বৃহস্পতিবার, 15 মে 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

প্রত্যাঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তান, আন্তর্জাতিক চাপ, বিদ্রোহ ঘরেও, নিয়ন্ত্রণ রেখা রক্ষায় মরিয়া শেলিং

নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের গুলি চালানো এবং ভারতের প্রত্যাঘাতের দৃশ্য সবটাই চেনা। নিয়ন্ত্রণ রেখার অদূরে গ্রামগুলিতে বসবাসকারী সাধারণ ভারতীয়দের উপর যখন তখন শেলিং করে প্রাণও কেড়ে নিতে দেখা যায় পাকিস্তানের রেঞ্জার বাহিনীকে। 

প্রত্যাঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তান, আন্তর্জাতিক চাপ, বিদ্রোহ ঘরেও, নিয়ন্ত্রণ রেখা রক্ষায় মরিয়া শেলিং

নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের গুলি চালানো এবং ভারতের প্রত্যাঘাতের দৃশ্য সবটাই চেনা। নিয়ন্ত্রণ রেখার অদূরে গ্রামগুলিতে বসবাসকারী সাধারণ ভারতীয়দের উপর যখন তখন শেলিং করে প্রাণও কেড়ে নিতে দেখা যায় পাকিস্তানের রেঞ্জার বাহিনীকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ সেক্টরের ছবি আর গোলাগুলি বিনিময়ের মধ্যেই থেমে নেই! এখানে এখন কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি। উরি, পুঞ্চ, আখনুর, কুপওয়ারায় চলছে প্রবল গুলিযুদ্ধ। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সিংহভাগ মরিয়া গুলির লড়াই এবং পুরোদস্তুর যুদ্ধ চলছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সীমানার কাছে থাকা গ্রামগুলিতে। জানা যাচ্ছে, ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই নিয়ন্ত্রণ রেখার অত্যন্ত কাছে চলে এসেছে। এবং অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মতো উরির পাঁচটি গ্রামে চলেছে গুলি-মর্টার। ভারতীয় বাহিনীকে মরিয়া হয়ে প্রতিরোধ করছে পাক সেনা। বস্তুত কমিউনিটি বাঙ্কারে আশ্রয় নেওয়া তো বটেই, গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেও। প্রশ্ন উঠছে, অধিকৃত কাশ্মীরের কাছের সীমান্ত রেখায় কেন এই নজিরবিহীন যুদ্ধ চালাচ্ছে পাকিস্তান? ভারতীয় বাহিনীর কি কোনও তাৎপর্যপূর্ণ ফরওয়ার্ড মুভমেন্ট হয়েছে? নাকি তেমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে? নিয়ন্ত্রণ রেখার নিকটস্থ গ্রাম মোহুরা, মাঞ্জগাঁও, ডোলিপাড়া, চৌকিবাল, জিঙ্গাল, রামপুরের বাসিন্দারা জানিয়েছে, তারা বহু দশকে এমন গুলিযুদ্ধ দেখেনি। দিল্লিতে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এবং সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেছেন, ‘পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখায় লাগাতার আক্রমণ করে চলেছে। ভারত  যোগ্য জবাব দিচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি, পাকিস্তানের বহু সেনার মৃত্যু হয়েছে।’ 
যদিও বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের অতি আগ্রাসনের সঙ্গে শুক্রবার দিনভরের আচরণের কোনও সাদৃশ্যই ভারতের অভ্যন্তরে পাওয়া যায়নি। কারণ? প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ। পাকিস্তানের প্রধান দু‌ই ভরসা আমেরিকা এবং চীন, দু’পক্ষই জানিয়েছে, আগ্রাসন চলবে না। ফ্রান্স থেকে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া কিংবা জাপান— প্রত্যেকেই ফের পহেলগাঁও সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করে বলেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে একজোট হতে হবে। ইজরায়েল ও রাশিয়া ভারতকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স শুক্রবার বলেছেন, ‘এই যুদ্ধে অংশীদার হওয়ার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই।’ পাশাপাশি, পাকিস্তান নিজেরা ড্রোন আর মিসাইল নিয়ে ভারতকে আক্রমণ করেও শিখণ্ডী হিসেবে সামনে রাখছে সাধারণ মানুষকে। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, পাকিস্তান এই ড্রোন হামলার মধ্যেও অসামরিক বিমান চালিয়েছে। প্রবল ড্রোন আদানপ্রদানের মধ্যেও দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের আকাশে অসামরিক বিমান। অর্থাৎ নিজেদের দেশবাসীকেই মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে তারা। যাতে কিছু হলে ভারতের উপর দোষ চাপানো যায়। আর এতেই প্রবল ক্ষুব্ধ আন্তর্জাতিক মহল। সুতরাং পাকিস্তান আচমকা অতিসক্রিয় হলেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় কোণঠাসা এবং ব্যাকফুটে। এদিন বিক্রম মিশ্রি, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং স্পষ্ট বলেন, ‘পাকিস্তান স্রেফ মিথ্যা প্রচারেই এগিয়ে যেতে চাইছে। পাকিস্তান উপলব্ধি করেছে যে, সরাসরি সংঘাতে নয়, প্রোপাগান্ডাই তাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায়।’ 
চাপের শেষ এখানেই নয়। ঘরের অন্দরেও বিপর্যস্ত পাকিস্তান। প্রত্যাঘাতে নাকাল শাহবাজ শরিফের এখন গলার কাঁটা পশ্চিম প্রান্তের বালুচিস্তান। বালোচ লিবারেশন আর্মি একের পর এক জনপদকে স্বাধীন ও স্বশাসিত ঘোষণা করছে। আক্রমণ করা হচ্ছে সেনা কনভয়। কোয়েটায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবনে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে তোলা হয়েছে বালোচ পতাকা। পাকিস্তানের সংসদেই চরম সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে সরকারকে। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের এমপি শাহিদ আহমেদ শুক্রবার সংসদেই বলেন, ‘আমাদের সেনারা সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমাদের কাপুরুষ প্রধানমন্ত্রী ভয়ে মোদির নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করছেন না! এভাবে যুদ্ধ জেতা যায়?’