যুদ্ধের শিক্ষা: আত্মশক্তির বিকল্প নেই
ভারতের আত্মনির্ভরতাই সবার আগে জরুরি। যাতে নিত্যপণ্য থেকে অস্ত্র, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ভারত এক আত্মনির্ভর দেশ হিসেবে পরিণত হয়। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বিশ্ববাসী আকৃষ্ট হয়। ভারতের কোম্পানিতে কাজ করার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাক। ভারতের বন্ধু হওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহ তৈরি হোক সব দেশের। আর্থিকভাবে সেজন্য শক্তিশালী হওয়া দরকার।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
মে ১৬, ২০২৫
সমৃদ্ধ দত্ত: অঘোষিত এক যুদ্ধ থেকে আমরা কী শিখলাম? শিখলাম, এই মুহূর্ত থেকে নিজেদের বদলে ফেলার সময় এসেছে। পাকিস্তানের একের পর এক মিসাইল কিংবা ড্রোন যখন ভারতের বিভিন্ন শহরে আছড়ে পড়ছে তখন কোন কাজে এসেছে ঔরঙ্গজেবের কবর কিংবা কাস্ট সেন্সাস নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি?
ভারতীয় সামরিক বাহিনী অসীম সাহসিকতায় পাকিস্তানের প্রতিটি আক্রমণকে যখন নিখুঁতভাবে রুখে দিয়ে প্রতিরোধ করছে এবং প্রত্যাঘাতও করছে, ঠিক সেই ৭২ ঘণ্টায় আজমির শরিফের দরগা খুঁড়ে কী পাওয়া যাবে কিংবা সিলেবাস থেকে মুঘল ইতিহাস মুছে ফেলার ইস্যু কতটা সাহায্য করেছে?
এই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে বসে ভারত ও পাকিস্তানের অভিভাবক হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন এটা কোন শক্তিতে হয়? অর্থনীতির শক্তিতে। প্রযুক্তির শক্তিতে। আত্মনির্ভরতার শক্তিতে।
নরেন্দ্র মোদির রাত ৮ টার ভাষণ অথবা কর্নেল সোফিয়া কুরেশির ব্রিফিং-এর মাধ্যমে বারংবার ভারতের কোন শক্তিকে সামনে নিয়ে আসা হল? সেকুলারিজমের শক্তিতে। নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, দেশবাসীর ঐক্যকে আমি স্যালুট করি। বহু চেষ্টা করে ভারতবাসীর একতা ভাঙা যায়নি। এটা ভারতবাসীর জন্যই সম্ভব হয়েছে। আবার নিত্যদিনের ব্রিফিং-এ কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বললেন, আমি একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিতে চাই। ভারতের শক্তি হল সেকুলারিজম! বিভাজনের চেষ্টা করে লাভ নেই।
সুতরাং আমরা যা শিখলাম, তা হল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতি সক্রিয়তার এই দাদাগিরির জবাব দিতে হবে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং আত্মনির্ভরতাকে আকাশে নিয়ে গিয়ে। আর পাকিস্তানকে জবাব দিতে হবে এই সেকুলারিজম এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষ ঐক্য দিয়ে। যা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বুঝিয়ে দিলেন। আমরা কি আবার ওই হিন্দু বনাম মুসলমান, দরগা বনাম মন্দির, উচ্চবর্ণ বনাম নিম্নবর্ণ, ডাবল ইঞ্জিন বনাম বিরোধী রাজ্য, ইডি এবং সিবিআই, সেকুলার বনাম উগ্র মৌলবাদ, তোষণ বনাম ‘পাকিস্তান চলে যাও’, আমিষ বনাম নিরামিষ, হিন্দি বনাম আঞ্চলিক ভাষা, সেকু বনাম তিনু ইত্যাদি প্রাগৈতিহাসিক অনাধুনিক অশিক্ষিত ইস্যুগুলিতেই আবদ্ধ থাকব? নাকি এবার অন্তত নিজেদের আধুনিক ও শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্রত গ্রহণ করব?
অনেক তো হল? এসব এবার ছাড়ুন। বরং অপমানিত হতে শেখা যাক। আমরা ভাবতাম আমাদের ১৪০ কোটি জনসংখ্যা। সবথেকে প্রাচীন এক গণতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষ। আর কয়েক বছরের মধ্যে পৌঁছে যাব ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে। আমাদের স্টক মার্কেট ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আমাদের ছাড়া মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার আউটসোর্সিং চলবে না। কিন্তু সংঘাতের মাঝখানে আচমকা ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক বিবৃতি দিয়ে আমাদের যেন বার্তা দিলেন যে, তোমরা আর পাকিস্তান আমার কাছে সমান। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘোষণা করলেন লাগাতার। যাতে বিশ্ববাসী মনে করে আমেরিকা মনে করে ভারতও যা, পাকিস্তানও তাই। আদতে কি ডোনাল্ড ট্রাম্প এটা বিশ্বাস করেন? হতেই পারে না। তাহলে রহস্য হল বললেন কেন? কোথায় ভারত? আর কোথায় পাকিস্তান? এই অপমানের আমরা জবাব দেব না?
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন কয়েক হাজার বছর ধরে চলছে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত। কয়েক হাজার
বছর? তাঁর ইতিহাস জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রয়োজন নেই। কারণ সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমেরিকাবাসী বুঝুক। আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় হল কীভাবে এই অপমানের যোগ্য উত্তর দেওয়া যায়।
তা একমাত্র সম্ভব নিজেদের সব দিক থেকে চরম এক প্রকৃত মনোযোগী করে নিবিষ্ট মনে উন্নয়ন ও উত্তরণের দিকে নিয়ে যাওয়া। প্রোপাগান্ডার উন্নয়ন নয়। সত্যিকারের উন্নয়ন। কেন দরকার আত্মনির্ভরতা? কারণ, ট্রাম্প জানেন তাঁর দেশের একঝাঁক কোম্পানি কার্যত ভারতের বাণিজ্য ও ইকনমির চালিকাশক্তি। ট্রাম্পের অঙ্গুলিহেলনে যদি অ্যালফাবেট নামক সংস্থা হঠাৎ স্থির করে ৪৮ ঘণ্টা ভারতকে তারা সিগন্যাল ও আপলিংকিং দেবে না! কী হবে? ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে ধস নামবে। কেন? কারণ ওই সংস্থার অধীনেই গুগল, জি মেইল, ইউটিউব। আমেরিকা রেগে গিয়ে যদি বলে ৭২ ঘণ্টা অ্যাপলের কোনও নেটওয়ার্ক কাজ করবে না ভারতে। কী হবে? এভাবেই মাইক্রোসফট থেকে এনভিডিয়া। চ্যাটজিপিটি কিংবা এক্স। ফেসবুক অথবা হোয়াটস অ্যাপ। সব মার্কিন কোম্পানি। আমরা প্রতিদিন যাদের হাতের পুতুল।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের দেশে স্কুল শিক্ষা অতিক্রম করে ঝাঁপিয়ে পড়বে
ইন্ডিয়ার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। যা এখন ভারতের ছাত্রছাত্রীরা করে থাকে। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া দরকার চীন নয়, তাবৎ বহুজাতিক সংস্থা যাতে ভারতের রাজ্যে রাজ্যে নিজেদের সবথেকে বড় শাখা অফিস চালু করে। আর মার্কিন দেশের ছেলেমেয়েরা ভারতে কাজ করার আশায় ওয়ার্ক পারমিটের জন্য মরিয়া হয়ে যায়। ওটাকে বলে উন্নয়ন। ওটাকে বলে উত্তরণ।
আমরা এখনও পর্যন্ত শুধুই অত্যন্ত উন্নত নিখুঁত ওয়ার্ক ফোর্স। আমাদের এই বিপুল মানবসম্পদকে ব্যবহার করে বহুজাতিক মার্কিন সংস্থাগুলি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব বহুজাতিক সংস্থা কোথায়? কত সংখ্যক? আমাদের কোনও নিজস্ব ফেসবুক আছে? নেই। হোয়াটস আ্যপ আছে? নেই। গুগল আছে? নেই। নিজস্ব আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানি আছে? নেই। গ্রোক, চ্যাটজিপিটি, জেমিনী এবং ডিপসিক। তিনটি আমেরিকার। একটি চীনের। আমাদের আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যাপ পৃথিবীর অন্য দেশের মানুষ ব্যবহার করছে নিজেদের ফোন বা ল্যাপটপে ডাউনলোড করে এরকম আছে? নেই। আমাদের নিজস্ব এআই নেই। কারও মনে আছে একবার ভারত সরকার কয়েক বছর আগে টুইটারের বিকল্প একটি ভারতীয় প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করেছিল? কী ছিল নাম? ক’জনের মনে আছে?
চীনের জে এফ ফাইটার জেট থেকে ছোঁড়া পাকিস্তানের নিক্ষেপ করা মিসাইল আটকে দিয়েছে রাশিয়ার এস-৪০০, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মতোই আকাশ এয়ার ডিফেন্স। যা আমাদের ভারতের নিজস্ব। এটাই হল সাফল্য। এটাই আরও বেশি করে হওয়া উচিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে। কাজ শুরু হয়েছে। অর্থাৎ আগামী দিনে আমাদের যেন আর রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজরায়েলের ফাইটার জেট, এয়ার ডিফেন্স, ড্রোনের দরকারই না হয়। প্রতিটি অস্ত্র এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম যেন হয় ভারতের। একদিন কি সেই রূপকথার সময় আসা উচিত নয়, যেদিন ভারতের তৈরি ফাইটার জেট, ড্রোন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ফ্রান্স, আমেরিকারা ক্রয় করবে? সেই স্বপ্ন দেখা অপরাধ? তাহলে এখন থেকেই আমরা প্রত্যেকেই কেন ঝাঁপিয়ে পড়ছি না ভারত সরকারের ওই স্বপ্নকেই সাকার করে তোলার লক্ষ্যে।
কিন্তু তার আগে ভারত সরকারকেই তো ভাবতে হবে। তারা স্পষ্ট করে ঘোষণা করুক যে, দেশের যে কোনও প্রান্তে যে কোনওরকম ধর্মীয়, জাতপাতের, ভাষাগত বিভাজনের উস্কানি এবং প্ররোচনা যারা দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা যে কোনও রাজ্য নিতে পারবে। কেউ হস্তক্ষেপ করবে না।
ইন্দিরা গান্ধীকে তো প্রবল সমালোচনা করা হয় যে, কেন তিনি সেকুলার শব্দটি সংবিধানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছিলেন তাঁর শাসনকালে?
২০২৫ সালের ভারত বনাম পাকিস্তানের সংঘাতে তাহলে সবথেকে বেশি করে সেকুলার ভারতের প্রচারের প্রয়োজন পড়ল কেন? যারা নিজেদের সবথেকে বেশি দেশপ্রেমী হিসেবে দাবি করে ধর্মীয় বিভাজন ও উন্মাদনা ছড়ায় সারা বছর ধরে, তাদের পরিবারের কতজন মানুষ সেনা, আধা সেনা কিংবা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে কাজ করে? ঘরে বসে ফেসবুক আর নিয়ন্ত্রণরেখায় গুলির সঙ্গে বসবাস করার পার্থক্য জানে তারা?
ভারতের আত্মনির্ভরতাই সবার আগে জরুরি। যাতে নিত্যপণ্য থেকে অস্ত্র, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ভারত এক আত্মনির্ভর দেশ হিসেবে পরিণত হয়। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বিশ্ববাসী আকৃষ্ট হয়। ভারতের কোম্পানিতে কাজ করার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাক। ভারতের বন্ধু হওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহ তৈরি হোক সব দেশের। আর্থিকভাবে সেজন্য শক্তিশালী হওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে ভারত যেখানে ৪ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি, সেখানে আমেরিকা ২৯ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি। সুতরাং পার্থক্যটা বোঝা যাচ্ছে? ইতিমধ্যেই ভারত বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতি। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও সম্পদশালী হওয়ার জন্য অনেক দূরের পথ অতিক্রম করতে হবে। চেষ্টা করতে দোষ কী? একদিন কি সেই মুহূর্ত আসবে না যেদিন ভারত অন্যের যুদ্ধকে থামিয়ে দেবে দিল্লিতে বসে?
রাশিফল
-
আজকের রাশিফল
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
অমৃত কথা
-
জগৎ
- post_by বর্তমান
- জুন 19, 2025
আজকের দিনে
-
ইতিহাসে আজকের দিন
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
এখনকার দর
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুন 19, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুন 19, 2025