বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

চাঁদ কি সরে যাচ্ছে?

আমাদের পৃথিবীর একটাই উপগ্রহ চাঁদ। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মায়াবী আলো কার না ভালো লাগে। চতুর্দিক যেন সেই রুপোলি আলোয় স্নান করে। সেই চাঁদমামাই নাকি আমাদের থেকে মানে পৃথিবীর থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে?

চাঁদ কি সরে যাচ্ছে?

স্বরূপ কুলভী
আমাদের পৃথিবীর একটাই উপগ্রহ চাঁদ। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মায়াবী আলো কার না ভালো লাগে। চতুর্দিক যেন সেই রুপোলি আলোয় স্নান করে। সেই চাঁদমামাই নাকি আমাদের থেকে মানে পৃথিবীর থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে? হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা এমনটাই জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সুদূর ভবিষ্যতে তা অনেকটাই সরে যাবে। তেমনটা হলে কিন্তু মুশকিল আছে। কারণ, তখন পৃথিবীর চেনা ছবিটাই বদলে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, আমাদের গ্রহ আর প্রাণীদের বসবাসযোগ্য থাকবে না। আসলে পৃথিবীতে প্রাণ ধারণের জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে চাঁদের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব ঘটতে কোটি কোটি বছর লেগে যাবে। তাই এখনই আশঙ্কার কোনও কারণই নেই। পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বটে চাঁদ। কিন্তু এই সরে যাওয়ার হার অত্যন্ত কম। মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার হিসেবে বছরে মাত্র সেন্টিমিটার চারেক করে দূরত্ব বাড়ছে। আরও নিঁখুত করে বলতে গেলে ৩.৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ দেড় ইঞ্চি। একই হারে বাড়ে আমাদের হাত-পায়ের নখ। এই হারে দূরে সরতে থাকলে পৃথিবী থেকে চাঁদের ১ কিলোমিটার সরে যেতে সময় লাগবে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৫৫ হাজার বছর। তাই আগেভাগেই গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসার কোনও কারণই নেই। যদিও এর ফলে খুব ধীরে হলেও পৃথিবীর দিন খুব সামান্য হলেও লম্বা হচ্ছে। এখন ২৪ ঘণ্টায় একদিন। একটা হিসেবে দেখা গিয়েছে, ১৬০০ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে প্রতি শতকে গড়ে ১ মিলিসেকেন্ড (প্রতি সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগ) করে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ছে। 
এখন মনে হতেই পারে যে, নাসার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর থেকে চাঁদের এই অত্যন্ত ধীর গতিতে সরে যাওয়ার হিসেব করলেন কীভাবে? ১৯৬৯ সালে নাসার অ্যাপোলো-১১ মিশনে চাঁদে একটি প্রতিফলক স্থাপন করা হয়। চাঁদে বসানো সেই আয়নায় পৃথিবী থেকে শক্তিশালী লেজারের সাহায্যে আলো পাঠানো হয়। সেই আলো আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। লেজার রশ্মি চাঁদে পৌঁছে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে কত সময় লাগে, তার হিসাব রাখেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমেই চাঁদ কতটা দূরে সরে যাচ্ছে, তার হিসেব জানতে পারা গিয়েছে। 
আমরা জানি, মহাবিশ্বে প্রত্যেক বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করছে।  পৃথিবী ও চাঁদও এর ব্যতিক্রম নয়। আর পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে এই আকর্ষণের প্রভাব অনেকটা নৃত্য তরঙ্গের মতো। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। একইসময়ে পৃথিবী নিজের অক্ষের চারপাশে ঘোরে। এই পারস্পরিক ঘূর্ণনের প্রভাব পড়ে পৃথিবীর মহাসাগরগুলিতেও। চাঁদ পৃথিবীর কাছে এলে এর মহাকর্ষের টানে সমুদ্রের জল ফুটে ওঠে। এটাকেই বলে জোয়ার। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আর পৃথিবী নিজের অক্ষে ঘুরছে তার উল্টো দিকে। ফলে চাঁদের টানে জোয়ারের জল পৃথিবীর ঘূর্ণনের উল্টো দিকে যায়। এই কারণে পৃথিবীর কেন্দ্রে ঘর্ষণ তৈরি হয়। এটাই পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এই পারস্পরিক আকর্ষণের টানাপোড়েন ধীরে ধীরে চাঁদের কক্ষপথকে বাইরের দিকে ঠেলে দেয়। এক্ষেত্রে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি সহ অন্য কারণও রয়েছে।

রাশিফল