টিকা রোগ প্রতিরোধে যুগান্তকারী আবিষ্কার
সে সময় গুটিবসন্ত ছিল বিভীষিকার অপর নাম। মধ্যযুগে ইউরোপে হামেশাই মহামারীর আকার নিত এই রোগ। ১৮ শতকে ইংল্যান্ডে এই রোগের নামকরণ করা হয়েছিল, ‘স্পেকলড মনস্টার’।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
জুলাই ৩, ২০২৫
শান্তনু দত্ত: সে সময় গুটিবসন্ত ছিল বিভীষিকার অপর নাম। মধ্যযুগে ইউরোপে হামেশাই মহামারীর আকার নিত এই রোগ। ১৮ শতকে ইংল্যান্ডে এই রোগের নামকরণ করা হয়েছিল, ‘স্পেকলড মনস্টার’। কারণ? এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও যাঁরা বেঁচে যেতেন, তাঁদের মুখে আর শরীরে থাকত কুৎসিত দাগ। গুটিবসন্ত প্রতিরোধের জন্য ‘ভারিওলেশন’ প্রক্রিয়ার ব্যবহার হতো। কী এই ‘ভারিওলেশন’? জানা যায়, গুটিবসন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির গুটি থেকে রস সংগ্রহ করে সুস্থদের মধ্যে ইনজেক্ট করা হতো। ফলে সুস্থ মানুষ যক্ষ্মার মতো রোগে আক্রান্ত হতো। আবার গুটিবসন্তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকত। তা সত্ত্বেও গুটিবসন্ত প্রতিরোধের জন্য এই ঝুঁকির রাস্তাই বেছে নিতেন সাধারণ মানুষ। এই পদ্ধতিতে ইংল্যান্ডে অনেক শিশুর টিকাকরণ হয়েছিল।
১৭৫৭ সালে ওই পদ্ধতিতেই ইংল্যান্ডে কয়েক হাজার শিশুর টিকাকরণ হয়। তার মধ্যে ছিল ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্লুচেস্টারশায়ারের এক শিশুও। আট বছরের সেই শিশু এডওয়ার্ড জেনার। বড় হয়ে ডাক্তারি পড়ে সেই শিশু। মানুষের সেবায় সঁপে দেন নিজেকে। একবার গোয়ালিনীদের চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক অদ্ভুত কথা কানে এল জেনারের। শুনলেন, গো-বসন্তে যাঁরা একবার আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা আর মানব বসন্তে (গুটিবসন্ত) আক্রান্ত হননি। কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করেননি জেনার। পরে ভেবে দেখলেন, গোয়ালিনীদের কথা যদি সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে গো-বসন্ত থেকে গুটিবসন্তরোধী টিকা তৈরি করা যেতে পারে। কাজে লেগে পড়লেন তিনি। সালটা ১৭৯৬। একজন গোয়ালিনীর শরীরে গো-বসন্তের ক্ষত থেকে রস সংগ্রহ করলেন। সেটি প্রয়োগ করেন তাঁর বাগানের মালির ছেলের শরীরে। জ্বরে ভুগতে শুরু করল ছেলেটি। চিন্তায় পড়লেন জেনার। যদিও কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠল ওই শিশু। এর কিছুদিন পর বিরাট ঝুঁকি নিলেন তিনি। ওই শিশুর শরীরে ইনজেক্ট করলেন গুটিবসন্তের রস। দেখা গেল, বসন্তে আক্রান্ত হল না সেই বাচ্চাটি। ব্যস! নিশ্চিত হয়ে গেলেন জেনার। উপলব্ধি করলেন, গোয়ালিনীদের কথা ভুল ছিল না। এরপর বৈজ্ঞানিক উপায়ে গোরুর শরীর থেকে সংগ্রহ করলেন গো-বসন্তের রস। লিখলেন টিকা বিষয়ক গবেষণাপত্র। যদিও রয়্যাল সোসাইটি সেই রিসার্চ পেপার ছুঁয়েও দেখেনি! এবার শুরু হল জেনারের আসল লড়াই। ১৭৯৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন জেনার। সেখানে গোরুর শরীরের বসন্ত বোঝাতে ‘ভেরিওল ভ্যাকসিন’ শব্দটি প্রয়োগ করলেন তিনি। লাতিন ভাষায় ‘ভ্যাক্কা’ শব্দের অর্থ গোরু। সেখান থেকেই টিকা বোঝাতে ভ্যাকসিন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। জেনার বুঝেছিলেন, গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন সর্বজনবিদিত করতে লন্ডনে স্বীকৃতি প্রয়োজন। এই জন্য তিনমাস লন্ডনে পড়েছিলেন তিনি। দোরে দোরে ঘুরেছিলেন। খুঁজেছিলেন, কে নেবে তাঁর ভ্যাকসিন? পাননি কাউকে। লন্ডন ছেড়ে চলে যান জেনার। সেই সময় এগিয়ে আসেন লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক ডাক্তার ক্লাইন। ১৭৯৯-১৮০০ সালে গুটিবসন্ত ভয়ঙ্কর মহামারী হিসেবে দেখা দিল। ক্লাইন বুদ্ধি করে জেনারের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে ভ্যাকসিন নেওয়ার উৎসাহ বাড়ল। ইংল্যান্ডের সমস্ত সৈনিককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। নেপোলিয়ন তাঁর সেনাবাহিনীর প্রত্যেকের জন্য টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন জেনার। হয়ে উঠলেন প্রতিষেধক বিদ্যার জনক। ১৯৭৭ সালে পৃথিবী থেকে নির্মূল হল গুটিবসন্ত। এর মধ্যেই আরও বহু রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়। ১৮৮৫ সালে লুই পাস্তুর আবিষ্কার করলেন জলাতঙ্ক রোগের টিকা। হুপিং কাশি, টিটেনাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিওর মতো টিকার আবিষ্কার একেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাও অগ্রগণ্য। কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কারের কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতে তার উৎপাদন শুরু হয়েছে। ১৮০২ সালে প্রথম গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এ দেশে। পোলিও টিকাকরণেও ভারতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ‘দো বুন্দ জিন্দেগি কা’... ব্যারিটোন গলায় দেশবাসীর ঘরে ঘরে পোলিওর প্রচারকে পৌঁছে দিয়েছিলেন অমিতাভ। ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিয়ে রোনাল্ড রস সফল গবেষণা করেছিলেন ভারতেই। আবার কালাজ্বরের ওষুধ তৈরি করেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। ১৮৯৭ সালে প্লেগের প্রতিষেধক তৈরি হয়েছিল মুম্বইয়ে। নানা প্রতিষেধক তৈরির প্রতিষ্ঠানও তৈরি হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় আরও এক মারণ ভাইরাস— করোনা। সেই ভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রেও নজির গড়ে ভারত। বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ১০০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছিল এ দেশ।
related_post
অমৃত কথা
-
অভাব
- post_by বর্তমান
- জুলাই 20, 2025
আজকের দিনে
-
ইতিহাসে আজকের দিনে
- post_by Admin
- জুলাই 19, 2025
-
ইতিহাসে আজকের দিনে
- post_by Admin
- জুলাই 20, 2025
এখনকার দর
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুলাই 20, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুলাই 20, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025