রবিবার, 20 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

একজনও প্রকৃত ভোটার যেন বাদ না যায়, বিরোধীদের পর শরিক বিদ্রোহের আঁচে মোদি

স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন নিয়ে বিরোধিতার ছায়া রাজনৈতিক মানচিত্রে দীর্ঘতর হচ্ছে। এতদিন নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনীর এই বিশেষ প্রক্রিয়ার নেপথ্যে শাসকের ইন্ধন এবং স্বার্থের দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। 

একজনও প্রকৃত ভোটার যেন বাদ না যায়, বিরোধীদের পর শরিক বিদ্রোহের আঁচে মোদি

নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন নিয়ে বিরোধিতার ছায়া রাজনৈতিক মানচিত্রে দীর্ঘতর হচ্ছে। এতদিন নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনীর এই বিশেষ প্রক্রিয়ার নেপথ্যে শাসকের ইন্ধন এবং স্বার্থের দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। এসআইআর-এর নামে প্রকৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে ‘বহিরাগত’ ঢুকিয়ে ভোটব্যাঙ্কের চরিত্র বদলে দেওয়ার মতো মারাত্মক অভিযোগও তুলেছে কংগ্রেস-তৃণমূলের মতো দলগুলি। দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে ময়দানে নামার ডাক দেওয়া হয়েছে। আর এবার সেই সুরেই কার্যত বিদ্রোহের ডাক দিচ্ছে খোদ এনডিএ শরিকরা। বিহারের জোট শরিকরা মোদি সরকারকে সাফ ইঙ্গিত দিয়েছে—কমিশনের এই সিদ্ধান্তের জেরে রাজনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একধাপ এগিয়ে রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চার কর্ণধার উপেন্দ্র কুশওয়া স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘মাত্র এক মাসের মধ্যে সার্বিক ভোটার তালিকা রিভিউয়ের কর্মসূচি আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। একজনও প্রকৃত ভোটার যাতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বাদ না পড়ে... সেটা নির্বাচন কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। এরকম কিছু হলে আমরা বরদাস্ত করব না।’ তাঁর বক্তব্য, ‘ভোটার লিস্টের সংশোধন, রিভিউ, নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ নতুন কিছু নয়। আগেও হয়েছে। কিন্তু স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের নামে বিহার ভোটের ঠিক আগে, এত কম সময়ে এই কর্মসূচি সম্ভব নয়। কমিশন এটা করবে বলে যদি ঠিক করেই ছিল, তাহলে দু’বছর আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? কমিশন তো মুখেই বলছে যে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকেই নাকি তারা মানদণ্ড ধরবে। এভাবে শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলিকে কেন এই কাজে ব্যস্ত করিয়ে দেওয়া হচ্ছে?’ কুশওয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বিহার পরিযায়ী কর্মীদের অন্যতম রাজ্য। এই পরিযায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে, তাঁদের নাম বাদ পড়ে যাবে। যাঁরা বাইরে আছে, তাঁদের পক্ষে কীভাবে এখন এসে প্রশাসনিক দপ্তরে নথিপত্র জমা দেওয়া সম্ভব?
আচমকা নির্বাচন কমিশনের এই ইন্টেনসিভ রিভিশনের ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যেই নাগরিকত্ব ইস্যুতে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, সেন্সাসের ঠিক আগে কমিশনের মাধ্যমে কি এনআরসির মঞ্চ প্রস্তুত করছে কেন্দ্র? একদিকে রাজনৈতিক বিরোধিতা, অন্যদিকে আদালতে দরবার—ভোটার তালিকা ইস্যুতে প্রতিদিনই চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর। কারণ শনিবারই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়ায় বৈধ নাগরিকদের থেকে নথিপত্র দাবি করছে, এই বিশেষ রিভিশন ব্যবস্থায় সেটি অসাংবিধানিক। অবিলম্বে এই স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন স্থগিত করা হোক। সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১, ৩২৫ এবং ৩২৬ ধারায় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং রেজিস্ট্রেশন অব ইলেক্টরস রুলসের ২১এ বিধিকে ভঙ্গ করছে এই স্পেশাল রিভিশন প্রক্রিয়া। রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, যেভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই রিভিউ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে এবং পদ্ধতিগত যে রীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভোটারের নাম খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবেই। এডিআর জানিয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্ব আ‌ইনের ২১(৩) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন অবশ্যই এই রিভিশন করতে পারে। কিন্তু কেন করা হচ্ছে, তার স্পষ্ট কারণ দর্শাতে হবে। বিহারে যে রিভিশন হবে, তার প্রয়োজনীয়তা ও কারণ কিন্তু এখনও পর্যন্ত অস্বচ্ছ। অতএব আইনের পরিপন্থী।
বিহারের নির্বাচন অক্টোবর-নভেম্বরে। একমাত্র রাজ্য, যেখানে ভোট অথবা আসনপ্রাপ্তির হার কম হলেও বহু দলের নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। এখানে অবিজেপি প্রতিটি দলের মধ্যেই টানাটানি হয় অনগ্রসর ও মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে। এই কারণে শুধুমাত্র নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের সঙ্গে জোট করেই সন্তুষ্ট হয়নি বিজেপি। জিতনরাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা, চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস), উপেন্দ্র কুশওয়ার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চার মতো দলকেও এনডিএ যুক্ত করেছে। তারাই এখন রীতিমতো আতঙ্কিত। ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার আশঙ্কায়। কুশওয়া কিন্তু উদ্বেগ গোপন রাখেননি। বলেছেন, ‘রেশন কার্ড এবং আধার কার্ডকে বৈধ নাগরিক পরিচয়পত্র মান্য করা না হলে গ্রামীণ বিহারে বহু ভোটারের নাম বাদ চলে যাবে।’ 

রাশিফল