বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

সর্ষের তেলে কেশচর্চা

নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন নাকি? এই প্রবাদবাক্য আপনার অভিধানে নতুন নয়। তবে সত্যিই যদি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে এবার জেগে ওঠার পালা।

সর্ষের তেলে কেশচর্চা

নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন নাকি? এই প্রবাদবাক্য আপনার অভিধানে নতুন নয়। তবে সত্যিই যদি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে এবার জেগে ওঠার পালা। মা, ঠাকুরমার রান্নাঘরে এতদিন যার কদর ছিল, সেই সর্ষের তেল যে আপনার সুন্দর চুলের বন্ধু হতে পারে, তা কি জানতেন? শুধু রান্নায় ব্যবহার নয়, সর্ষের তেল রূপচর্চাতেও কাজে লেগেছে প্রাচীন যুগ থেকেই। আপনিও দৈনন্দিনের কেশচর্চায় ব্যবহার করতে পারেন এই তেল। কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, তারই সন্ধান দিলেন হেয়ার এক্সপার্ট অভিরূপ নন্দী।
সপ্তাহে ছুটির দিন মা, কাকিমা, দিদিমা— যিনি সময় পেতেন ভালো করে মাথায় তেল লাগিয়ে দিতেন। শ্যাম্পু করে ফেললেই মেজাজ ফুরফুরে। এখন হয়তো বাড়িতে আর যত্ন করার কেউ নেই, অথবা আপনারই সময়ের অভাব। তাই স্যালোঁতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পেশাদারের হাতে যত্ন নিয়েই খুশি থাকতে হয়। আসলে মাথায় তেল দিলে শরীর ঠান্ডা হয়। তা থেকে ইমিউনিটি বাড়ে। নারকেল তেল দিয়ে চুলের যত্নের কথা আপনি জানেন। কিন্তু সর্ষের তেলও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চুলের গোড়া শক্ত করে। ত্বককেও মোলায়েম করে। সপ্তাহে অন্তত একদিন এই রুটিনটা মেনে চলুন। এটা খাবারে ব্যবহারের পাশাপাশি চুল ও মাথার তালুর জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।  
কোন কাজে লাগে?
• চুলকে কালো রাখার জন্য অর্থাৎ অকালপক্বতা রুখতে সর্ষের তেল ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি দূর করার জন্যও ভালো কাজে দেয়।
• সর্ষের তেলের মধ্যে ওমেগা থ্রি অ্যাসিড বেশি মাত্রায় রয়েছে। ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে। যেটা এর কার্যগুণ বাড়ায়। চুল সবদিক থেকে মজবুত হয়।
• সর্ষের তেল সানস্ক্রিন হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ঠোঁট শুকিয়ে গেলে ব্যবহার করতে পারেন। পেশির উদ্বেগ কমায়। ত্বকে কোথাও ট্যান অথবা কালো স্পট থাকলে সেটাও কমাতে সাহায্য করে। 
• প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সর্ষের তেল। এর মধ্যে আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড ভরপুর থাকে। যা চুলের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। চুল তরতাজা এবং বাউন্সি রাখে, চুল নরম, মসৃণ, রেশমের মতো হয়।
• চুল পড়ে যাওয়া, চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকে। প্রতিদিনের দূষণ, জীবনযাপনের নানা উদ্বেগের জন্য হেয়ার ফলিকলের পুষ্টি কমে যায়। চুল দ্রুত ভেঙে যায়। এই ধরনের সমস্যায় প্রতিদিন সর্ষের তেলের মাসাজ নিলে চুলের গোড়া শক্ত হয়।
• সর্ষের তেলের মধ্যে প্রচুর মিনারেল, ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। আবার এর মধ্যে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়ামও রয়েছে। ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে রয়েছে ভরপুর। এসব উপাদান চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে। 
• পেশাদার হাতে চুলে তেল মাসাজ করালে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। চুল পড়ে যাওয়ার নানা কারণ থাকে। তবে বিশেষজ্ঞের মতে, প্রধান কারণ চুলের গোড়ায় পুষ্টির অভাব। চুলের সঠিক মাত্রায় বৃদ্ধি চাইলে সর্ষের তেলের মাসাজ ভালো কাজে দেবে। তেল একটু গরম করে হালকা হাতে মাসাজ করুন। 
• যে কোনও ধরনের চুলের বৃদ্ধিতে যেমন সর্ষের তেল উপকারী, তেমনই চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতেও কাজে দেবে। পাশাপাশি চুলের ভিতর জমতে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসকে দূর করে সর্ষের তেল। কারণ এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে। পাশাপাশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভরপুর থাকার জন্য খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। ফলে এই তেল নিয়ম করে মাথায় লাগানো উপকারী।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
• সর্ষের তেল এবং ইয়োগার্ট মিশিয়ে বাড়িতেই ঘরোয়া প্যাক তৈরি করতে পারেন। এই দুই উপাদান মিশিয়ে মাথার তালুতে লাগিয়ে গরম টাওয়েল দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখুন অন্তত ৩০ মিনিট। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক স্ক্যাল্প এবং চুলকে উজ্জ্বল করে।
• সর্ষের তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে চুলে এক ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল পড়া কমবে।
• বাড়িতে প্রতিদিনের খাবার পাতে লেবু খান অনেকেই। সেই লেবুর রস সর্ষের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতেও চুল উজ্জ্বল হবে। 
• সর্ষের তেলের সঙ্গে কলা মিশিয়েও চুলে লাগাতে পারেন। প্রয়োজনে এর সঙ্গে ইয়োগার্ট মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার তালুতে লাগালে শুষ্ক চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া সম্ভব। 
সাবধানতা
সর্ষের তেল আপনার চুলের পুষ্টির জন্য অবশ্যই একটি ভালো উপাদান। তবে সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ নাও করতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, প্রতি সপ্তাহে ব্যবহার করার আগে একটা প্যাচ টেস্ট করে নিন। বাড়িতেই এই পরীক্ষা করতে পারেন। মাথার তালুর অল্প অংশে সর্ষের তেল লাগিয়ে রাখুন। দেখুন, আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সর্ষের তেল আদৌ সহ্য হচ্ছে কি না। এছাড়াও কয়েকদিনের ব্যবধানে অন্তত তিনবার এই প্যাকগুলি লাগিয়ে দেখুন, আপনার চুলের স্বাস্থ্য কিছুটা উন্নত হল কি না। তবে বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখবেন না। বড়জোর এক ঘণ্টা রেখে এই পরীক্ষা করতে হবে। কারণ বেশিক্ষণ সর্ষের তেল মাথায় থাকলে ময়লা, দূষণ অনেক বেশি পরিমাণে আটকে যায়। তা দীর্ঘদিন ধরে মাথায় আটকে থাকলে ভবিষ্যতে আখেরে চুলের ক্ষতিই করবে। মনে রাখবেন, কারও তৈলাক্ত, কারও বা শুষ্ক চুলের ধরন। ফলে সবার স্ক্যাল্পে সর্ষের তেল আদৌ কার্যকরী হবে কি না, তা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। 
স্বরলিপি ভট্টাচার্য

রাশিফল