কিডনির সমস্যায় জল
অতিরিক্ত জলপান করা হচ্ছে তা বোঝার উপায় কী? অতিরিক্ত জলপানের কথা বললে ছোটবেলায় পড়া সুকুমার রায়ের অবাক জলপানের কথা মনে পড়ে গেল।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
এপ্রিল ২৭, ২০২৫
ডাঃ শৌভিক সুরাল: অতিরিক্ত জলপান করা হচ্ছে তা বোঝার উপায় কী?
অতিরিক্ত জলপানের কথা বললে ছোটবেলায় পড়া সুকুমার রায়ের অবাক জলপানের কথা মনে পড়ে গেল। প্রচণ্ড গরমে তেষ্টা মেটাতে গিয়ে পথিকের জল পাই কোথায় প্রশ্নে নানা বিভ্রান্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। যাই হোক জল পান নিয়ে যখন শরীরে জলের ঘাটতি হয় অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন হয় তখন আমরা বেশি করে জল খেতে বলি। কিন্তু বেশি করে জল পান মানে অতিরিক্ত জল পান নয়, আমাদের যেমন ডিহাইড্রেশান এড়িয়ে চলতে হবে তেমনই বেশি জল পান করলে আবার ওয়াটার টক্সিসিটি হতে পারে। সেটা কিন্তু শুধু কিডনি নয় শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও চাপ ফেলতে পারে। এবারে বোঝা দরকার স্বাভাবিকভাবে কতটা জলপানের প্রয়োজন হয়। সেটা নির্ভর করে কতগুলো বিষয়ের উপর,
১) মানুষটির বয়স কত? তিনি পুরুষ না নারী?
৩) তাঁর কর্মজগৎ কী?
৪) তাঁর ওজন?
৫) কী ধরনের পরিবেশে থাকেন?
সোজা কথায় ওপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে ঠিক করতে হবে সারাদিনে তিনি কতটা পরিমাণে জল খাবেন। যাঁরা খুব কায়িক পরিশ্রম করেন, মাঠে কৃষিকাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জলের চাহিদার পরিমাণ বেশি হবে। তাঁদের সারাদিনে মোটের ওপর ৪ লিটার থেকে ৪.৫ লিটার জল পান করতে হবে। জলপানের এই মাত্রা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। ছোটদের ক্ষেত্রে অনেকটা কম জলের দরকার হয় এবং ওজন অনুপাতে। কিন্তু সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সারাদিনে ২.৫ লিটার থেকে ৩ লিটার জলের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কিন্তু চা, দুধ, ডালের জল, ফলের রস সব পানীয়ের পরিমাণ ধরে। এক্ষেত্রে খুব বেশি কফি বা অ্যালকোহল চলবে না। বিশেষত অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে দেয়।
অতিরিক্ত জল পান কিডনির উপর চাপ তৈরি করছে বোঝার উপায় কী?
কিডনি এমনই একটা অঙ্গ যে আমরা যত বেশি জল পান করব, কিডনি সুস্থ থাকলে তা শরীর থেকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেবে।
এক্ষেত্রে মূত্রের রংটা লক্ষ করলে, যদি দেখা যায় হালকা হলুদ তাহলে বুঝতে হবে স্বাভাবিক মাত্রায় জল পান করা হচ্ছে, আর যদি ঘন রংয়ের হয় তাহলে শরীরে জলের মাত্রা কম। তার অর্থ ডিহাইড্রেশান হচ্ছে, আর যদি রংটা একদম সাদা হয় তাহলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত জল খাওয়া হচ্ছে। আবার যদি রাতে বারবার টয়লেটে যেতে হচ্ছে, যেটা আগে হতো না, তাহলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত জল খাওয়া হচ্ছে।
মাত্রাতিরিক্ত জল খেলে রক্তের মধ্যে সোডিয়াম নামক যে উপাদান থাকে তা মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। সাধারণভাবে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ থাকে ১৩৫ থেকে ১৪৫ মিলিইকুইভ্যালেন্ট প্রতি লিটার। কিন্তু এর থেকে যদি মাত্রা কমে ১৩০ মিলিইকুইভ্যালেন্ট-র নীচে চলে যায় তাহলে বলতে হবে হাইপোন্যাট্রিমিও হয়েছে। (ন্যাট্রিয়াম কথাটির অর্থ সোডিয়াম)। শরীরে নানা কারণে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায়, কিন্তু অতিরিক্ত জলের কারণে সোডিয়ামের মাত্রা কমে গেলে রক্ত থেকে কিছু পরিমাণ জল শরীরের কোষের মধ্যে ঢুকে যায় এবং শরীরের কোষগুলো ফুলে যায়।
আর শরীরে নানা ধরনের অসুবিধা শুরু হয়, বিশেষত মস্তিষ্কের কোষে জল জমা হলে কোষগুলো ফুলে গিয়ে, মানুষের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি দেখা দেয়, খিঁচুনি শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যেতে পারেন।
সেই জন্য অতিরিক্ত জলপানের কারণে আমাদের হাইপোন্যাট্রিমিয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে হাইপোন্যাট্রিমিয়ার আগের পর্যায়ে বমির ভাব হতে পারে। হাত, পা, মুখ ফুলে যায় যদি না হার্টের বা কিডনির কোনও অসুখ থাকে। শরীর সুস্থ থাকলে কিডনি অতিরিক্ত জল বার করে দেবে, কিন্তু কিডনি দুর্বল হলে শরীরে জল জমা শুরু হবে। আর বয়স বেশি হলে শরীরে জল জমার সমস্যা বাড়ে। কম বয়সে আমাদের শরীরের নানা অঙ্গগুলো নানারকম বিরুদ্ধ অবস্থা মোকাবিলা করতে পারে, কিন্তু বয়স বাড়লে শরীরের সুস্থিতি ব্যাহত হয়। কিডনি আগের মতো কাজ করতে পারে না, তাই বেশি বয়সে হাইপোন্যাট্রিমিয়া দেখা দেয়। অতিরিক্ত জল পানের সঙ্গে সোডিয়ামের সম্পর্ক আছে, কিন্তু রক্তের পটাশিয়ামের সরাসরি সম্পর্ক নেই। কিছু খাবার, ওষুধ বা কিডনির নিজস্ব অসুখের কারণে শরীরে পটাশিয়ামের গণ্ডগোল হয়। কিডনির অসুখে আবার উল্টোটা দেখা দেয়, কম জল খাবার কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ অব আননোন ওরিজিন বা CKDU দেখা দেয়।
যাঁরা মাঠঘাটে নিয়মিত কাজ করেন তাঁরা সময় মতো পরিমাণমতো জল পান করেন না। আবার ধর্মীয় কারণে নির্জলা উপবাস করেন তাদের ক্ষেত্রেও শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে থাকে, আবার যারা অ্যাথলিট দৌড়চ্ছেন তাঁদের বেশি তরল পান করতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় তাঁরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জল, ফলের রস বা ও.আর.এস খাচ্ছেন। তাঁরা কিন্তু ওভার হাইড্রেটেড হয়ে যান। ফলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেকটা কমে যায়। তাঁরা অজ্ঞানও হয়ে যান। কাজেই আন্দাজে খুব বেশি জল খাবার কারণে ম্যারাথন দৌড়ের পরে অনেকে মারাও গেছেন। তার যে পরিমাণ জলের দরকার ছিল, খেয়েছেন তার থেকে অনেকটা বেশি পরিমাণে। ফলে ওভার ডিহাইড্রেশানের ফলে মৃত্যু ঘটেছে। হাইপোন্যাট্রিমিয়া বা ওভারডিহাইড্রেশনের ফলে মৃত্যু ম্যারাথন রেসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা যায়। কাজেই সুস্থ সবল স্বাভাবিক মানুষের দিনে ২ লিটার থেকে ৩ লিটার জলের প্রয়োজন। তবে কিডনি বা হার্টের অসুখ থাকলে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শমতো কম জল খাবেন।
সঠিক মাত্রায় জল পান
ধরুন কারও যদি কিডনির অসুখ থাকে। সেক্ষেত্রে তিনি যদি বেশি করে জল খান, আরও বেশি ফুলে যাবেন, শ্বাসকষ্ট শুরু হবে এবং অনেক বেশি জল খাওয়ার জন্য ডায়ালিসিসের দরকার হতে পারে। আবার যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে মানে কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর রয়েছে, তাদের হার্ট ফেলিওর হতে পারে। যাদের সিরোসিস অব লিভার রয়েছে তাদের অতিরিক্ত জলের কারণে পেটে জল জমে গিয়ে অ্যাসাইটিস হবে। কাজেই যাদের কিডনির অসুখ, হার্টের অসুখ বা লিভারের অসুখ আছে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণে জল খেতে হবে। বেশি জল খাওয়া চলবে না। বেশি জল তাদের ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু অপরদিকে যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বেশি করে জল খেতে বলা হয়। বিশেষ করে রাতে বেশি করে জল খেতে বলা হয়, যাতে কিডনিতে পাথর তৈরি না হয়।
দীর্ঘদিন ধরে বেশি করে জল খাওয়ায় মুখ, চোখ, পা যদি ফুলে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্ধারণ করে দেওয়া অনুযায়ী জল খেতে হবে। নিয়ম মেনে চললে অনেক রোগী ভালো থাকেন, পরে কোনও ওষুধও দরকার হয় না, শরীর আগের মতো সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে।
পরামর্শে: পিয়ারলেস হাসপাতাল এবং বি কে রায় রিসার্চ সেন্টারের নেফ্রোলজি এবং কিডনি ট্রান্সপ্লাট বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর নেফ্রোলজিস্ট
অনুলিখন: সোমা সরকার
related_post
অমৃত কথা
-
‘বিবেকচূড়ামণি’
- post_by বর্তমান
- জুলাই 19, 2025
এখনকার দর
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025