শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সুরক্ষা কবচ

রাত প্রায় একটা। ঘরে তিনটি নিথর দেহ। ট্যাংরার শীল লেনের দে বাড়ির গ্যারাজ থেকে বেরিয়ে এল গাড়ি। চালকের আসনে ছোটভাই প্রসূন। পাশে নাবালক ভাইপো। আর পিছনের সিটে বড়ভাই প্রণয় দে।

সুরক্ষা কবচ

কোহিনূর কর: রাত প্রায় একটা। ঘরে তিনটি নিথর দেহ। ট্যাংরার শীল লেনের দে বাড়ির গ্যারাজ থেকে বেরিয়ে এল গাড়ি। চালকের আসনে ছোটভাই প্রসূন। পাশে নাবালক ভাইপো। আর পিছনের সিটে বড়ভাই প্রণয় দে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা এ রাস্তা ও রাস্তা ঘুরে, বুধবার ভোরবেলা বাইপাসের রুবি মোড় ও কালিকাপুরের মাঝামাঝি মেট্রোর পিলারে সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটা। তুবড়ে যায় বনেট। উইন্ডশিল্ড ভেঙে চৌচির। ফেটে যায় এয়ার ব্যাগও। গাড়িতে থাকা তিনজনই গুরুতর জখম। দিনকয়েক আগে ঘটে যাওয়া এই ‘দুর্ঘটনা’ থেকে সামনে আসে তিনটি মর্মান্তিক হত্যার কাহিনি। সে প্রসঙ্গ অবশ্য এখানে আলোচ্য নয়। কিন্তু আধুনিক গাড়িতে সিটবেল্ট ও এয়ার ব্যাগ থাকার সুবাদে প্রাণে বেঁচে যান প্রণয়-প্রসূন এবং বড় ভাইয়ের নাবালক পুত্র।
অত্যাধুনিক গাড়ি বা এয়ার ব্যাগ থাকলেই যে দুর্ঘটনায় প্রাণরক্ষা হবে, এমনটা নয়। বর্তমানে অনেক নতুন মডেলের গাড়িতে সিটবেল্ট না পরলে দুর্ঘটনার সময় এয়ার ব্যাগ খোলে না। ঠিক সেটাই ঘটেছিল টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির ক্ষেত্রে। বছর আড়াই আগে মহারাষ্ট্রে পালঘরের কাছে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় তিনি প্রাণ হারান। গাড়িতে সাতটি 
এয়ারব্যাগ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর মৃত্যু হল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, পথ দুর্ঘটনায় মাথা ও শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে গুরুতর আঘাত লাগে সাইরাসের। ডাক্তারি 
ভাষায় যাকে বলা হয় ‘পলিট্রমা’। 
সাইরাসের গাড়ির পিছনের আসনে বসে থাকা সহযাত্রী জাহাঙ্গির পান্ডোলের মৃত্যুও হয় ওই কারণেই। জানা যায়, পিছনে বসা দুই আরোহী সিটবেল্ট পরেননি বলেই সম্ভবত এয়ারব্যাগ খোলেনি।
গাড়ি আমার। আমি চলব নিজের ইচ্ছেমতো। রাস্তাঘাটে এমন মনোভাব দেখা যায় বহু গাড়িচালকের মধ্যে। আর এই মানসিকতার আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে প্রাণঘাতী এক বিপদ। কখনও কখনও তা চালকের পাশাপাশি মারণ-বিপদ ডেকে আনে অন্যান্য যাত্রী বা পথচারীদের জীবনে। কতটা মারাত্মক হতে পারে এই মানসিকতা? একটু বিশ্লেষণ করলেই তা স্পষ্ট হবে। এই মুহূর্তে প্রায় সমস্ত গাড়িতেই সিলবেল্ট পরা বাধ্যতামূলক। না হলে অ্যালার্ম বাজতে থাকে। কিন্তু অনেকেই এক ধরনের বিশেষ যন্ত্র বা ক্লিপ বসিয়ে সেই অ্যালার্ম বন্ধ করে রাখেন। যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই যন্ত্র বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তার পরেও গোপনে চলছে বিকিকিনি। কিন্তু শব্দ-যন্ত্রণা এড়ানোর এই যন্ত্রই যে প্রাণ কেড়ে নিতে পারে, সেকথা মাথায় রাখেন না গাড়িচালকরা। আর সেই কারণেই বারবার পুনরাবৃত্তি হয় ইতিহাসের।
অথচ উড়ানের ক্ষেত্রে কারও অসুবিধা হয় না। বিমানে ওঠা বা নামার সময় প্রত্যেক যাত্রী ও কর্মীদের সিটবেল্ট লাগানো বাধ্যতামূলক। বিমানের পেটে বসা অবস্থায় আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি, ওঠার সময় সারা শরীর পেছনে হেলে যায়। আর নামার সময় শরীরটা সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আবার দিক পরিবর্তনের সময় বিমানের 
দু’টি ডানা উপর-নীচ হতে থাকে। বিমান সংস্থা কখনওই চায় না যে, কোনও যাত্রী বা কর্মচারী মাঝআকাশে সিট থেকে ছিটকে গিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটায়। তাই উড়ন্ত অবস্থায় বেশিরভাগ সময় সিটবেল্ট পরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু রাস্তায় চলা গাড়ির ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। গতিবেগের অনুপাতে চালক-যাত্রী সহ গাড়ির ওজন একটি নির্দিষ্ট ভরবেগ (মোমেন্টাম) তৈরি করে। গাড়ির গতিবেগ যত বেশি হয়, প্রত্যেকের ভরবেগও তত বাড়ে। সাধারণত গাড়িতে চলাচলের সময় একথা আমাদের মাথায় আসে না। কিন্তু সেটি যদি প্রচণ্ড গতিতে রাস্তার ধারে কোনও পোল বা গাছে ধাক্কা মারে? কী হয় তখন? গাড়ি আচমকা থেমে যায়। কিন্তু চালক ও যাত্রীদের ভরবেগ সেই মুহূর্তে একই থাকে। সিটবেল্ট না লাগানো থাকলে, সেই ভরবেগের প্রভাবে সিট থেকে ছিটকে, গাড়ির কাচ ভেঙে শরীরটা কোথায় গিয়ে পড়বে, কেউ বলতে পারে না। এরকম দুর্ঘটনা হাইওয়েতে ভূরি ভূরি ঘটে। সেই কারণে সিটবেল্ট যে প্রাণ বাঁচায়, একথা একবাক্যে স্বীকার করেন আধুনিক গাড়ি নির্মাতা আর চালকরা।
কিন্তু মুখে স্বীকার করলে কী হবে, বাস্তবে রাস্তায় এই ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় না। অথচ গাড়ি আর সিটবেল্টের ইতিহাস কিন্তু হাতে হাত ধরাধরি করেই চলেছে। সেই ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে অবশ্য প্রথমেই প্রায় দুশো বছর পিছিয়ে যেতে হবে। যদিও গাড়িতে সিটবেল্টের প্রকৃত ব্যবহার শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক দশক আগে। গত শতাব্দীর সাত কিংবা আটের দশকেও খোদ আমেরিকায় এই সুরক্ষা-কবচের ব্যবহার ছিল ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের নামান্তর। ভারত কিংবা অন্য দেশের কথা না বলাই ভালো। তবে আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে মার্কিন মুলুকে একের পর এক প্রদেশের সরকার সিটবেল্টের ব্যবহার আইনত বাধ্যতামূলক করে দেয়। তার ফল হিসাবে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারও পাল্লা দিয়ে কমে যেতে থাকে। মার্কিন ন্যাশনাল সেফটি কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিটবেল্ট ব্যবহারের ফলে প্রায় চার লক্ষ যাত্রীর প্রাণ বেঁচেছে। বছরদুয়েক আগের সমীক্ষা বলছে, আমেরিকায় সিটবেল্ট ব্যবহারের হার প্রায় ৯২ শতাংশ। তাও সেদেশে সিটবেল্টহীন যাত্রী মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ। একথা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে!
ইতিহাস বলছে গাড়িতে সিটবেল্টের ধারণা এসেছে বিমান থেকেই। সৌজন্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার— স্যার জর্জ কেইলি। বিমান পাইলটের সিটবেল্ট উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি। শোনা যায়, রাইট ব্রাদার্সের উড়া঩নেরও বছর পঞ্চাশেক আগে এই কেইলিই প্রথম সফল গ্লাইডারটি তৈরি করেছিলেন। সেই ১৮৫৩ সালে। পাইলটের নিরাপত্তার কথা মাথায় ছিল তাঁর। সেই সুবাদেই প্রথম ল্যাপবেল্ট উদ্ভাবন। যদিও যাত্রীদের জন্য এহেন সুরক্ষা-কবচের পেটেন্ট নেওয়ার সুযোগ ছিল না তাঁর সামনে। গ্লাইডার আবিষ্কারের বছর চারেকের মধ্যেই প্রয়াত হন কেইলি। সেই পেটেন্ট ইস্যু হতে হতে লেগে যায় আরও প্রায় ৩০ বছর। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা এড ক্ল্যাগহর্ন ১৮৮৫ সালে 
প্রথম গাড়ির সিটবেল্টের পেটেন্ট পান। ট্যাক্সিতে চলাচলকারী যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেই স্ট্র্যাপ-জাতীয় সিটবেল্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তারও বেশ কয়েক বছর বাদের কথা। ততদিনে মার্কিন মুলুকে ইন্ডি ৫০০ গাড়ির রেসিং শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্রুত গতির সেই রেসে চালকদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হয় ১৯২২ সালে। এক প্যারাস্যুট কোম্পানিকে দিয়ে ডিজাইন করানো হয় একধরনের সিটবেল্টের। ওল্ডফিল্ড দেখেছিলেন, অনেক ইন্ডি ৫০০ ড্রাইভার ভীষণভাবে জখম হয়েছেন, এমনকী মারাও গিয়েছেন গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে। কিন্তু তখন সিটবেল্টের কোনও ব্যবহার ছিল বলে জানা যায়নি। আবার পরে অনেকেরই ধারণা ছিল, ইন্ডি ৫০০-এ সিটবেল্ট না থাকলে দুর্ঘটনার পর গাড়ির ভিতরে আটকে থেকে, আগুনে ঝলসে চালকের মৃত্যু এড়ানো যেত। ফলে সেই অর্থে এই সুরক্ষা-কবচ নিয়ে তখন সংশয় ছিল জনমানসে। 
গত শতাব্দীর চারের দশকে যখন ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পথে, সেই সময় মার্কিন মুলুকে সিটবেল্ট নিয়ে রীতিমতো তর্ক-বিতর্ক চলছে। সেই বিতর্ক খানিকটা কোভিডের সময় মাস্ক পরার মতোই। অনেক মার্কিনিই মনে করতেন, সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক হওয়াটা নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ। কিন্তু আমেরিকায় গাড়ির দুর্ঘটনায় মৃত্যুসংখ্যা যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন বহু মানুষের সেই ব্যক্তিগত মত পাল্টাতে শুরু করে। শেষমেশ সিটবেল্টের যুগান্তকারী উদ্ভাবন ঘটে ১৯৫৯ সালে। সুইডিশ ইঞ্জিনিয়ার নিলস বোহলিন প্রথমবার থ্রি-পয়েন্ট সিটবেল্ট উদ্ভাবন করেন। তিনি তখন বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা সংস্থা ‘ভলভো’র চিফ সেফটি ইঞ্জিনিয়ার। এতদিন টু-পয়েন্ট সিটবেল্ট শুধু ‘প্যাসেঞ্জার ল্যাপ’ সুরক্ষিত করত। আর বিমানের পাইলটের জন্যে উপযোগী ফোর-পয়েন্ট সিটবেল্ট গাড়িতে ব্যবহার করা যেত না। সেই সমস্যার সমাধান করেন বোহেলিন। দিনটা ১৯৫৯ সালের ১৭ আগস্ট। নিজের থ্রি-পয়েন্ট সিটবেল্টের পেটেন্টের জন্য আবেদন জমা দেন ইউনাইটেড স্টেটস পেটেন্ট অফিসে। 
কেমন ছিল সেই সিলবেল্ট? পেটেন্টে উল্লেখ করা হয়— ‘নতুন এই উদ্ভাবনের উদ্দেশ্য হল একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রদান করা। সেটি শুধু সিটকেই গাড়ির সঙ্গে আটকেই রাখবে না, বরং আসনে বসা মানুষের জন্য শারীরিকভাবে কোনও অস্বস্তি সৃষ্টি করবে না। যাত্রীর ঊর্ধ্বাঙ্গ এবং নিম্নাঙ্গ উভয়কে সুরক্ষিতও রাখবে। আঘাতের ঝুঁকি কমাবে। বেল্টটি বাঁধা এবং খোলার জন্য সহজভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এতে ব্যবহারকারীরও সুবিধা হবে।’ অর্থাৎ থ্রি-পয়েন্ট সিটবেল্ট ডিজাইন সব দিক দিয়ে কার্যকরী ধার্য করা হয়। বোহলিনের পেটেন্ট (নম্বর ৩০৪৩৬২৫) অনুমোদন লাভ করে ১৯৬২ সালের ১০-ই জুলাই।
বোহলিনের থ্রি-পয়েন্ট সিটবেল্ট প্রথম প্রয়োগ করা হয় তাঁরই কোম্পানির ভলভো পিভি৫৪৪ গাড়িতে। সংস্থাটি কোনও অর্থের বিনিময় ছাড়াই সেই সিটবেল্টের ডিজাইন অন্যান্য গাড়ির কোম্পানিগুলিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল। এর একমাত্র কারণ ছিল সামগ্রিকভাবে যাত্রী নিরাপত্তা। সেই থেকে ২০০২ সালে বোহলিনের মৃত্যু পর্যন্ত, মাত্র চল্লিশ বছরে এই থ্রি-পয়েন্ট সিটবেল্ট দুনিয়াজুড়ে ১০ লক্ষেরও বেশি যাত্রীর প্রাণরক্ষা করেছে।  
আমেরিকা সর্বপ্রথম উইসকনসিন প্রদেশের প্রশাসনই সব নতুন গাড়ির সামনের আসনগুলিতে সিটবেল্ট লাগানো বাধ্যতামূলক করে। সেটা ১৯৬১ সাল। তবে যাত্রীদের সিটবেল্ট পরতেই হবে এরকম কোনও আইন তখন ছিল না। সাত বছর পরে আমেরিকায় ফেডেরাল আইন চালু হল— সব নতুন গাড়িতে ‘ল্যাপ আর শোল্ডার বেল্ট’ লাগাতে হবে। ১৯৭৩ সালে আবার সিটবেল্ট ইন্টারলক নামে এক অদ্ভুত নিয়ম চালু করা হল। ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্র্যাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বাতলাল যে, গাড়িতে বসে সিটবেল্ট না লাগালে গাড়ি স্টার্টই নেবে না। আম জনতা এই নিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনায় সরব হয়। সেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে গেল। ১৯৮৩ সালে সিটবেল্ট আইন গেল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে। গাড়ির কোম্পানিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন।  সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আনা বাধ্যতামূলক সিটবেল্ট আইনও চালু হতে দিলেন না। ওদিকে বিমা সংস্থাগুলি যাত্রী নিরাপত্তার জন্যে সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিরুদ্ধে কোর্টে গেল। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য সব সওয়াল-জবাব শেষে আইন বহাল করার নির্দেশ দেয়। সেটা ছিল পরিবহণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা বিশাল সাফল্য।
১৯৮৫ সালে নিউ ইয়র্ক প্রথম প্রদেশ হিসেবে গাড়ির সামনে বসা সকল যাত্রীর (ড্রাইভার ও সহ-যাত্রী) সিটবেল্ট পরে চলা বাধ্যতামূলক করে। এই আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা হয়। এখন পিছনের সিটেও সিটবেল্ট লাগানোর আইন চালু আছে। সিটবেল্ট না পরা অবস্থায় কেউ ট্রাফিক পুলিসের নজরে পড়লে বা সিটবেল্ট না লাগানো অবস্থায় কোনও পথ-দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়লে কঠিক শাস্তি দেওয়ার অনেক আইন আছে। কিন্তু সাধারণ নাগরিকদেরও এব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। না হলে যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় বিপদ এমনকী মৃত্যুর সম্ভাবনা।  
আজকের সব গাড়িতেই সিটবেল্ট আছে। গাড়ির সামনে হোক বা পিছনের আসন, চলাচলের পুরোটা সময় সিটবেল্ট অবশ্যই লাগিয়ে রাখা দরকার। একটা বয়স পর্যন্ত শিশুদেরও সবসময় গাড়ির পিছনের আসনে বসা, প্রয়োজনে তাদের দেহের ওজন অনুযায়ী বিশেষ কার-সিটে বসাও ভীষণ জরুরি। মোদ্দা কথা, একটা সামান্য একটা ক্লিক পারে এক বা একাধিক জীবন বাঁচিয়ে দিতে। তাই পথ নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ—‘ক্লিক ইট অর টিকিট?’ কোনও দেশে বা রাজ্যে সিটবেল্ট আইন থাকুক বা না থাকুক, দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার এই সহজ আর প্রমাণিত একটা উপায় যখন আমাদের জানা আছে, সেটাকে অভ্যাসে পরিণত করা কঠিন কিছু ব্যাপার না! এটা মাথায় রাখতে হবে। যতক্ষণ না গন্তব্যে পৌঁছনো যায়!

লেখক অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক 
গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
সহযোগিতায় : বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী