শুক্রবার, 20 জুন 2025
Logo
  • শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

হরিবোল

ধ্যান করবে কোণে, বনে আর মনে। মনকে একাগ্র করবার জন্যে ধ্যান করবার আগে হাততালি দিয়ে খানিকক্ষণ “হরিবোল, হরিবোল” বলবে। গাছের তলায় হাততালি দিলে যেমন গাছের পাখী উড়ে যায়, তেমনি “হরিবোল, হরিবোল” বললে কূচিন্তা মন থেকে চলে যায়।

হরিবোল

ধ্যান করবে কোণে, বনে আর মনে। মনকে একাগ্র করবার জন্যে ধ্যান করবার আগে হাততালি দিয়ে খানিকক্ষণ “হরিবোল, হরিবোল” বলবে। গাছের তলায় হাততালি দিলে যেমন গাছের পাখী উড়ে যায়, তেমনি “হরিবোল, হরিবোল” বললে কূচিন্তা মন থেকে চলে যায়। উপাসনা ততক্ষণ দরকার, যতক্ষণ না নামে অশ্রুপাত হয়। হরিনাম শুনলে যাঁর চোখ দিয়ে জল পড়ে, তাঁর আর উপাসনা করবার দরকার নেই। এক ডুবে রত্ন না পেলে রত্নাকরকে রত্নহীন মনে কোর না। ডুব দিতে দিতে রত্ন মিলবেই মিলবে। অল্প সাধনা করে ঈশ্বর দর্শন হলো না বলে হতাশ হয়ো না। ধৈর্য করে সাধনা করতে থাক, ঠিক সময়ে ঈশ্বরের কৃপা তোমার উপর পড়বেই পড়বে।
এক কাঠুরে বন থেকে কাঠ কেটে এনে দুঃখকষ্টে দিন কাটাত। হঠাৎ এক ব্রাহ্মণ সেই পথ দিয়ে যেতে যেতে তার দুঃখ দেখে বললেন, “বাপুহে এগিয়ে যাও।” কাঠুরে ব্রাহ্মণের কথা শুনে কিছু এগিয়ে গিয়ে একটা চন্দন বন পেল এবং সেদিন যতো পারল চন্দন কাঠ কেটে এনে বাজারে বেচে অন্য দিনের চেয়ে অনেক বেশী টাকা পেল। পরদিন সে মনে মনে ভাবতে লাগলো যে ঠাকুর মশাই আমাকে চন্দন কাঠের কথা তো কিছুই বলেননি, শুধু “এগিয়ে যাও” বলেছিলেন। অতএব আমি এগিয়ে যাই। সে এগোতে লাগলো এবং কিছু দূর গিয়ে একটা তামার খনি পেল। সেদিন যতো পারলো তামা এনে বেচে আগের দিনের চেয়ে অনেক বেশী টাকা পেল। কিন্তু সে তাতে না ভুলে দিন দিন আরও যতো এগোতে লাগলো, ক্রমে ক্রমে রূপো, সোনা, হীরের খনি পেয়ে ধনী হয়ে পড়লো। ধর্মরাজ্যেরও ঐ কথা, যদি জ্ঞানী হতে চাও তবে এগিয়ে যাও। সাধনার কোনো বিশেষ অবস্থা (যেমন অষ্ট সিদ্ধাই ইত্যাদি) পেয়ে আহ্লাদে ভুলো না। এগোতে থাক, অমূল্য ধনে ধনী হবে। সাধুসঙ্গ ধর্মসাধনের একটা প্রধান অঙ্গ জানবে। চারা গাছকে প্রথমে বেড়া দিয়ে রক্ষা করতে হয়, না হলে গরু ছাগল এসে তাকে নষ্ট করে ফ্যালে। গাছ একবার বড় হলে আর সে ভয় থাকে না, তখন শত শত গরু ছাগল এসে তার তলায় আশ্রয় নেয় ও তার পাতায় পেট ভরায়। সাধনার প্রথম অবস্থায় আপনাকে কুসঙ্গ, বিষয়-বুদ্ধি ও সংসার ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে হবে, না করলে সমস্ত ধর্মভাব নষ্ট করে ফেলবে। কিন্তু একবার সিদ্ধ হলে আর কোন ভয় নেই। হাজার হাজার সংসার ও কুসঙ্গ তখন তোমায় নষ্ট করতে পারবে না, বরং অনেকে তোমার কাছে এসে শান্তি পাবে।হাতীর গা পরিষ্কার করে দিলে তখনি ময়লা করে ফ্যালে। কিন্তু গা পরিষ্কার করে যদি ঘরের ভিতর বন্ধ করে রাখা যায়, তা হলে আর গা ময়লা করে না। সংসারের মধ্যে যতই পবিত্রতা লাভ করো না কেন, আবার অপবিত্র হয়ে পড়বে। মনকে পবিত্র করে ঈশ্বরের উপর বদ্ধ করে রাখলে পবিত্র থাকবে, সংসারে ছেড়ে দিলে আবার ময়লা হয়ে যাবে।
সুরেশ চন্দ্র দত্তের ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের উপদেশ’ থেকে