মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

পাশবদ্ধ

প্রশ্ন হ’ল, অণু ও ভূমার মধ্যে মূলগত পার্থক্যটা কোথায়? বলা হয়েছে: “তয়োর্বিরোধোঽয়মুপাধিকল্পিতো ন বাস্তবঃ কশিচদুপাধিরেষ। ঈশাদ্যমায়া মহদাদিকারণং জীবস্য কার্যং শৃণু পঞ্চকোষম্‌।।” 

পাশবদ্ধ

প্রশ্ন হ’ল, অণু ও ভূমার মধ্যে মূলগত পার্থক্যটা কোথায়? বলা হয়েছে: “তয়োর্বিরোধোঽয়মুপাধিকল্পিতো ন বাস্তবঃ কশিচদুপাধিরেষ। ঈশাদ্যমায়া মহদাদিকারণং জীবস্য কার্যং শৃণু পঞ্চকোষম্‌।।” বলা হচ্ছে, এদের উভয়ের মৌল পার্থক্যটাই হ’ল গুণগত। তবে এই যে গুণগত বিশেষণের তারতম্য এটা কি শাশ্বত নয়? বরং এটা সাময়িক—অস্থায়ী। অর্থাৎ আজকে যে পার্থক্যটা চোখে পড়ছে পরবর্ত্তীকালে তা নাও থাকতে পারে। “ঈশাদ্যমায়া মহদাদিকারণম্‌”। এই যে গুণগত ভেদ এটা সাময়িক। আজ যা আছে কাল তা নাও থাকতে পারে। এও বলা হয়েছে, ‘পাশবদ্ধো ভবেজ্জীবঃ পাশমুক্তো ভবেচ্ছিবঃ’। মানুষ যতদিন পাশবদ্ধ ততদিন সে জীব (microcosm) আর যখন সে পাশের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে তখন সে আর বদ্ধ জীব থাকছে না, সে জীবত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত শিবের সঙ্গে মিলেমিশে শিবই হয়ে যাচ্ছে।
“ন বাস্তবঃ কশ্চিদুপাধিরেষ”। পুরুষ সত্তার ওপর প্রকৃতির প্রভাবের দরুণ, প্রাকৃত বন্ধনী শক্তির প্রভাবের দরুণ আমরা এই পরিদৃশ্যমান জগৎকে পাচ্ছি, আমরা ভাগজগৎকে পাচ্ছি, আবার ভূমা-মানসের অন্যান্য অভিব্যক্তিগুলোকেও পাচ্ছি।
“জীবস্য কার্যং শৃণু পঞ্চকোষম্‌”। জৈবী সত্তা পঞ্চকোষাত্মিকা। ছোট্ট মানব দেহখানি আর তার স্থূল মন, কামময়-কোষ, মনোময় কোষ, অতিমানস কোষ ও অন্যান্য কোষসমূহ নিয়েই তার জৈবী অস্তিত্ব। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে অণুজীবের সংস্কার সঞ্জাত এই ছোট্ট মানব শরীর ও নানান স্তরসমন্বিত এই সীমিত মানস শরীর নিয়ে মানব অস্তিত্ব। এখানেই অণু ও ভূমার মধ্যেকার মৌল পার্থক্য। অর্থাৎ একটা গুণগত ভাবে ভূমা…অপরটা গুণগত ভাবেই অণু। এবার অণুর মৌল বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে, “যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী”। যার যে ধরনের মনেগত ইচ্ছা তদনুযায়ী সে ফল পায়। যে লোকটা অত্যন্ত পেটুক, কেবল খাই-খাই রব, হতে পারে যে মৃত্যুর পর শূকরদেহ নিয়ে জন্মাল। যে মনে মনে হরিণের মত কেবল ছোটাছুটি দৌড়ঝাঁপ করতে চায়, পর জন্মে সে হয়তো হরিণ হয়েই জন্মাল। এও অসম্ভব কিছু নয়। ভূমামানসের জগৎ অত্যন্ত বৃহৎ যাকে সাধারণতঃ আমরা বিশ্ব বা universe বলে থাকি। আর অণুর জগৎ হ’ল এই পাঞ্চভৌতিক শরীরটা আর এই প্রপাঞ্চিক দেহটা তৈরী হয়েছে মানুষের নিজের অর্জিত সংস্কারানুযায়ী, অতীতের আশা-আকাঙ্ক্ষার ফলশ্রুতি হিসেবে। হয়তো কেউ এককালে হরিণের মত দ্রুত ছুটতে চেয়েছিল। তাই সে মরণের পরে হরিণের দেহ পেল। অণু ও ভূমার মধ্যে এই হ’ল সূক্ষ্ম পার্থক্যের সীমারেখা।
এক্ষেত্রে অণুর করণীয় কী? বলা হয়েছে:
“এতাবুপাধি পরঃ জীবয়োস্তয়োঃ সম্যগ্‌ নিরাসেন পরো ন জীবঃ।
রাজ্যং নরেন্দ্রস্য ভটস্য খেটকস্তয়োরপোহেন ভটো না রাজা।।”
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্‌’ (১ম-৩য় খণ্ড) থেকে

রাশিফল