রবিবার, 20 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

বাত যখন অচেনা, ভ্যাস্কুলাইটিস

পরামর্শে নিউটাউনের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইমিউনোলজি অ্যান্ড রিউমাটোলজি’র বিশিষ্ট রিউম্যাটোলজিস্ট ডাঃ অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়।

বাত যখন অচেনা, ভ্যাস্কুলাইটিস

রহস্যময় অসুখ? আদৌ কি রহস্যময়?
‘ডাক্তারবাবু এটাও বাত? আমার তো গাঁটে গাঁটে ব্যথা নেই!’
মাস তিনেক আগে বেহালার অনিল সাঁতরার (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে আলাপ এভাবেই শুরু হয়। কথায় কথায় জানা যায়, প্রায়ই জ্বর, ক্লান্তি, ওজন কমার সমস্যায় ভুগছেন অনিলবাবু। নানা সমস্যা নিয়ে বিগত ৮-৯ মাসে বার তিনেক হাসপাতালে ভর্তি, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সব হয়েছে। তবু অসুখের নেপথ্যে কী, তা বোঝা যাচ্ছে না। শেষ যেবার ভর্তি হলেন, সেবার তো ক্যান্সার আছে কি না তার জন্যও অনেক পরীক্ষা করা হল। বোন ম্যারো, সিটি স্ক্যান, এমনকী পেট সিটি স্ক্যানও করা হয় শরীরে কোথাও কোনও লুকানো ক্যান্সার আছে কি না জানতে। কিন্তু নাহ্‌, ক্যান্সারের নামগন্ধ মিলল না। 
আসলে অনিলবাবুর এই অসুখের নাম ‘ভ্যাস্কুলাইটিস’। হয়তো ভাবছেন আর্থ্রাইটিস, কনজাংটিভাইটিস সবই শুনেছি, কিন্তু ভ্যাস্কুলাইটিস! এ আবার কী অসুখ? আসলে এই অসুখটি সাধারণত বিরল রোগের মধ্যে পড়ে। সচেতনতার অভাবের জন্যই চট করে ধরা পড়ে না। ‘আর্থ্রাইটিস’ বা ‘কনজাংটিভাইটিস’ এই রোগগুলির নামের শেষে ‘আইটিস’ কথাটি আছে। ‘আইটিস’ কথার অর্থ ‘প্রদাহ’ বা ‘ইনফ্ল্যামেশন’। 
প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন অস্থিসন্ধিতে হলে তাকে আর্থ্রাইটিস বলে। চোখের কনজাংটিভাতে হলে কনজাংটিভাইটিস বলে। ঠিক তেমনই রক্তের নালী বা ব্লাড ভেসেলে হলে তাকে বলে ভ্যাস্কুলাইটিস। এই ভ্যাস্কুলাইটিস আবার অনেক রকমের হয়। এর লক্ষণ নির্ভর করে বড়, মাঝারি না ছোট কোন ধরনের রক্তনালী আক্রান্ত হয়েছে, তার উপর। অনিলবাবুর ক্ষেত্রে যেমন এটি ঘটেছিল বড় রক্তনালী বা লার্জ ভেসেলগুলো আক্রান্ত হওয়ার জন্য। 
শুধু জ্বর বা ওজন কমে যাওয়াই নয়, এই রোগে মাথাব্যথা, হঠাৎ চোখের জ্যোতি চলে যাওয়া, মুখে ঘা হওয়া, শক্ত খাবার চিবিয়ে খেতে চোয়ালে ক্লান্তি ভাব, ব্যথা অনুভব করা ইত্যাদিও উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। 
কেন হয় ভ্যাস্কুলাইটিস?
এটি একটি অটোইমিউন অসুখ। মানুষের ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলি দেহেরই বিভিন্ন অংশ বা অঙ্গকে ফরেন বডি বা শত্রু মনে করে তার ক্ষতিসাধন করে। অনিলবাবুর ক্ষেত্রে যেমন রক্তের নালীগুলোর প্রতি অটোইমিউনিটির সমস্যা ঘটেছে। এসব শুনে অনিলবাবু তো অবাক। বলছেন, ‘এমনও আবার হয় নাকি?’
বুঝিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ, হয় বইকি! অনেকেই ভুগছেন এসব রোগে। কিন্ত সচেতনতার অভাবে রোগ নির্ণীত হচ্ছে না। রোগ নির্ণয় হলে কিন্তু এর খুব ভালো ওষুধ আছে। সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবেন।’
তারপর নির্ধারিত নিয়ম ও পরামর্শ মেনে চিকিৎসা করালেন অনিলবাবু। চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ করেননি। তার ফলাফল? আজ তিন বছর হয়ে গেল, তিনি ফিট অ্যান্ড ফাইন! দেহে ক্লান্তি ভাব নেই, জ্বর নেই, ওজনও বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, সচেতন রোগী হিসেবে এখন অনিলবাবু নিজেই আগ বাড়িয়ে বাকিদের এইসব অটোইমিউন রোগের কথা বলেন। অন্যদের সজাগ করেন। এ বছরের ‘বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস’-এরও বার্তা ছিল— ‘ইটস ইওর হ্যান্ড। টেক অ্যাকশন!’ অর্থাৎ ‘আপনার হাতেই পুরো বিষয়টি, কাজ করে দেখান!’ ঠিক যেমন নিজে সুস্থ হয়েও অন্যদের সজাগ করার কাজ করছেন অনিলবাবু। এতেই বাড়বে সচেতনতা।

রাশিফল