রবিবার, 20 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

এই সিস্টেমে অগ্নিকাণ্ড ঠেকানো যাবে? চরম আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

 দৃশ্য ১: ধর্মতলার নিউ মার্কেট। পাশাপাশি রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি পুরনো ‘হগ মার্কেট’ এবং নিউ মার্কেটের নতুন বিল্ডিং। কিন্তু কোনওটাতেই আধুনিক মানের পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।

এই সিস্টেমে অগ্নিকাণ্ড ঠেকানো যাবে? চরম আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দৃশ্য ১: ধর্মতলার নিউ মার্কেট। পাশাপাশি রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি পুরনো ‘হগ মার্কেট’ এবং নিউ মার্কেটের নতুন বিল্ডিং। কিন্তু কোনওটাতেই আধুনিক মানের পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। পুরনো বিল্ডিংয়ে কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। তবে বড় আগুন লাগলে তা কতটা কাজ করবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দোকানদারদের। অন্যদিকে নিউ মার্কেটের নতুন বিল্ডিংয়ে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের পাইপলাইন, স্প্রিংকলার বহু বছর আগে বসানো হয়েছিল। সেগুলি কর্মক্ষম কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ব্যবসায়ীদের। বিমল সাউ নামে জামাকাপড়ের এক দোকানদার বলেন, ‘যখন এই সিস্টেম তৈরি হয়েছিল তখন পরীক্ষা করে দেখা হয়। কিন্তু তারপর আগুন লাগেনি বলে সেগুলি কাজে আসেনি। পুরসভাও কখনও এগুলি কর্মক্ষম কি না তা পরীক্ষা করে দেখেনি।’ অজয় নামে অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে কি হবে! পুরসভা গত দু’বছর ধরে দোকানের ভাড়া বাড়িয়েছে। কিন্তু পরিষেবা কোথায় পাচ্ছি আমরা? আগুন লাগলে বড় অঘটন ঘটে যাবে।’ 
দৃশ্য ২: দক্ষিণ কলকাতায় গড়িয়াহাট পুর-বাজারের ছবিটাও আলাদা নয়। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, আধুনিক ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা তো দূরের কথা, অনেক জায়গাতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র পর্যন্ত নেই। অমল সাহা নামে সব্জি বাজারের এক দোকানদার বলেন, ‘এখানে দুটো অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল। সেটিও কয়েক সপ্তাহ আগে খুলে নিয়ে গিয়েছে। কোথাও স্মোক অ্যালার্ম বা আগুন লাগলে উপর থেকে জল ছড়িয়ে পড়বে এমন ব্যবস্থাও নেই। খিদিরপুরের ঘটনার কথা শুনে আমাদের এখানে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।’ বাজারের দোতলার কয়েকটি জায়গায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। সেগুলি আপডেটেড। কিন্তু বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা দিয়ে আটকানো সম্ভব হবে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। 
দৃশ্য ৩: মধ্য কলকাতার এন্টালি মার্কেটেরও একই ছবি। এদিন ঘুরে ঘুরে দু’টি মাত্র অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের দেখা মিলেছে। সেগুলি কর্মক্ষম কি না তা স্পষ্ট নয়। সিলিন্ডারের গায়ে স্টিকার প্রায় উঠে গিয়েছে। অটল দাস নামে এক দোকানদার বলেন, ‘নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? খিদিরপুরে যা হল এখানে সেরকম কিছু ঘটলে তো সব শেষ হয়ে যাব। আতঙ্কের মধ্যেই থাকছি।’
উল্লেখ্য, এই বাজারগুলি শুধু নয়, কলকাতা পুরসভার হাতে থাকা ৫২টি বাজারের অধিকাংশের মধ্যেই আধুনিক মানের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্র রাখা আছে বটে কিন্তু সেগুলি কর্মক্ষম কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই। খিদিরপুরের ঘটনার পর চরম আতঙ্কে আছেন তাঁরা। 
এবিষয়ে কলকাতা পুরসভার বক্তব্য, কয়েকটি বাজারে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সব মার্কেটে আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সব জায়গায় পর্যাপ্ত আছে। নিয়মিত চেক করা হয়। আপডেট রয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, বাজারের দোকানদারদের থেকে ভাড়া বাবদ যে টাকা পুরসভা পায় তার তুলনায় বাজারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহুগুণ বেশি। অনেকে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া দেন। ভাড়াবৃদ্ধির সুযোগ নেই। তবে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরসভা বদ্ধপরিকর। যদিও পুরসভার বাজার বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, কয়েক বছর আগে পুর-বাজারগুলিতে ফায়ার অডিট করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দমকলকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিউ মার্কেটের নতুন বিল্ডিংয়ে যেমন আধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম রয়েছে, সব পুর-মার্কেটে তা করা যায়নি।

রাশিফল