রবিবার, 20 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

হাসি, মজা আর আমিরি ম্যাজিক

সিনেমার পর্দা এখন বন্দুক-বোমার রাজ্য! বিগ বাজেট ছবি মানেই ধোঁয়া, রক্ত, চিৎকার, গালাগাল। সঙ্গে উগ্র দেশপ্রেমের উদ্বাহু নৃত্য। সেই ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাচ্ছে নিছক বিনোদন। 

হাসি, মজা আর আমিরি ম্যাজিক

 সৌম্য নিয়োগী: সিনেমার পর্দা এখন বন্দুক-বোমার রাজ্য! বিগ বাজেট ছবি মানেই ধোঁয়া, রক্ত, চিৎকার, গালাগাল। সঙ্গে উগ্র দেশপ্রেমের উদ্বাহু নৃত্য। সেই ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যাচ্ছে নিছক বিনোদন। সপরিবারে দেখার মতো ছবি বাদের খাতায়। সিনেমায় ‘লোকশিক্ষে হয়’, একথা কেউ ভুলেও বলে না। স্মার্টফোনবন্দি দুনিয়ায় আবেগহীন প্রজন্ম যখন নিজেকে নিয়েই বুঁদ, ঠিক এমন সময়ে তিন বছরের ‘সন্ন্যাস’ কাটিয়ে ফিরে এসেছেন ‘ফিলগুড’ সিনেমার সুপারস্টার... মিস্টার পারফেকশনিস্ট... আমির খান। বাকি দুই খানের মতো নয়, এক অদ্ভুত সাহস দেখিয়েছে তাঁর ছবি ‘সিতারে জমিন পর’। আর এস প্রসন্ন পরিচালিত এ সিনেমা শুধু কয়েকজন ‘নিউরোডাইভারজেন্ট’ বা বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম তরুণ-তরুণীর বাস্কেটবল খেলার গল্প নয়। বরং আমার-আপনার মতো এক সাধারণ মানুষের উত্তরণের কাহিনি, যা হাসি-মজার ছলেই আমাদের শেখায়—এই দুনিয়ায় সব্বাই ‘নরমাল’। সুস্থ, স্বাভাবিক। যে যার নিজের মতো করে!
না, এ সিনেমা ‘তারে জমিন পর’ নয়। সে আমির যতই এটিকে ‘স্পিরিচুয়াল সিক্যুয়েল’ দাবি করুন না কেন! নিকুম্ভ স্যারের মতো পারফেক্ট শিক্ষক নন বাস্কেটবল কোচ গুলশন অরোরা। আমির এখানে একজন রগচটা ব্যর্থ কোচ, ব্যর্থ স্বামী, ব্যর্থ পুত্রও। মাত্র পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা, অথচ পাহাড়সমান ইগো। হেড কোচ ‘টিঙ্গু’ (বাঁটকুল) বললে রেগে গিয়ে তাঁকে ঘুষি মারতেও পিছ পা হন না। এভাবে পর্দায় নিজেকে নিয়ে মজা বোধহয় আমির ছাড়া কেউ করতে পারবেন না। দিল্লি টিমের হেড কোচের সঙ্গে ঝামেলার জেরে চাকরি হারান গুলশন। তারপর মাতাল হয়ে পুলিসের গাড়িতে ধাক্কা। আদালতের শাস্তি হিসেবে ৯০ দিনের জন্য বিশেষভাবে সক্ষম তরুণ-তরুণীদের কোচিং করাতে যান গুলশন। শুরুতে বিরক্ত কোচ ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শেখেন শিশুর মতো নিষ্পাপ এই তরুণদের। তাঁর কোচিংয়ে বিশেষভাবে সক্ষমদের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপেও নামে সেই টিম। তারপর কী হল? সেখানেই আসল ট্যুইস্ট!
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্প্যানিশ বক্সঅফিস হিট ‘চ্যাম্পিয়ন্স’-এর অফিসিয়াল রিমেক। দু’বছর আগে এটির রিমেক করেছে হলিউডও। মাঝে আরও দু’টি বিদেশি ভাষায় তৈরি হয়েছে এই ছবি। এবার আমিরের পালা। বদরাগী, ব্যর্থ কোচের ভূমিকায় মিস্টার পারফেকশনিস্ট অনবদ্য। যদিও তাঁর এই অভিনয় নতুন কিছু নয়। ‘থ্রি ইডিয়টস’ বা ‘লাল সিং চাড্ডা’র স্টাইলেরই পুনরাবৃত্তি। এই সিনেমার আসল তারকা ওই একদল বিশেষভাবে সক্ষম তরুণ-তরুণী। প্রত্যেকের টাইমিং, হাসি-মজার মুহূর্ত, সারল্য—এ ছবি মহার্ঘ সম্পদ। বিশেষ করে মাথাগরম গোলু, আকাশে প্লেন দেখে সময় বোঝা সুনীল কিংবা শর্মাজি, যার কথা ভালো করে বোঝা যায় না। এরা সত্যিই কেউ অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার, কেউ ডাউন সিন্ড্রোম, কেউ আবার ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। প্রত্যেকেই পর্দায় দুর্দান্ত।
তবে এত ভালোর মধ্যেও খামতিগুলো বড় বেশি করে চোখে পড়ে। ২ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটের সিনেমা বড় দীর্ঘায়িত। দ্বিতীয়ার্ধে ক্লাইম্যাক্সের আগে গল্প গতি পেলেও দর্শককে ‘বোর’ হওয়া থেকে আটকাতে পারেনি। একসময় তো মনে হবে, স্কুলে নীতিকথার ক্লাস চলছে। কিছু জায়গায় সংলাপের ভিড়ে মজা হারিয়েছে। সুনীল-গোলুদের ব্যক্তিগত জীবনের গল্প সেভাবে দেখানো হয়নি। গুলশনের স্ত্রীর চরিত্রে সুন্দরী জেনেলিয়া ডি’সুজাকে ভালো লাগলেও, দু’জনের মধ্যে রসায়ন নেই। আমিরের মায়ের চরিত্রে ডলি আলুওয়ালিয়া এবং ব্রিজেন্দ্র কালা দ্বিতীয়ার্ধে চমক দিয়েছেন। কিন্তু তাও যেন অনর্থক। ‘ডি কে বোস’ কিংবা ‘পাপা ক্যাহতে হ্যায়’-এর মতো গানের টুকরো ব্যবহার হয়েছে সিনেমায়। কিন্তু শঙ্কর-আহসান-লয়ের সঙ্গীত পরিচালনা ‘তারে জমিন পর’-এর ম্যাজিক সৃষ্টি করতে ব্যর্থ। তবু এ সিনেমা অন্যরকম। ‘নরমাল’। আবেগঘন। আর ক্লাইম্যাক্স... দু’চোখ ভিজিয়ে দেবেই, গ্যারান্টি!

রাশিফল