ঘরে ও বাইরে কর্মরতরা গরমে সুস্থ থাকবেন কীভাবে?
সবে এপ্রিল। এখনই ছক্কা হাঁকাচ্ছে সূয্যিমামা। তবু কাজের তো ছুটি নেই। এসির মধ্যে অফিসে বা বাইরে বেরিয়ে— গরমে সুস্থ থাকবেন কীভাবে? পরামর্শে পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ নীলাদ্রি সরকার ও বিপি পোদ্দার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ রাজদীপ সেন।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
এপ্রিল ২২, ২০২৫
সবে এপ্রিল। এখনই ছক্কা হাঁকাচ্ছে সূয্যিমামা। তবু কাজের তো ছুটি নেই। এসির মধ্যে অফিসে বা বাইরে বেরিয়ে— গরমে সুস্থ থাকবেন কীভাবে? পরামর্শে পিজি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ নীলাদ্রি সরকার ও বিপি পোদ্দার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ রাজদীপ সেন।
যাঁরা বাইরে কাজ করেন
রাস্তায় দোকান হোক বা সেলস-এর কাজ, অনেককেই প্রখর রোদের মধ্যে ঘুরতে হয়। প্রচণ্ড গরমের কারণে তাঁদের নানা সমস্যার মধ্যেও পড়তে হয়। অতিরিক্ত রোদের মধ্যে থাকলে খুব ঘাম হয়। এর ফলে শরীর থেকে প্রচুর ফ্লুইড বেরিয়ে যায়। কেবল জল নয়, সোডিয়াম, পটাশিয়াম সহ ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। শরীরে যতটা জল থাকা প্রয়োজন, ততটা থাকে না। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাপমাত্রাজনিত একাধিক সমস্যা দেখা যেতে পারে। যেমন—
১. হিট ক্র্যাম্প
প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে হাত- পায়ের মাংসপেশিতে কামড় ধরে। মূলত ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য কম হওয়া ও ডিহাইড্রেশনের কারণে এই সমস্যা হয়।
২. হিট সিনকোপ
মাত্রাতিরিক্ত গরমের জন্য মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন হয় না। এই কারণে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে।
৩. হিট স্ট্রোক
আরও গরম বাড়লে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। প্রচণ্ড গরমে কাজ করলে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জৈবিক পদ্ধতি কাজ করে না। শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। একে বলে হাইপারথার্মিয়া। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপরে। এর ফলে হার্টের সমস্যা হতে পারে এর ফলে। রোগী অচৈতন্য হয়ে পড়তে পারেন।
বাইরে বেরনোর সময়
ইচ্ছা না থাকলেও গরমে বাইরে বেরতেই হবে। তাই ব্যাগে কয়েকটা জিনিস রাখা খুব দরকার। প্রথমত, জলের বোতল। গরমের সময় যত বেশি পরিমাণে জল খাওয়া যায় ততই ভালো। তবে সারাদিন রোদের মধ্যে কাটাতে হলে কেবল জল পর্যাপ্ত নয়। সাধারণ জল খেলে তেষ্টা মিটতে পারে। কিন্তু যে খনিজগুলি ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তার ঘাটতি পূরণ করতে পারা যায় না। তাই শুধু জল খাওয়াই যথেষ্ট নয়। খেতে হবে ইলেকট্রোলাইট। ডাবের জল এর একটি ভালো উৎস। সবসময় ডাব না পেলে ওআরএস সঙ্গে রাখতে পারেন। এতেও উপকার পাওয়া যায়। ছাতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। সম্ভব হলে সানগ্লাস পরুন। সানস্ক্রিন মেখে বেরনো উচিত। তাহলে ট্যানের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। মাঝে মাঝে মুখে জলের ঝাপটা দিন। এতে আরাম পাবেন। মুখও কাপড়ে ঢেকে বেরতে পারেন। সিল্কের জিনিস বা নাইলনের জিনিস পরে বেরবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাতে চামড়ায় সমস্যা সমস্যা বাড়বে। বাইরে কাজ করলেও যতটা সম্ভব ছায়ার তলায় থাকার চেষ্টা করবেন। রাস্তার ধুলো ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
কী খাবেন?
রোদের মধ্যে ঘুরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা ফ্লুইডযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। শসা, তরমুজ, আম, লিচুর মতো ফল খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে খনিজ মৌলের ভারসাম্য বজায় থাকবে। আমাদের রাজ্যে আর্দ্রতা অত্যন্ত বেশি। তাই গরমে রুটির চেয়ে ভাত খাওয়া বেশি উপকারী। এই সময় অতিরিক্ত তেল মশলা দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। দই বা ঘোল খেতে পারেন। তবে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাবেন না। দিনে কমপক্ষে তিন লিটার জল খান। বর্তমানে খানিক ড্রাই হিটের প্রবণতা বেড়েছে। প্রচণ্ড ঘামলে যতটা কষ্ট হয়, ততটা হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু ড্রাই হিটের ফলে তাপমাত্রজনিত সমস্যা বেশি হয়। এর জন্য হাইড্রেটেড থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
যাঁরা অফিসের মধ্যে থাকেন
অফিসের চার দেওয়ালের মধ্যে কাজ করেন অনেকে। বা কিছু মানুষকে ওয়ার্ক ফ্রম হোমও করতে হয়। সারাদিন এসির মধ্যে কাটান তাঁরা। রোদে ঘুরে কাজ করার মতো অস্বস্তিতে তাঁদের পড়তে হয় না ঠিকই, কিন্তু সারাদিন এসির মধ্যে কাটালে শারীরিক নানা জটিলতা দেখা যেতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে থাকলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যায়। আবার অনেক সময় অনেকে একসঙ্গে একটি এসির মধ্যে থাকেন। ফলে কোনও একজনের অ্যালার্জি বা সংক্রমণ থাকলে রোগটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আবার ঠান্ডার মধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। হাড়, পেশির ব্যথা বাড়তে পারে। সারাদিন এসির মধ্যে বসে থাকলে ওবেসিটির মতো সমস্যা হয়। ত্বকও শুষ্ক হতে পারে।
ঘেমে থাকা অবস্থায়
এসিতে ঢুকবেন?
না ঢোকাই ভালো। তাতে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘাম ভালো করে মুছে নিয়ে তবেই এসির তলায় বসুন। দীর্ঘক্ষণ এসির মধ্যে থাকবেন না। যদি সম্ভব হয় মাঝে মাঝে একটু উঠে যান। পাখার তলায় বা হাওয়া দিচ্ছে এমন কোনও জায়গায় সময় কাটিয়ে তারপর আবার এসির তলায় বসতে পারেন। এসি কত তাপমাত্রায় থাকা উচিত, এই বিষয় নিয়েও অনেকে চিন্তা করেন। সুস্থ থাকতে চাইলে এসি ২৩ বা ২৪- এর নীচে রাখা ঠিক নয়। এতে এসি থেকে বাইরে বেরলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হবে না।
জীবনযাত্রা
সঠিক নিয়ম মেনে জীবনযাপন করলে সারাদিন এসির মধ্যে থাকলেও আলাদা করে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গরম যে পরিমাণে বাড়ছে, এসি ছাড়া থাকাও একপ্রকার অসম্ভব। তাই এই সময় সতর্ক থাকুন। প্রয়োজন বুঝে খাওয়া দাওয়া করুন। হালকা খাবার খান। সঠিক সময়ে ওষুধ খান। এসির মধ্যে থাকলেও জল খাওয়া মাস্ট। নইলে ডি হাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে। পারলে ওআরএস-এর জল খান। ধূমপান, মদ্যপান, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। রাতে বেশিক্ষণ জাগবেন না। সারারাত এসি চালিয়ে রাখতে পারেন। তবে টেম্পারেচার খুব কমাবেন না। যাঁদের অফিসে এসি রয়েছে কিন্তু বাড়িতে নেই, তাঁরা জানলায় ভিজে কাপড় মেলে রাখতে পারেন। এতে ঘর ঠান্ডা হবে।
শরীরচর্চা
গরমে অনেকেই শরীরচর্চা করতে চান না। ভাবেন, এতে অতিরিক্ত এনার্জি ক্ষয় হবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং শরীরচর্চা করলেই গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব। অনেকে জিমে এসির মধ্যে ব্যায়াম করেন। এতে সমস্যার কিছু নেই। তবে তাপমাত্রা খুব কম হলে শরীরে জটিলতা বাড়বে।
একেবারেই রোদে বেরব না?
অনেকেই ভাবেন, রোদের মধ্যে না বেরলে হয়তো ভিটামিন ডি-র ঘাটতি হতে পারে। তবে আমাদের রাজ্যে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণের জন্য আলাদা করে রোদে বেরনোর প্রয়োজন পড়ে না। তাই খুব দরকার না পড়লে বাইরে না বেরনোই উচিত।
লিখেছেন শান্তনু দত্ত
related_post
এখনকার দর
-
রুপোর দাম (২৭/০৪/২৫)
- post_by Admin
- এপ্রিল 27, 2025
-
ডলার (২৬/০৪/২৫)
- post_by Admin
- এপ্রিল 26, 2025
-
পাউন্ড (২৬/০৪/২৫)
- post_by Admin
- এপ্রিল 26, 2025
-
ইউরো (২৬/০৪/২৫)
- post_by Admin
- এপ্রিল 26, 2025
-
রূপোর দাম (২৬/০৪/২৫)
- post_by Admin
- এপ্রিল 26, 2025
-
নিফটি ৫০ (২৫/০৪/২৫)
- post_by Admin
- এপ্রিল 25, 2025