বৃহস্পতিবার, 19 জুন 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

বার্তা স্পষ্ট, জারিজুরি খাটবে না

পহেলগাঁওয়ে গণহত্যার পর ভারত-পাক সংঘর্ষ স্থায়ী হয়েছে মাত্র চারদিন। ৭ থেকে ১০ মে। এই ১০০ ঘণ্টায় ভারত এক ঢিলে কতগুলি পাখি মারতে সক্ষম হল, তা নিয়ে নতুন করে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

বার্তা স্পষ্ট, জারিজুরি খাটবে না

পহেলগাঁওয়ে গণহত্যার পর ভারত-পাক সংঘর্ষ স্থায়ী হয়েছে মাত্র চারদিন। ৭ থেকে ১০ মে। এই ১০০ ঘণ্টায় ভারত এক ঢিলে কতগুলি পাখি মারতে সক্ষম হল, তা নিয়ে নতুন করে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। তথ্য বলছে, ওই চারদিনে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতেও অবলীলায় তাণ্ডব চালিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। কিন্তু এই আঘাত শুধু জঙ্গি পরিবৃত পাকিস্তানই নয়, বিঁধেছে চীনকেও। কারণ, মূলত চীনা সমরাস্ত্রের কাঁধে ভর করেই ভারতের মোকাবিলায় নেমেছিল পাকিস্তান। আকাশযুদ্ধে তাদের আরেক সহযোগী ছিল তুরস্ক। এই ত্রিশক্তির মিলিত প্রতিরোধ প্রায় একতরফাভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ভারতের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস দেখাবে কি না সন্দেহ। শুধু চীন তো নয়, এই চারদিনের লড়াইয়ের শেষে বোধহয় বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলার বার্তা দিল সফল ভারত। এশিয়ার পড়শি দুই দেশের সংঘর্ষ বিরতির আগাম ঘোষণা থেকে শুল্কহীন বাণিজ্যের দাবি, পাক অধিকৃত কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ হয়ে মধ্যস্থতার ইচ্ছা প্রকাশ, ভারতের মাটিতে অ্যাপেল সংস্থাকে আইফোন তৈরি করতে নিষেধ করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েকদিনে যা বলেছেন বা দাবি করেছেন— তার প্রতিটির সমুচিত জবাব দিয়ে নয়াদিল্লি বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারত আর কারও ‘দাদাগিরি’ মানবে না। এখন থেকে যা হবে, তা ভারতের ষোলোআনা স্বার্থরক্ষা করেই হবে। তার মানে, ঢিল সরাসরি পাকিস্তানের গায়ে লাগলেও তার অভিঘাত টের পেয়েছে বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশ আমেরিকা ও চীন। 
বহুকালের ‘মিথ’ ছিল, পাকিস্তানে আঘাত হানলেই ভারতকে চীনের কোপে পড়তে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর ধাক্কা শুধু পাকিস্তানকে বিদ্ধ করেনি, লেগেছে বেজিংয়ের বুকেও। কারণ, পাক সেনার অন্তত ৮০ শতাংশ সমরাস্ত্রই চীন থেকে ভিক্ষা পাওয়া অথবা আমদানিকৃত। যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। চারদিনের আকাশযুদ্ধে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে ব্যর্থ হওয়া চীনা অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন-বিদ্রুপ শুরু হয়েছে। যেমন, ৭ মের মধ্যরাতে জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য  করে ভারতের বিমানহানা ঠেকাতে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র পিএল-১৫ ব্যবহার করে পাকিস্তান। কিন্তু বেজিংয়ের ওই অস্ত্র বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি। এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি যেসব যুদ্ধ বিমানে ব্যবহার করার জন্য তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে জেএফ-১৭ রয়েছে পাকিস্তানের হাতে। কিন্তু মাঝআকাশে লড়াইয়ের সময় চীনের অস্ত্রের যাবতীয় কারিকুরি মুখ থুবড়ে পড়ে। শুধু পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র নয়, চীনের তৈরি দুটি জেএফ-১৭ যুদ্ধ বিমানও উড়িয়ে দেয় ভারতের বিমানবাহিনী। ৮ এবং ৯ মের রাতে লাহোরের আকাশে চীনের তৈরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এইচকিউ-৯ পি ধ্বংস করে দেয় ভারতীয় ড্রোন। ঘটনা হল, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ভারতের স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ও হ্যামার বোমার হামলা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয় চীনের ওই এইচকিউ-৯ পি ব্যবস্থা। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তা হল, ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর ‘মেড ইন চায়না’ লেখা যুদ্ধ সরঞ্জামের চাহিদা হু হু করে কমতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। পক্ষান্তরে পৃথিবীর অনেক দেশই এখন ভারতীয় যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনতে নাকি আগ্রহ দেখাচ্ছে। চীনকে টক্কর দিতে পেরে স্বভাবতই গর্বিত ভারত ভুয়ো প্রচার ঠেকাতে বেজিংয়ের সরকারি সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইম’ ও সংবাদ সংস্থা ‘জিনহুয়া’-এর এক্স হ্যান্ডেল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যদিও পরে টানা কূটনৈতিক দৌত্যের পর চীনা সংবাদ মাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। 
পাকিস্তানকে ‘বোড়ে’ করে ভারতকে ‘সবক’ শেখাতে গিয়ে হাত পুড়েছে চীনের। আর এই সুযোগে ‘পাকিস্তানকে গুরুঠাকুর’ ভেবে ভারতকে ‘শিক্ষা’ দিতে গিয়েছিল আরেক দেশ তুরস্ক। সংঘর্ষের চারদিনে আকাশপথে তুরস্কের কয়েকশো ড্রোনকে ‘ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে’ ছেড়েছে ভারত। অথচ ২০২৩-এ টার্কিতে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর ‘অপারেশন দোস্ত’-এর আওতায় কয়েকশো ভারতীয় কর্মী, ওষুধ ও জরুরি জিনিসপত্র পাঠিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। কোভিডের পর সেদেশে ভারতের রপ্তানিও বেড়েছে কয়েকগুণ। সেই তুরস্কের এমন বেইমানির জবাব সুদে আসলে মিটিয়ে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি এমন অকৃতজ্ঞ দেশের সঙ্গে পর্যটন, চলচ্চিত্র, বাণিজ্য শিক্ষা ও সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেছে দিল্লি। এক কথায় তুরস্কের সঙ্গে যে কোনও সম্পর্কে ইতি টেনে দিচ্ছে ভারত। সব মিলিয়ে চারদিনের সংঘর্ষ বুঝিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে ভারতকে কেউ ঘাঁটাতে এলে নিজেদের ঘেঁটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।