রবিবার, 13 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

শিক্ষাকর্মীদের ভাতা স্থগিত, চাকরিহারাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশ হাইকোর্টের

চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার রায় ঘোষণা করে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, ২৬ সেপ্টেম্বর বা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত এই ভাতা দেওয়া যাবে না

শিক্ষাকর্মীদের ভাতা স্থগিত, চাকরিহারাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার রায় ঘোষণা করে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, ২৬ সেপ্টেম্বর বা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত এই ভাতা দেওয়া যাবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা জমা দিতে হবে। তার ১৫ দিনের মধ্যে পাল্টা হলফনামা দেবে মামলাকারীরাও। 
হাইকোর্টের এই রায়ে চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের কপাল আরও পুড়ল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সুপ্রিম কোর্ট যে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল, তার মধ্যেই রয়েছেন এই গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা। গত মে মাসে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, চাকরিহারা গ্রুপ সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে।  একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নতুন করে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়। অতিরিক্ত শূন্যপদ সহ প্রায় ৪৪ হাজার চাকরি হবে এই গোটা প্রক্রিয়ায়। অথচ, তারপরই চাকরিহারা গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়। শুনানিতে মামলাগুলির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য। কিন্তু রাজ্যের বিরোধ সত্ত্বেও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল হাইকোর্ট। রায়ের কপিতে উল্লেখ রয়েছে, এভাবে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আদতে দুর্নীতিকে সমর্থন করেছে রাজ্য সরকার। বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, ভাতা দেওয়া হচ্ছে কারণ তাঁরা আর্থিকভাবে দুর্বল। ফলে ভবিষ্যতে যদি এই ‘স্কিম’ বেআইনি বলে খারিজ হয়ে যায়, তাহলে এঁদের পক্ষে আর টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি সুপ্রিম রায়ের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি বলেছেন, ‘অপছন্দ হলেও শীর্ষ আদালতের রায় সকলকে মানতে হবে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কোনওভাবেই নষ্ট করা যাবে না। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, রাজ্যের স্কিম শীর্ষ আদালতের রায়কে অতিক্রম করে যেতে চেয়েছে।’
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাজ্য শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। তাই শীর্ষ আদালতের অনুমতি নিয়েই তারা এই ভাতা ঘোষণা করতে পারত। কিন্তু ভাতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলায় রাজ্য শীর্ষ আদালতের রিভিউয়ের আবেদনের নিষ্পত্তির অজুহাত খাড়া করেছে। রাজ্যের এই পরস্পরবিরোধী আচরণ স্পষ্ট নয়।’ এছাড়াও বিচারপতি বলছেন, ‘এই স্কিমের মাধ্যমে রাজ্য কাজের নিরাপত্তার কোনও আশ্বাস দেয়নি। আবার এই স্কিমে কোনও বেকারকেও ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। এটা স্পষ্ট যে, দুর্নীতির জন্য যাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তাদের টাকা দেওয়া হবে। যারা বাড়িতে বসে থাকবে, রাজ্য জেনেবুঝে তাদের টাকা দেবে। তাই রাজ্যকে আদালত কোনওভাবেই এই স্কিম চালানোর অনুমতি দিতে পারে না। এই স্কিম আসলে প্রতারণামূলক কাজকে সমর্থন করার জন্য করা হয়েছে বলে মনে করছে আদালত।’
মামলাকারী ও চাকরিহারাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিচারপতি সিনহা রায়ে বলেছেন, ‘দু’পক্ষই যেখানে ক্ষুধার্ত, সেখানে রাষ্ট্র এক পক্ষকে খাবার তুলে দিয়ে অন্য পক্ষকে বঞ্চিত রাখতে পারে না। রাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু কখনই তা একপেশে হতে পারে না। যে কোনও নাগরিকই জনস্বার্থে এমন মামলা দায়ের করতে পারেন বলে মনে করে আদালত।’

রাশিফল