মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

জগৎ

তোমরা জান বিশ্বের সবাই পরমপুরুষের সন্তান। তিনিই এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন এই জগৎকে, সৃষ্টি করেছেন এই সমস্ত জীবিত প্রাণীকুলকে। 

জগৎ

তোমরা জান বিশ্বের সবাই পরমপুরুষের সন্তান। তিনিই এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন এই জগৎকে, সৃষ্টি করেছেন এই সমস্ত জীবিত প্রাণীকুলকে। এখন যেহেতু তিনি এই জড় জগৎকে, এই অস্থাবর অচেতন জগৎকে, সমগ্র উদ্ভিদ ও মনুষ্যসহ বিশাল প্রাণীজগৎকে সৃষ্টি করেছেন, তাই সাধারণ বুদ্ধি একথাই বলে যে এই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরমপুরুষের সমস্ত সন্তানদের যৌথ সম্পত্তি। জাতি-ধর্মমত-জাতীয়তা-শিক্ষা-বিদ্যা-বুদ্ধি অথবা ভৌতিক, শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক শক্তি নির্বিশেষে সবাইকার এটা এজ্‌মাইলী সম্পত্তি। নীচ ও হীন বৃত্তির প্রেষণায় কায়েমী স্বার্থবাহীরা প্রাণী জগতে, বিশেষ করে মানুষে মানুষে ভেদভাব সৃষ্টি করে। তাই যারা অপরকে শোষণ করে, অন্যকে ন্যায়সঙ্গেত পৈতৃক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এই সৃষ্ট জগতের যাবতীয় সম্পদকে কুক্ষিগত করতে চায় তারা অবশ্যই সমাজের শত্রু, মানবতার শত্রু, সংস্কৃতিপরায়ণ ও সভ্য জগতের শত্রু। 
“সর্বাজীবে সর্বসংস্থে বৃহন্তে”। তাঁর সৃষ্ট জীবেরা, তাঁর স্নেহের পুত্র-কন্যারা তাঁর চারপাশে ঘুরে চলেছে। তারা পরমপুরুষ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে থাকতে পারে না। কেন না পরমপুরুষ হলেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরম চক্রনাভি, অন্যেরা তার চার দিক শুধু ঘুরে চলেছে। যেমন ক্ষুদ্র আণবিক সংরচনায় অসংখ্য ইলেকট্রন তাদের কেন্দ্রবিন্দুর চারদিকে 
অবিরাম ঘুরে চলে তেমনি পুরুষোত্তম বা পরমপুরুষ রয়েছেন কেন্দ্রবিন্দুতে আর তাঁর সৃষ্ট অন্য সবাই তাঁর চারপাশে ঘিরে তাঁকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে, নেচে চলেছে। এই যে অজস্র সত্তা চক্রনাভি পরমপুরুষের চারদিকে ঘুরে চলেছে, তাদের প্রত্যেকের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জাগতিক ও মানসিক আজীব ও আভোগ।
সকলের ভৌতিক চাহিদা সমান নয়, তাই বলেছি যে ঘূর্ণমান বস্তুসমূহ, সত্তাসমূহ তাদের নিজের নিজের আভোগ (pabulum) নিয়ে ঘুরে চলেছে। তেমনি সবাইকার মানসিক এষণা, মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বৃত্তি এক নয়। শ্লোকটিতে ‘আজীব’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। আজীব মানে occupation বা জীবিকা। এই আজীব সত্তার মানসিক ও ভৌতিক দুইই হতে পারে। এটা একটা তথ্য যে বিভিন্ন সত্তা তাদের পৃথক পৃথক ভৌতিক ও মানসিক আভোগ নিয়ে বেঁচে থাকে। এর মানে এই নয় যে একের জাগতিক বা মানসিক আভোগ অন্যে কেড়ে নেবে। যারা তা করে বা করবার চেষ্টা করে, আমার মতে তারা মানব সভ্যতার শত্রু, বিশ্বস্রষ্টার অভিশপ্ত সন্তান।
“সর্বাজীবে সর্বসংস্থে”। আপন মনের বৃত্তি-এষণা-আশা-আকাঙ্ক্ষা-বাসনা-কামনা অনুযায়ী বিভিন্ন জীব ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক আধার পেয়ে থাকে। এই আধার তাদের দরকার মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-বাসনা-কামনার পরিতৃপ্তির জন্যে। তাই জীবিত প্রাণীদের কেউ কেউ পেয়েছে জন্তুদেহ, কেউ বা কীট-পতঙ্গের শরীর, কেউ বা জন্মেছে গাছপালা হয়ে, আবার কেউ বা পেয়েছে মানবদেহ। আবার যারা মানব সংরচনা পেয়েছে তারাও তাদের অন্তর্নিহিত সংস্কারের পার্থক্যের দরুণ একে অন্যের থেকে পৃথক পৃথক। এই সংস্কারগত পার্থক্যের দরুণ বিশ্বের চক্রনাভি থেকে বিভিন্ন জীবিত সত্তার ব্যাসার্ধগত দূরত্বেও তারতম্য রয়েছে।
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্‌’ (১ম-৩য় খণ্ড) থেকে

রাশিফল