মঙ্গলবার, 24 জুন 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

গরমে ঠান্ডা থাকতে কলমি

পুষ্প, নাল, কন্দ, ও সংম্বেদজ— মোট ৬ প্রকার শাকের ভেদ। যে কোনও তরকারিই যে শাক, তা এই বাংলা ছেড়ে পশ্চিমের দিকে গেলেই টের পাওয়া যায়! আয়ুর্বেদশাস্ত্রের বিচারে যা আমাদের তরকারি আর তার প্রাচীন পরিভাষা শাক। 

গরমে ঠান্ডা থাকতে কলমি

পরামর্শে মালদহের কেন্দুয়া সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কমিউনিটি হেলথ অফিসার আয়ুর্বেদ চিকিত্‍সক ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ।

পুষ্প, নাল, কন্দ, ও সংম্বেদজ— মোট ৬ প্রকার শাকের ভেদ। যে কোনও তরকারিই যে শাক, তা এই বাংলা ছেড়ে পশ্চিমের দিকে গেলেই টের পাওয়া যায়! আয়ুর্বেদশাস্ত্রের বিচারে যা আমাদের তরকারি আর তার প্রাচীন পরিভাষা শাক। যাক সেকথা। আমাদের আজকের আলোচনা যে ঔষধিগুণসম্পন্ন লতা নিয়ে, আয়ুর্বেদে সেই ভেষজ লতাটির নাম কড়ম্বী, সেই কড়ম্বীই একসময় ব্যাকরণের সূত্র ধরে কলম্বী হয়ে গেল, পরবর্তীকালে লোককথায় এসে কলমি নামে পরিচিত হল। অবশ্য চরক সংহিতায় একে বলা হয়েছে কলম্ব। আমরা বরং আলোচনার সুবিধার্থে কলমীশাকই বলি।
কলমিশাকের একাধিক গুণ! অন্ত্রের নানা রোগ, অর্শ, কৃমি, মূর্চ্ছা, মানসিক সমস্যায়, মৃগী, ব্যথাবেদনা, পেটের টিউমার, হৃদরোগ, মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনি স্টোন, গোপন নানা অসুখ, ব্রণ, পাকস্থলীর অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সমস্যা সহ আরও নানা অসুখের উপশমে কলমির ব্যবহার রয়েছে। গরমে কলমিশাক পেট ভালো রাখে। 
রয়েছে নানা শারীরিক সমস্যায় ঘরোয়া প্রয়োগের বিধানও।
মনোযোগ বৃদ্ধিতে: বয়ঃসন্ধিকালের নানা কু-অভ্যেসের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ হ্রাস ও ঘুমের মধ্যে নানা সমস্যায় ২ চা চামচ কলমিশাকের রস, অশ্বগন্ধা মূল চূর্ণ দেড় গ্রাম মতো নিয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
শিশু রাতে জাগে দিনে ঘুমায়: কোলের শিশুর মল কঠিন হচ্ছে, দুধ তুলছে আর তার সঙ্গে রাত জাগছে, দিনে ঘুমাচ্ছে— এমন হলে আয়ুর্বেদ চিকিত্‍সকের পরামর্শে কলমিশাকের রস খাওয়ালে সমস্যা মিটবে।
জল বসন্ত: চিকেন পক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং যন্ত্রণাদায়ক! উপসর্গও অত্যন্ত কষ্টকর। এক্ষেত্রে রোগ ছড়িয়ে পড়া রুখতে ও উপসর্গের উন্নতিতে কলমিশাকের রস ২ চা চামচ মাত্রায় নিয়ে একটু গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন রোগী সহ পরিবারের সকলে খেতে পারেন।
মাতৃদুগ্ধ পান করছে এমন শিশুর জন্য: ব্রেস্টফিড করেও শিশুর পেট ভরছে না এমন হলে, সেক্ষেত্রে ব্রেস্ট মিল্ক—এর বৃদ্ধিতে মায়ের উচিত কলমিশাকের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ মাত্রায় একটু ঘিয়ে সাঁতলে সকাল ও বিকেলে খাওয়া। তাতে উপকার মিলবে।
গনোরিয়া: কলমিশাকের রস ৪ থেকে ৫ চা চামচ অল্প ঘিয়ে সাঁতলে দু’বেলা খেলে রোগজনিত জ্বালা-যন্ত্রণা, পুঁজ পড়ার সমস্যা কমে।
হুলের জ্বালায়: বোলতা, ভিমরুল, মৌমাছি প্রভৃতি পতঙ্গের হুল ফোটানোর জ্বালায় এই কলমি বেটে লাগালে উপকার হয়।
মুখহীন ফোঁড়ায়:  ভেতরে পুঁজ হয়েছে, বেরতে পারছে না, বসে যাচ্ছে এমন হলে কলমির শেকড় ও ডগা একসঙ্গে বেটে ফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিতে হয়। এর ফলে ফোঁড়ার মুখ হয়ে যায়।
সতর্কতা
যে কোনও দ্রব্য মাত্রেই দোষগুণ থাকেই। রসের বিকার থাকাও আশ্চর্য নয়। কলমিশাকেও একাধিকগুণের সঙ্গে রয়েছে কিছু দোষ। সেই দোষ সরিয়ে কীভাবে গুণের অংশটুকু গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে প্রাচীন বৈদ্যগণ দিয়ে গিয়েছেন নির্দেশ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্যাকালের ধর্মে শিমূলের আঠার মতো একপ্রকার আঠা। কলমিলতায় জন্মে।
তাতেই সেই কীটগুলি জন্মগ্রহণ করে। তবে শরত্‍ ঋতু এলে সেই কীট আবার সরেও যায়। এই কারণেই সাধারণভাবে বর্ষাকালে কলমিশাক খাওয়া যায় না। এই কলমি বর্ষাকালে অভিশপ্তা হলেও, অন্যকালে তার প্রচুর গুণ।
কলমিশাক খাওয়ার নিয়ম কী
পত্রশাক মানেই তা গুরু ও রুক্ষ! অর্থাত্‍ সঠিক নিয়মে রান্না না করলে সহজে হজম করা সম্ভব নয়। তাহলে কী করা দরকার?
শাক একটু সেদ্ধ করে জল ফেলে দিয়ে সাঁতলে নিয়ে খেলে ওই দোষ আর থাকে না।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক