শনিবার, 19 জুলাই 2025
Logo
  • শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

ঈশ্বর

শ্রীরামকৃষ্ণদেব এ যুগের আদর্শ দিলেন ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’। পদব্রজে ভারত পরিভ্রমণ কালে বিবেকানন্দ সারা ভারতে ভয়াবহ দারিদ্র্যের রূপ প্রত্যক্ষ ক’রে অন্তরে গভীর বেদনা অনুভব করেন। 

ঈশ্বর

শ্রীরামকৃষ্ণদেব এ যুগের আদর্শ দিলেন ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’। পদব্রজে ভারত পরিভ্রমণ কালে বিবেকানন্দ সারা ভারতে ভয়াবহ দারিদ্র্যের রূপ প্রত্যক্ষ ক’রে অন্তরে গভীর বেদনা অনুভব করেন। দেশের এই ভয়াবহ দারিদ্র্য মোচনের উপায় চিন্তনে তিনি উপলব্ধি করলেন রামকৃষ্ণদেবের ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’ মন্ত্রের নিগুঢ় মর্ম। উদগীত হল তাঁর কণ্ঠে সেই পরম উপলব্ধি—“বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?/ জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।” মেঘমন্দ্রিত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঋষি—“পড়েছ ‘মাতৃদেবো ভব’, ‘পিতৃদেবো ভব’, আমি বলি ‘দরিদ্রদেবো ভব’, ‘মূর্খদেবো ভব’। দরিদ্র, মূর্খ, অজ্ঞানী, কাতর—ইহারাই তোমার দেবতা হউক, ইহাদের সেবাই পরম ধর্ম জানিবে।” ভারতবাসীর দারিদ্র্য-দুঃখ দূর করার জন্য বনের বেদান্তকে ঘরে আনলেন বিবেকানন্দ প্রভুর দেওয়া “শিবজ্ঞানে জীবসেবা” মন্ত্রে কর্মযজ্ঞের প্রবর্তন ক’রে। নরদেহে শ্রীসত্যানন্দদেবের লীলা অনুধাবন করলে দেখা যায় দীননারায়ণের প্রতি তাঁর ছিল আশৈশব অশেষ করুণা। স্কুল-কলেজ জীবনে টিফিনের পয়সাগুলি নিজে অভুক্ত থেকে পথে দীন দুঃখীদের দান করতেন। আবাল্য-তপস্বী সত্যানন্দদেবের মনুষ্যেতর প্রাণীর প্রতিও ছিল সমান প্রেম। পথের মুমূর্ষু কুকুরকে দোকান থেকে খাবার কিনে খাইয়ে তবে ফিরেছেন বাড়ী সারাদিনের স্নানাহার-রিক্ত তপোক্লিষ্ট দেহটি নিয়ে। ছোটবেলা থেকেই ভালবেসেছিলেন বিবেকানন্দকে। তখন থেকেই স্বামীজীর ছবি বুকে নিয়ে বেড়াতেন। স্বামীজীর বিশাল নেত্রে অনুভব করতেন সমস্ত জগতের দুঃখে যেন অভিভূত হয়ে আছে সে দৃষ্টি। পরবর্তীকালে সন্তানদের কাছে স্বামীজীর এসব কথা বলতে বলতে তাঁর চোখ দুটিও হয়ে উঠত করুণার্দ্র।
নির্বিকল্প সাধনায় সিদ্ধিলাভ ক’রেও ধ্যান-তন্ময়তা কাটে না সত্যানন্দদেবের। প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা অতিবাহিত হয় ধ্যানে। কিন্তু কাছে পিঠে কোথাও আর্ত্ত প্রাণের কাতর ক্রন্দন ধ্বনিত হলে ধ্যানের মাঝেও আর্ত্তিহারী নারায়ণের কানে এসে পৌঁছয় সে আর্তি। তিনি স্থির থাকতে পারেন না। শীতের রাতে আশ্রমের দরজার কাছে নিশ্চিন্তে ফেলে দিয়ে গেল এক পাগলী মা তার পিতৃহীন শিশুটিকে। প্রচণ্ড শীতের তাড়নায় শিশুটি উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দনরত। শিশুর ক্রন্দনে পাড়াপড়শীরা কেউ সাড়া তো দিলই না, উল্টে গৃহের সুখশয্যায় শুয়ে শুয়েই কেউ কেউ গাল দিল পাগলীকে তাদের নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটায়। অবশেষে দীনশিশুনারায়ণের কাতর ক্রন্দন ধ্যানলোক থেকে নামিয়ে আনল দীননাথকে। শ্রীঠাকুর তাকে আশ্রম প্রাঙ্গণে তুলে এনে গরম বিছানা ক’রে গায়ে ঢাকা দিয়ে শুইয়ে দিলেন। শান্ত হয়ে পরম স্বস্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল শিশুটি। পাগলী প্রায়ই তাকে যেখানে সেখানে ফেলে রেখে চলে যেত। 
স্বামী হীরানন্দের ‘আলোর দেবতা সত্যানন্দ’ থেকে

রাশিফল