মনোযুক্তং ভোক্তেত্যাঽউইর্মনীষিণঃ।। কঠোপনিষদ্-এ এ কথাই বলা হয়েছে। জীবাত্মাকে রথস্বামী আর শরীরকে রথের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বুদ্ধি রথের সারথি। মন এই শরীর-রূপ রথের লাগাম। জীবের ইন্দ্রিয় সকল রথের অশ্ব। ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয় হল রথের পথ। জ্ঞানীরা বলেছেন, চোখ, শরীর, ইন্দ্রিয় ও মন সংযুক্ত জীবাত্মাই ভোগকর্তা। ভক্তের বিশ্বাস পুরীর মহারথযাত্রায় পরমাত্ম বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, প্রদ্যুম্ন ও অনিরুদ্ধ চতুর্ব্যূহ রূপে রথে আরোহণ করেন। সৃষ্টির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ধ্বংসের বীজ। এরা একে অপরের সঙ্গে অভিন্ন। দেহের রহিরঙ্গ রথ। সত্যযুগাদ্যা অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে সৃষ্টি হয় রথ। সেই ঘটনার স্মরণে শ্রীজগন্নাথের রথও ওই বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনেই নির্মাণের কাজের শুভারম্ভ হয়।
অনেক পণ্ডিত ব্যক্তির মতে রথযাত্রার মধ্যে বৌদ্ধপ্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। বুদ্ধদেবের জন্মোৎসবের দিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও রথযাত্রা উৎসব করতেন। শ্রীজগন্নাথের বিশেষ উৎসবে বিশেষ বেশও হল বুদ্ধবেশ। বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর রথযাত্রার উল্লেখও পুরাণাদি শাস্ত্রে প্রচুর। অনেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ও নিজ নিজ আরাধ্যদেবকে রথারূঢ় করে ভ্রমণ করান। অনেকে মনে করেন শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন থেকে মথুরাগমনের স্মারক হল শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভুর রথযাত্রা। কারণ কৃষ্ণ ও জগন্নাথ অভিন্ন। শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রার উৎপত্তি সম্বন্ধে একটি বহুল প্রচারিত পৌরাণিক কাহিনি আছে। মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন শ্রীজগন্নাথের মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় পিতামহ ব্রহ্মা স্বয়ং দেবচতুষ্টয়— জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনচক্রকে গুণ্ডিচা থেকে রথে করে নিয়ে আসেন। হয়তো তারই স্মরণে প্রতি বছর ওই বিশেষ সময় রথারূঢ়, দেবচতুষ্টয়কে গুণ্ডিচাবাড়ি নিয়ে যাওয়ার রীতি।
আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পুরীধামের রথযাত্রা আরম্ভ হয়। শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা আজ একটি মহোৎসব— গ্লোবাল ফেস্টিভ্যালে পরিণত হয়েছে। এই দিন চার দেবতা— শ্রীশ্রীজগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনকে তিনটি সুদৃশ্য বিশাল রথে চড়িয়ে গুণ্ডিচা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মূল মন্দির থেকে গুণ্ডিচা প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত। যে পথ দিয়ে রথ যায় তার নাম বড় দাণ্ড। শ্রীজগন্নাথের প্রথম মূর্তিটি গুণ্ডিচা গৃহেই প্রতিষ্ঠিত হয়। দেবচতুষ্টয় গুণ্ডিচাগৃহে সাতদিন অবস্থান করে পুনরায় রথারূঢ় হয়ে শ্রীমন্দিরে রত্নবেদদিতে ফিরে আসেন। তাঁর এই গমন ও আগমন ‘পহণ্ডী বিজয়’ নামে খ্যাত। দেহশক্তি ও কৌশলের সুষ্ঠ সমন্বয়ে বিশাল আকার ও ওজনের মূর্তিগুলিকে রত্নবেদি থেকে নামিয়ে রথে স্থাপন করা হয়। প্রথমে আসেন সুদর্শন। তিনি থাকেন দেবী সুভদ্রার রথে। এরপর একে একে আসেন সুভদ্রা, বলরাম ও জগন্নাথ। এদের প্রত্যেকের নিজ নিজ রথ আছে। প্রতিটি রথের গঠনে আলাদা আলাদা প্রতীক ও তাৎপর্য আছে। প্রতিপদে প্রতিটি ক্ষেত্রের পৃথকত্ব ও নিয়ম আজও সুষ্ঠভাবে পালিত হয়। এবার ত্রিদেবের রথ ও তার বৈশিষ্ট্য, রূপকত্বগুলি অতি সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক।
শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের রথ:
শ্রীশ্রীজগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ। এই রথ প্রস্তুত হয় ৮৩২ খণ্ড কাঠ দিয়ে। উচ্চতায় ৪৫ ফুট। ৭ ফুট ব্যাসের ১৬টি চাকা এই রথে আছে, যা চন্দ্রের ১৬ কলার প্রতীক। চাকার রং হলুদ। রথটি আচ্ছাদিত হয় লাল ও হলুদ রঙের বস্ত্রে। নন্দীঘোষের রথ টানে শঙ্খিকা, রোচিকা, মোচিকা ও জ্বালিনী নামের চারটি ঘোড়া। নৃসিংহভগবান স্বয়ং এই রথে অবস্থান করেন। আর যে সব দেব থাকেন তাঁরা হলেন বরাহ, কৃষ্ণ, রাম ও নারায়ণ, রথের রক্ষক গরুড়। এর সঙ্গে আয়ুধ, শঙ্খ ও চক্র, নন্দীঘোষের উপদেবতা কল্যাণসুন্দর।
রথের চারদিকে নয়দেবতা আছেন— হনুমান, রাম, লক্ষ্মণ, কৃষ্ণ, গোবর্ধনধারী, নারায়ণ, চিন্তামণি, রাঘব ও নৃসিংহ। রথের সারথি মাতলি/ দারুক। রথের রশি শঙ্খচূড় নাগ। রথের মুখ নন্দীমুখ; দেবী যোগমায়া, ভৈরব একপাদ। চরণ নন্দ ও কুবের, যক্ষ-হর্ষক, গর্ভাধীশ্বর— হিরণ্যগর্ভা, শক্তি স্বয়ং মা বিমলা। উৎকর্ষণী— ক্রিয়া, যোগ, আজ্ঞা, অনুজ্ঞা, প্রজ্ঞা ও মেধা। এই রথে থাকেন মুনিঋষিরাও— নারদ, দেবল, ব্যাস, শূক, পরাশর, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র ও রুদ্র। হিরণ্ময় হল রথ কুম্ভ। দ্বারপাল জয় ও বিজয়। ত্রৈলোক্যমোহিনী নন্দীঘোষের ধ্বজা। আর রথের অধীশ্বর হলেন স্বয়ং শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভু।
দেবী সুভদ্রার রথ:
রথের নাম দর্পদলন বা পদ্মধ্বজ। দেবী সুভদ্রা মা লক্ষ্মী স্বরূপা; তাই তাঁর আর এক নাম পদ্মা। তিনি ধনসমৃদ্ধি, শ্রীর প্রতীক। তাই তাঁর রথে থাকে পদ্মচিহ্ন। আর সেই জন্য রথের নামও পদ্মধ্বজ। এই রথের আরও একটি নাম আছে— দেবদলন। উচ্চতা ৪৩ ফুট, চাকার সংখ্যা ১২ যা দ্বাদশ মাসের প্রতীক। প্রতিটি চাকার ব্যাস ৭ ফুট। লাল ও কালো রং-এর বস্ত্রে রথটি আচ্ছাদিত। রথের ১২টি অক্ষ ১২টি কলার প্রতীক। রথের চারটি ঘোড়া— প্রজ্ঞা, অনুজ্ঞা, ঘোরা, অঘোরা। সুভদ্রার রথের সারথি অর্জুন বা দেবদত্ত। রথের রশি যাজ্ঞবল্ক্য। জয়দুর্গা, চণ্ডী, চামুণ্ডা, শ্যামাকালী, উগ্রতারা, মঙ্গলা, শূলি, দুর্গা বরাহী প্রভৃতি দেবী সুভদ্রার সঙ্গে রথে অবস্থান করেন। গঙ্গা ও যমুনা রথদ্বারে থাকেন। রথের রক্ষিকা জয়দুর্গা। এই রথে আর যিনি বিরাজ করেন তিনি হলেন সুদর্শন।
বলরামের রথ:
বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। বলভদ্রের বেদির নীচে আছে দর্পণ, যা জ্ঞানের প্রতীক। জগৎ সংসারকে এই দর্পণে তিনি দেখেন। বেদির তলদেশে দর্পণ থাকায় তাকে তাল বলা হয় যা শুদ্ধ ও স্বচ্ছতারও প্রতীক। এই তাল বা দর্পণের অধিকারী হলেন বলরাম; তাই তিনি তালাঙ্ক। আর তাঁর রথের নাম তালধ্বজ। আবার অন্যমতে তালবনে তৃণাবর্তাসুরকে তিনি বধ করেন। সেই বিজয়ের প্রতীক রূপে বলভদ্রের রথে তালগাছের চিহ্ন দেওয়া থাকে। তাই রথের নাম তালধ্বজ।
উচ্চতা ৪৪ ফুট বা ১৩.২ মিটার। রথটি তৈরি হয় ৭৬৩টি খণ্ড কাঠ দিয়ে। চতুর্দশ ভুবনের প্রতীকরূপে তালধ্বজের চাকা ১৪টি। চাকার ব্যাস ৭ ফুট। রথটি আচ্ছাদিত হয় লাল ও নীল কাপড়ে। ব্রহ্মার অবসান হয় ১৪টি মন্বন্তরে। তারই প্রতীক রথের ১৪টি করে অক্ষ থাকে প্রতি চক্রে বা চাকায়। বলরাম জড়জগতের অধিপতি হওয়ায় বিশালদেহী। রথের সারথি মাতলি/ তালধ্বজ। চার ঘোড়া— তিব্রা, ঘোরা, দীর্ঘাশ্রম, স্বর্ণাভ। মূল রশির নাম অঙ্গিরা। রুদ্র ও সাত্যকী এই রথে অবস্থান করেন। পার্শ্বদেবতারা হলেন মহেশ্বর, গণেশ, কার্তিক, সর্বমঙ্গলা, শেষদেব, নটেশ্বর, মৃত্যুঞ্জয়, প্রলম্ব, হলায়ুধ। তালধ্বজের রক্ষক হলেন শেষনাগ।
শ্রীজগন্নাথের রথযাত্রা দর্শনের ফল:
পঞ্চমুখে বিভিন্ন শাস্ত্রাদি রথযাত্রার প্রশংসা করেছেন। আসলে ভক্তের কল্যাণে ভক্ত ও ভক্তিপ্রিয় শ্রীজগন্নাথ শ্রীক্ষেত্রের রত্নবেদি থেকে পথে নেমে আসেন, রথারূঢ় হয়ে ভক্তদের সঙ্গে মিশে যান। ভক্তের হৃদয়সিংহাসনই যে তাঁর আসল রত্নবেদি। আসলে রথযাত্রা একটি প্রতীকী ঘটনা। ভক্তের মনে বিশ্বাসের বীজ বপনের জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রথযাত্রার লীলা করেন। এর প্রমাণ স্কন্দপুরাণের মাহাত্ম্যম্; অধ্যায় ৩৩ এ আছে— ‘অজ্ঞানামপ্যবিশ্বাসভাজাং বিশ্বাসহে তব।/ নিসর্গমুক্তিদোহপ্যেষ যাত্রারম্ভান করোতি বৈ।।’
১) রথযাত্রাকালে শ্রীজগন্নাথকে মহাবেদিতে দর্শন করলে কোটি জন্মের পাপ বিনষ্ট হয়।
২) রথযাত্রাকালে রথের ছায়া গায়ে পড়লে ব্রহ্মহত্যার পাপও নাশ হয় ‘রথচ্ছায়াং সমাক্রম্য ব্রহ্মাহত্যাং ব্যপোহতি।’
৩) পুষ্যা নক্ষত্রযুক্ত আষাঢ়ী পূর্ণিমায় রথারূঢ় জগন্নাথকে দর্শনে তিনি প্রীত হন ও ভক্তকে তার কাঙ্ক্ষিত ফল প্রদান করেন।
৪) রথারূঢ় শ্রীজগন্নাথ দর্শনে চতুর্বর্গ ফল লাভ— ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভ হয়।
৫) গুণ্ডিচা মন্দিরে রত্নবেদিতে শ্রীমহাপ্রভুকে দর্শন করলে তিনি মনোবাঞ্ছা কল্পতরু হয়ে ভক্তের সব প্রার্থনা পূর্ণ করেন।
৬) পুনঃযাত্রার সময় জগন্নাথ দর্শনে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল প্রাপ্তি হয় এবং মৃত্যুর পর তাঁর সাযুজ্য লাভ হয়।
৭) মহাপ্রভুর রথযাত্রা শুধুমাত্র দর্শন করলে শতজন্মের পাপনাশ ও অশ্বমেধ যজ্ঞের ফললাভ হয়।
৮) রথে অবস্থানের সময় শ্রীজগন্নাথকে দর্শন করলে দুঃখময় সংসারে জন্মাতে হয় না; তার ভববন্ধন ছিন্ন হয়। ‘যে পশ্যন্তি জগন্নাথং রথস্থং... ভগবাৎস্তস্য জৈমিনে ভববন্ধনং।।’
৯) সনাতন ধর্মের দার্শনিকরা বলেন— ‘রথে চ বামনং দৃষ্ট্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।’ এই বচনটির গভীর রহস্য, অর্থ ও তাৎপর্য আছে। দেহরূপ রথের অন্তরস্থানে যে বামনরূপী জগন্নাথ অধিষ্ঠান করছেন সাধক তাঁকে দর্শন করলে নির্বাণ লাভ করেন। তার আর পুনর্জন্ম হয় না।
১০) শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভু হলেন দারুব্রহ্ম। তিনি সর্বভূতে বিরাজমান। তিনিই আবার গ্রহরূপী জনার্দন। শ্রীজগন্নাথকে রত্নবেদি বা রথারূঢ়— যে অবস্থায় দর্শন, স্তবপাঠ প্রণাম ও প্রার্থনা করা হোক তাঁর কৃপায় নবগ্রহের শান্তি হয়।
১১) শ্রীজগন্নাথের রথের রশিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বহু ভক্ত রথের রশির একটু অংশ সংগ্রহ করার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন। এই রশির অংশ বিশেষ মাদুলিতে ভরে ধারণ করেন। এতে শিশুদের নজরলাগা, শারীরিক সুস্থতা, ভৌতিক ত্রাস ইত্যাদি বহুবিধ সমস্যার সমাধান হয় বলে ভক্তের বিশ্বাস।
জগৎপতি জগন্নাথ। তাঁর দরবার সকলের কাছে উন্মুক্ত। ভক্তকে তিনি বাহুমূলে জড়িয়ে ধরে রাখেন। ইহকাল পরকাল সর্বকালেই তিনি। ইহকালে ভক্তকে তিনি যেমন আশ্রয় দান করেন পরকালেও পরমাত্মারূপে জীবাত্মাকে আকর্ষণ করে পরমসত্ত্বায় একীভূত করেন। তাই তো শাস্ত্র বলছেন— ‘জগন্নাথ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মেঃ।’ জগৎবাসীর জন্য জগন্নাথই একমাত্র সম্পদ। একমাত্র আশ্রয়। এমন আশ্রয়কে কে উপেক্ষা করে! তুমি যে নাথের নাথ, অনাথেরও নাথ!