বৃহস্পতিবার, 15 মে 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

রুখে দিন দাঁতের ক্ষয়

রোগীরা প্রায়ই এসে আমাদের বলেন দাঁতে পোকা হয়েছে ডাক্তারবাবু। আসলে দাঁতে পোকা বলে কিছু হয় না। রোগী দেখেন দাঁতের উপর একটা কালো দাগ তৈরি হয়েছে। 

রুখে দিন দাঁতের ক্ষয়

পরামর্শে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জেন ডাঃ রাজু বিশ্বাস।

 

রোগীরা প্রায়ই এসে আমাদের বলেন দাঁতে পোকা হয়েছে ডাক্তারবাবু। আসলে দাঁতে পোকা বলে কিছু হয় না। রোগী দেখেন দাঁতের উপর একটা কালো দাগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যে দাঁতের যে তল বা অংশ দিয়ে আমরা খাবার চিবিয়ে খাই, সেই অংশে একটা কালো দাগ তৈরি হয়। এরপর তা অবহেলা করতে করতে একটা গর্ত বা হোল তৈরি হয়, আস্তে আস্তে তা মাড়ি পর্যন্ত চলে যায়। এরপরেই শুরু হয় ব্যথা।

বেশিরভাগ রোগীই দ্রুত ডাক্তারবাবুর কাছে আসেন ও প্রশ্ন করেন ডাক্তারবাবু কী করা যায়? সমস্যা হল দাঁতের গর্ত অনেকক্ষেত্রেই এমন জায়াগায় পৌঁছে যায় যে তখন আর দাঁতটিকে বাঁচানোর উপায় থাকে না। তবে আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে অবশ্যই দাঁতটিকে রক্ষা করা সম্ভব।

প্রশ্ন হল দাঁতে পোকা বিষয়টা কী? বিজ্ঞানসম্মতভাবে দাঁতে পোকা বলে কিছু নেই। তবে মুখগহ্বরে থাকে ব্যাকটেরিয়া। সেই ব্যাকটেরিয়ার কারণে দাঁতে ক্ষয় হয়ে দেখা যায় কেরিজ। তী কীভাবে হয়। মুখগহ্বরে থাকে লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া। সেই ব্যাকটেরিয়া দাঁতে আটকে থাকে খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এক ধরনের অ্যাসিড তৈরি হয় যা দাঁতের উপরের নিরাপত্তাপ্রদানকারী এনামেলকে নষ্ট করে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় গর্ত করে। এই হল ডেন্টাল কেরিজ।

কেরিজ হওয়ার লক্ষণ

১) দাঁতের উপর বাদামি বা কালো ছোপ।

২) দাঁতে দৃশ্যমান গর্ত

দাঁতের কেরিজ প্রতিরোধের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়—

•       নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে শোওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা।

•       সম্ভব হলে প্রতিদিন ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা উচিত।

•       শর্করাযুক্ত খাবার ও পানীয় কম খেতে হবে।

•       যে কোনও মিষ্টিজাতীয় খাবার ও পানীয় কম খাওয়া উচিত। খাওয়ার পরেই পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া দরকার। 

দাঁতের কেরিজের চিকিৎসা তার প্রাথমিক পর্যায়ে করা গেলে দাঁত রক্ষা করা সম্ভব। চিকিৎসা না করালে দাঁতের ব্যথা, সংক্রমণ এবং শেষ পর্যন্ত দাঁত পড়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন হল কেরিজ হলে তখন চিকিত্‍সা কী?

দাঁতের কেরজিজনিত গর্ত যদি এনামেল পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকে অথবা, এনামেলের পরবর্তী স্তর ডেন্টিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে ডেন্টাল ফিলিং করে দেওয়া হয় কিছু বিশেষ উপাদানের মাধ্যমে।

ফিলিং করে দিলে দাঁতের ক্ষয় বন্ধ হয়।

আগে সিলভার অ্যামালগাম নামক এক ধরনের ফিলিং মেটেরিয়াল দিয়ে ফিলিং করা হতো যা ছিল কালো রং-এর। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর আধুনিক অনেক ফিলিং মেটেরিয়াল এসেছে।

তবে এখন দাঁতের রং-এর সঙ্গে মিলিয়েই ফিলিং করা সম্ভব হচ্ছে। এই আধুনিক ধরনের ফিলিং দাঁতের ক্যাভিটি বা গর্ত যেমন পূরণ করে, তেমনই পুনরায় যাতে ক্যাভিটি না হয় তার ব্যবস্থাও করে। 

এর ফলে দীর্ঘ কয়েকবছর দাঁত ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয় না। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যের যত্নও নিতে হবে নিয়ম মেনে।

কখন ফিলিং নয়

কেরিজ শুরুর প্রাথমিকদিকে এলে ফিলিং করা যায়। দেরি করে এলে বা ব্যথা শুরু হয়ে গেলে তখন রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করাতে হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী এতখানিই দেরি করেন যে আরসিটি করার মতোও অবস্থা থাকে না। তখন দাঁত তুলে ফেলতে হয়।

লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক