মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

আদর্শ

জগতে যাঁহারা মহৎ বলিয়া গণিত, তাঁহারাও তোমার আদর্শ নহেন। তাঁহাদের চরিত্রগত বা কর্ম্মগত আংশিক উৎকর্ষ বর্ত্তমানতায় অথবা সম্ভাব্যতায় তোমার নিজস্ব হইতে পার, কিন্তু কোনও সৃষ্ট জীবেরই অখণ্ড-চরিত্র তোমার নিজস্ব হইতে পারে না। সকল খণ্ড যে অদ্বিতীয় অখণ্ডের অংশীভূত, তাঁহাকেই একমাত্র জীবনের আরাধ্য করা চলে। 

আদর্শ

জগতে যাঁহারা মহৎ বলিয়া গণিত, তাঁহারাও তোমার আদর্শ নহেন। তাঁহাদের চরিত্রগত বা কর্ম্মগত আংশিক উৎকর্ষ বর্ত্তমানতায় অথবা সম্ভাব্যতায় তোমার নিজস্ব হইতে পার, কিন্তু কোনও সৃষ্ট জীবেরই অখণ্ড-চরিত্র তোমার নিজস্ব হইতে পারে না। সকল খণ্ড যে অদ্বিতীয় অখণ্ডের অংশীভূত, তাঁহাকেই একমাত্র জীবনের আরাধ্য করা চলে। নতুবা, নিজ হাতে গড়া লৌহ-নিগড়ে নিজের চরণ শৃঙ্খলিত করিয়া আবার সেই বন্ধনই কাটিতে কাটিতে কত জন্ম চলিয়ে যায়, তাহার হিসাব কে করিবে? মানুষ নিজে নিজের প্রভু, নিজে নিজের নেতা। জগতের কোন গুরু, কোন আচার্য্যের আদেশের অপেক্ষা রাখিবে না। প্রাণ যাহা চাহে, তাহাই করিয়া যাও—ইহার বেশি কি বলিতে পারি?
পরের কথা তোমার গ্রাহ্য হইতে পারে, তাহাতে সন্দেহ কি? কিন্তু উহা গ্রহণ করিবার সময় ভিক্ষা করিয়া চাহিয়া আনিও না। আমরা যে শুধু অর্থই ভিক্ষা করি, তাহা নহে, আমরা ভাবও ভিক্ষা করি। আর ভিক্ষা করি বলিয়াই ঐগুলি ইহজন্মেও কদাপি আমাদের নিজস্ব হয় না। 
দাসবুদ্ধি লইয়া ভাবের যাচাই করিতে গেলে উহার যাচাই করা আর হয় না, মোহবশে উহাকে পরম অনুগ্রহের দান বলিয়া গ্রহণ করিয়া ফেলা হয়। আর আত্মবুদ্ধি বা মর্যাদাবুদ্ধি লইয়া ভাবের যাচাই করিতে গেলে উহা বিচারান্তে গ্রাহ্য বিবেচিত হইলেও প্রকৃত পক্ষে গৃহীত হয় না বরং ভাব-সঙ্ঘাত-প্রভাবে আত্মগত সুপ্ত চৈতন্যকে জাগ্রত করে এবং তাহার সহিত উহার সামঞ্জস্য উপলব্ধ হয়।
তুমিই কি স্বয়ং অতুল সমৃদ্ধির আকর নহ? ভাবের সমৃদ্ধি, বাক্যের সমৃদ্ধি, কর্ম্মের সমৃদ্ধি সকলই কি তোমার প্রকৃতিগত সম্পদ নহে? তবে তুমি কোথায় চাহিতে যাইবে? তবে তুমি কাহার খোশামুদি করিয়া রাজার ছেলে হইয়াও মুদির ঘরের কলমপেশা বৃত্তি যাচিয়া লইবে? যাহারা গৃধ্রের মত শুধু গলাধঃকরণ করিয়াই যায়, তাহারা ভাব-জগতের কেরাণী ছাড়া আর কি? মহাজনের সুদের হিসাব কষিয়া জন্মযুগ খোয়াইলেও তাহাদের আপন ঘরে একটা কাণা-কড়ি যায় না। হইতে পারে, বড় লোকেরই মতি বদলাইয়াছে, কিন্তু তাতে তোমার কি? তুমিই বা এমন কোন্‌ ছোট লোকটা। আজ যাঁরা বড়’র পূজা পাইয়া আসিতেছেন, তাঁহাদের কর্ম্ম, তাঁহাদের পুণ্য ও তাঁহাদের যোগ্যতা অর্জ্জন করিবার পূর্ণ সম্ভাব্যতা কি তোমারও মধ্যে নাই?—শুধু বাহির কর, ভিতরকে প্রকাশিত কর, অন্তরকে অভিব্যক্তি দাও।
স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ‘কর্ম্ম-ভেরী’ থেকে

রাশিফল