ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
শৌনক বললেন, হে সূত, অশ্বত্থামা অতি তেজস্কর ও ভয়ানক ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তরার গর্ভস্থ সন্তানকে ধ্বংস করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে পুনর্জীবিত করেন।
শৌনক বললেন, হে সূত, অশ্বত্থামা অতি তেজস্কর ও ভয়ানক ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তরার গর্ভস্থ সন্তানকে ধ্বংস করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে পুনর্জীবিত করেন। মহৎ ও অতিবুদ্ধিমান পরীক্ষিতের জন্ম-কর্ম ও মৃত্যু যেমন ভাবে সংঘটিত হয়েছিল এবং মৃত্যুর পরে কেমন ভাবেই বা তিনি ভগবদ্চরণে মিলিত হয়েছিলেন—সেইসব বৃত্তান্ত (শোনাও)।
ব্যাসপুত্র শুকদেব পরীক্ষিৎকে যেসব জ্ঞানোপদেশ দিয়েছিলেন, সেগুলি আমরা শুনতে ইচ্ছা করি। যদি তুমি আমাদের উপযুক্ত মনে কর, তাহলে শ্রদ্ধাপরায়ণ আমাদের কাছে তুমি বল। আমরা শ্রবণোৎসুক।
সূত বললেন, সর্বদা কৃষ্ণের চরণকমল সেবা করে সকল কাম্যবস্তু থেকে বিগতস্পৃহ হয়ে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির পিতার ন্যায় প্রজাদের অনুরঞ্জিত করে পালন করেছিলেন।
হে শৌনকাদি ঋষিগণ, রাজৈশ্বর্য, অশ্বমেধাদি যজ্ঞ, স্বর্গাদিলোক, যোগ্যা মহিষী, বীরশ্রেষ্ঠ ভ্রাতাগণ, সমগ্র ধরিত্রী, জম্বুদ্বীপাধিপত্য, দ্যুলোকস্পর্শী যশ—দেববাঞ্ছিত এইসব ভোগ্যবস্তুর কিছুই ভগবান কৃষ্ণের একান্ত ভক্ত, অনন্যপরায়ণ যুধিষ্ঠিরের মনে কোন তৃপ্তিবিধান করেনি। ক্ষুধার্ত ব্যক্তি অন্ন ব্যতীত অপর কোন বস্তুতে আকৃষ্ট হয় কি? হে ভৃগুনন্দন শৌনক, মাতৃজঠরে থাকার সময় অশ্বত্থামা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত ব্রহ্মাস্ত্র-তেজে দগ্ধ হয়ে ধ্বংসপ্রায় সেই বীরশিশু পরীক্ষিৎ এক পুরুষকে দর্শন করেছিলেন। পরীক্ষিৎ মাতৃজঠরে থাকার সময়েই অঙ্গুষ্ঠপরিমাণ, নির্মল, স্বর্ণমুকুড়ধারী, দিব্যকান্তি, পীতবাস ও শ্যামবর্ণ অচ্যুতকে দর্শন করেছিলেন। শ্রীমান্, আজানুলম্বিত চতুর্বাহু, স্বর্ণকুণ্ডলশোভিত, আরক্তচক্ষু, উল্কাপিণ্ডের ন্যায় জ্বলন্ত, চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান গদা হস্তে এক পুরুষকে পরীক্ষিৎ দর্শন করেছিলেন।
সূর্য যেমন নিজ তেজের দ্বারা হিমপুঞ্জ ধ্বংস করে, সেইরূপ নিজ গদার সাহায্য ব্রহ্মাস্ত্রতেজকে বিনাশ করছেন—এমন এক পুরুষকে নিজের নিকটে দেখে পরীক্ষিৎ চিন্তা করতে লাগলেন—ইনি কে? অচিন্ত্যস্বরূপ, ধর্মরক্ষক ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাস্ত্রতেজ প্রশমন করে গর্ভে দশমাস স্থিত পরীক্ষিতের দৃষ্টির সম্মুখে গর্ভমধ্যেই অন্তর্হিত হলেন। অতঃপর প্রকৃতির মধ্যে গুণসমূহ যখন পূর্ণবিকাশ লাভ করল এবং গ্রহাদি শুভ ও অনুকূল অবস্থা প্রাপ্ত হলো তখন দ্বিতীয় পাণ্ডুতুল্য তেজস্বী পরীক্ষিৎ জন্মগ্রহণ করলেন। সুলক্ষণ পৌত্রলাভ করে উৎফুল্লহৃদয় যুধিষ্ঠির ধৌম্য, কৃপাচার্য প্রভৃতি সদ্ব্রাহ্মণের দ্বারা স্বস্তিবাচনসহ নবজাতকের জাতকর্ম অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন।
পরিক্ষীতের ন্যায় পৌত্রলাভ করায় অতি সন্তুষ্ট ও যথার্থ দানকাল সম্বন্ধে অভিজ্ঞ যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণকে সুবর্ণ-গাভী-ভূমি-গ্রাম-অতি উৎকৃষ্ট হস্তি-অশ্ব, স্বাদু, ভোজ্য প্রভৃতি বিবিধ দ্রব্য দান করলেন। সন্তুষ্টমনা ব্রাহ্মণগণ বিনয়াবনত রাজা যুধিষ্ঠিরকে বললেন, হে পৌরবর্ষভ, অনিবার্য দৈবদুর্বিপাকে পবিত্র পুরুবংশ ধ্বংসোন্মুখ হলে অচিন্ত্য শ্রীভগবান কৃপা করে এই শিশু আপনাদের প্রদান করেছেন।
অধ্যাপিকা গীতা মাইতি অনুদিত ‘শ্রীমদ্ভাগবতম্’ থেকে
