বুধবার, 25 জুন 2025
Logo
  • বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র কী?

সম্প্রতি মার্কিন নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) থেকে ফিরলেন। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করে যে, এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রটি আদতে কী।

আন্তর্জাতিক  মহাকাশ কেন্দ্র কী?

উৎপল অধিকারী
সম্প্রতি মার্কিন নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) থেকে ফিরলেন। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করে যে, এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রটি আদতে কী। আসলে আইএসএস হল পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত একটি বসবাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ।
এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি লঞ্চ করা হয় ১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর। এটি বিভিন্ন দেশের একটি সমবেত উদ্যোগ। সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ শুরু করে রাশিয়া। ঠান্ডা যুদ্ধ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার একটি চাপানউতর চলছিল। কিন্তু এই আইএসএস প্রকল্পটি এই দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী স্থাপনে সাহায্য করে। এই গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আমেরিকার নাসা, রুশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস, জাপানের মহাকাশ অনুসন্ধান সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কানাডা একত্রিতভাবে কাজ করছে। বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন, মহাকাশ যাত্রাকে সুগম করা এবং মহাকাশ যাত্রীদের সুবিধার্থে এই গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এই কেন্দ্রটি মহাকাশে অবস্থিত বিশালাকার একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের মতো। এর ওজন ৪০০ টন। এটি পৃথিবীতে কেন্দ্র করে ১৮ হাজার মাইল প্রতি ঘণ্টায় প্রদক্ষিণ করছে। বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলার। ২০০০ সালের নভেম্বর মাস থেকে এটি কাজ করা শুরু করে। ওই মাস থেকেই মহাকাশচারীরা সেখানে কাজ শুরু করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটি কখনও ফাঁকা যায়নি। এই ২৪ বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানো হয়েছে এখানে। আইএসএসে বসেই পারকিনসন ও অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে। অভিকর্ষ বল শূন্য স্থানে মুলো ও লেটুস শাক চাষ করা সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রটির দৈর্ঘ্য ৭২.৮ মিটার ও উচ্চতা ২০ মিটার। বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হল ১০১.৩ কিলো পাস্কাল। পৃথিবী থেকে একটি সাদা উজ্জ্বল আলোক বিন্দু দেখা যায়। এটিই হল আইএসএস। কেন্দ্রটি প্রতিদিন পৃথিবীকে ১৫.৭ বার প্রদক্ষিণ করে।
পৃথিবীর বাইরে মানুষের বসবাসের উপযোগী একমাত্র এই কৃত্রিম উপগ্রহ। ২০৩১ সালে মানুষকে এই স্যাটেলাইটটিকে বিদায় জানাতে হবে। আইএসএস এখন বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। এর যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে আসছে। তাই আর উপায় নেই। বিজ্ঞানীরা সম্মিলিতভাবে এই কৃত্রিম উপগ্রহটিকে নামানোর ব্যবস্থা করছেন। প্রশান্ত মহাসাগরের নির্জনতম একটি অঞ্চল— নাম পয়েন্ট নিমো। এখানে পুরনো মহাকাশযানের সলিল সমাধি ঘটে। ২০৩১ সালে এখানেই নামিয়ে আনা হবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটিকে। এটিকে নামিয়ে আনা হলে এর উত্তরসূরি তৈরি করারও চিন্তাভাবনা চলছে। একাধিক দেশের সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলিও এই গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে। এটিকে এখন আর কেবল বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে সীমাবদ্ধ রাখা হবে না। গবেষণার পাশাপাশি বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠবে নতুন স্পেস স্টেশন। সেই দিন আর শুধু পৃথিবীর মধ্যেই নয়, পৃথিবীর বাইরেও হাওয়া বদল করতে যাবে মানুষ।