উচ্ছল চঞ্চল উস্রি ঝর্ণা
স্রোতস্বিনী নদী সজোরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পাহাড়ের গা বেয়ে। তৈরি হচ্ছে চঞ্চল উস্রি জলপ্রপাত। পাশেই খান্ডোলি ড্যাম ও বুড়াই পাহাড়। একযাত্রায় দেখে নিতে পারেন সবই। বর্ষা ও শীত, দুই সময়ই এই গন্তব্য ভিন্ন রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের চোখে।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
জুন ২১, ২০২৫
স্রোতস্বিনী নদী সজোরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পাহাড়ের গা বেয়ে। তৈরি হচ্ছে চঞ্চল উস্রি জলপ্রপাত। পাশেই খান্ডোলি ড্যাম ও বুড়াই পাহাড়। একযাত্রায় দেখে নিতে পারেন সবই। বর্ষা ও শীত, দুই সময়ই এই গন্তব্য ভিন্ন রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের চোখে।
বাঙালির আবেগ জড়ানো ছোটনাগপুরের মালভূমির পূর্ব প্রান্তটি একসময় পশ্চিমের হাওয়া বদলের জায়গা ছিল। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা রওনা হলাম উস্রি জলপ্রপাতের পথে। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পার হলেই ঝাড়খণ্ড রাজ্য। ধানবাদের কিছুটা আগে গোবিন্দপুর। সেখান থেকে ডানদিকের রাস্তাটি ‘প্রোফেসর শঙ্কু’-র (সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট চরিত্র) বাড়ি গিরিডি শহরের দিকে চলে গিয়েছে। দু’পাশের জঙ্গলে নানারকম বৃক্ষরাজি। বেশ কিছুটা এগিয়ে রাস্তার বাঁদিকে একটা লাল তোরণ। সেই পথে সোজা গেলে উস্রি ফলস। জলপ্রপাতের পথে সুন্দর এই রাস্তাটিতে জনবসতিও বেশ কম। একটু পরেই বাঁদিক ঘুরে পৌঁছে গেলাম বহু কাঙ্ক্ষিত উস্রি ফলস-এর কাছে। পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে একটু এগলেই ওয়াচটাওয়ার। সামনে বেশ কিছু ছোটখাট খাওয়ার জায়গা। ঝালমুড়ি, চপ, ফুচকা ইত্যাদির স্টল রয়েছে চারপাশে। ওয়াচটাওয়ার থেকেই জলপ্রপাত দেখা যায়, কোনওরকম সিঁড়ি ভাঙার দরকার পড়ে না।
আবার পাথর টপকে যাওয়াও যায় জলপ্রপাতের আরও কাছে।
উস্রি শব্দটির অর্থ বিউটিফুল সোর্স বা সুন্দর উৎস। এটি বরাকর নদের একটি উপনদী। এখানে উস্রি নদী খাড়া গিরিপথের বাঁক দিয়ে বয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তার স্রোত রুদ্ধ হয়। সংকীর্ণ গিরিপথ দিয়ে এঁকেবেঁকে নামতে গিয়ে প্রবল বেগে নদীর জল পাহাড়ের গা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নীচে। নীচে পাথরের ফাঁকে নদী আবার নিজের পথ খুঁজে প্রবল গতিতে চলতে থাকে। মূলত তিনটি ধারায় জলপ্রপাত থেকে জল নেমে আসে। পাশে অজস্র পাথর ছড়ানো। সেই পাথরেও
চোখে পড়ে জলের ক্ষয়কার্যের অপূর্ব রূপ। রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠে শ্রাবণ মাসের বাদল দিনে ‘উশ্রী নদী’র দুরন্ত ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। বর্ষার সময় গেলে পাহাড়ি ঝর্ণার উচ্ছল রূপ প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। প্রবল
শব্দে আছড়ে পড়ে ঝর্ণাটি পাহাড়ে
ধাক্কা খেয়ে গুঁড়িগুঁড়ি জলকণা
চারদিকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। কিন্তু আমরা গিয়েছিলাম ডিসেম্বর মাসে। তখন জল কম তবে তারও নিজস্ব একটা সৌন্দর্য ছিল। চারপাশে প্রচুর গাছপালা, বেশ শান্ত পরিবেশ। যেটুকু যা আওয়াজ হচ্ছে সবই পর্যটকদের দ্বারা। প্রকৃতি এখানে নিজের রূপ ঢেলে দিয়েছে। জলের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে ছোট ছোট টিলা। শীতকালে প্রচুর পিকনিক পার্টির ভিড়, পরিচ্ছন্নতার বেশ কিছুটা অভাব লক্ষ করা যায়।
পরের গন্তব্য খান্ডোলি পাহাড় ও সেই সংলগ্ন ড্যাম। দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। অনেক স্বনামধন্য মানুষের সঙ্গে গিরিডি শহরের যোগাযোগ ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় প্রমুখ। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু এখানেই মারা যান। তাঁর আবাসটি বর্তমানে বিজ্ঞান কেন্দ্র নামে পরিচিত।
গিরিডি শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে খান্ডোলি পাহাড় ও ড্যাম। পাহাড়ে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি করা আছে। ওয়াচটাওয়ারও আছে। ওপর থেকে ড্যামের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। খান্ডোলি পাহাড়ে নানারকম অ্যাডভেঞ্চার কোর্স যেমন রকক্লাইম্বিং, র্যাপেলিং, রিভার ক্রুজিং ইত্যাদির ট্রেনিং দেওয়া হয়। পাশেই বরাকর নদের উপনদী উস্রি নদীর ওপর খান্ডোলি ড্যাম। এটি মূলত গিরিডি শহরের জল সরবরাহের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। খান্ডোলি ড্যাম এবং পাহাড়কে ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। শীতকালে পর্যটক এবং পিকনিক পার্টির ঢল
নামে এখানে। পর্যটকদের চাহিদা পূরণের জন্য অসংখ্য খাবারের দোকান, কী না পাওয়া যায় সেখানে! খান্ডোলি ড্যামটিও ও বেশ বিস্তৃত। সাধারণ পর্যটকদের জন্য প্যাডেল বোট, স্পিডবোটের ব্যবস্থা আছে। সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য স্কুবা ডাইভিং, রাফটিং, ক্যানোয়িং, ওয়াটার স্কিইংয়েরও ব্যবস্থা আছে।
প্রতিবছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে খান্ডোলি ড্যামে আসে শীতের সময়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাইবেরিয়ান হাঁস, সাইবেরিয়ান ক্রেন, সেলডাক, ম্যালাড প্রভৃতির পাখি। উষ্ণ জলবায়ুর জন্য প্রতিবছর নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় সাইবেরিয়ার পাখিদের আনাগোনা। এবং শীতের শেষে আবারও তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়। প্রায় ৪০টি ভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে আসে। ড্যামের পাশে ছোটদের একটি বিনোদন পার্ক
তৈরি করা হয়েছে। সেখানে
ছোটদের বিনোদনের নানা উপাদান মজুত আছে।
এর সঙ্গে দেখে নেওয়া যেতে পারে বুড়াই পাহাড়। খান্ডোলি ড্যাম থেকে বুড়াই পাহাড়ের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এটির গঠন অনেকটা যেন আগ্নেয়গিরির মতো। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে রকম পাথরের সৃষ্টি হয়, এটির গঠন অনেকটা সেইরকম। এখানে প্রাকৃতিক গুহার মধ্যে মাতা বুড়েশ্বরীর মন্দির আছে। সঙ্গে একটি লেকও আছে। পাহাড়ের ওপরেও একটি মন্দির আছে। নীচে বয়ে চলেছে পত্রানদী। সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সারাটা দিন খুব সুন্দর কাটিয়ে সন্ধেবেলা রওনা দিলাম বাড়ির দিকে।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে ধানবাদ রেলওয়ে স্টেশন।
সেখান থেকে গাড়ি করে উস্রি
ফলস এবং সংলগ্ন জায়গাগুলো ঘুরে নেওয়া যায়। সরাসরি গাড়ি করেও একদিনেই ঘুরে আসা যায় এইসব পর্যটনস্থল। আসানসোল থেকেও গাড়ি নিয়ে সকালে বেরিয়ে রাতে ফিরতে পারেন।
বিশ্বরূপ মৈত্র
tags
অমৃত কথা
-
দৃষ্টি
- post_by বর্তমান
- জুলাই 18, 2025
এখনকার দর
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুলাই 18, 2025