বৃহস্পতিবার, 19 জুন 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

মানুষকে ঘায়েল করতে কোলেস্টেরল চুরি করছে জীবাণুরা! কালাজ্বর থেকে করোনা, যক্ষ্মা থেকে ম্যালেরিয়া

 চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা! কিন্তু মানুষের মাথা বলে কথা! ঠিক ধরা পড়ে গেল জীবাণুদের জারিজুরি। আইআইটি খড়্গপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশবন্দিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা ফাঁস করে দিলেন জীবাণুদের চুরিবিদ্যা। 

মানুষকে ঘায়েল করতে কোলেস্টেরল চুরি করছে জীবাণুরা! কালাজ্বর থেকে করোনা, যক্ষ্মা থেকে ম্যালেরিয়া

বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা! কিন্তু মানুষের মাথা বলে কথা! ঠিক ধরা পড়ে গেল জীবাণুদের জারিজুরি। আইআইটি খড়্গপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশবন্দিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা ফাঁস করে দিলেন জীবাণুদের চুরিবিদ্যা। বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন, মানুষকে সংক্রামিত করার প্রথম ধাপে ধুরন্ধর বেশকিছু জীবাণু আগে মানবকোষের প্রাচীরে থাকা কোলেস্টেরল চুরি করতে থাকছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, লক্ষ্য যেখানে মানুষের শরীরে সন্ত্রাসবাদী হামলা, হঠাৎ করে কোলেস্টেরল চুরি কেন? 
আইআইসিবি’র স্ট্রাকচারাল বায়োলজি ও বায়োইনফরমেটিভস-এর অধ্যাপক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ কৃষ্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্সেস-এর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-এর বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এমিরেটাস অধ্যাপক ডঃ শ্যামল রায়, আইআইটি খড়্গপুরের স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর বিজ্ঞানী ডঃ বুধাদিত্য  মুখোপাধ্যায় সহ ১০ জন বিজ্ঞানী-গবেষক এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন তাঁদের সাড়া জাগানো গবেষণাপত্রে। ‘এমবো রিপোর্টস’ শীর্ষক বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, কোষের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য কাজকর্মে কোলেস্টেরলের ভূমিকা অপরিসীম। তাই অনুপ্রবেশ পর্বে কোষকে দুর্বল করতে, অসহায় করে তুলতে গেলে কোলেস্টেরল ‘চুরি’ করাটা যে অত্যন্ত জরুরি! সে কারণেই চালাকচতুর জীবাণুকুল মানবকোষে অনুপ্রবেশের আগে তার রক্ষণ ব্যবস্থাটাই ভিতর থেকে দুর্বল করে দেওয়ার কৌশলে লিপ্ত হয়। সে-কাজে নামায় ‘কেএমপি ১১’ নামের একটি প্রোটিনকে। তারা জীবাণু এবং পোষক কোষ (এক্ষেত্রে মানুষ) এখন প্রশ্ন উঠতে পারে—সে নয় জানা গেল জীবাণুরাও কম যায় না, তারা চুরি করে কোলেস্টেরল কিন্তু এই গবেষণায় মানবসভ্যতার লাভ কী? গবেষণা কাজে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাণুদের ‘চর’ এই ‘কেএমপি ১১’ প্রোটিনকে যদি কোনও ওষুধ দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যায়, তাহলে মানবশরীরে যে জীবাণুর সংক্রমণও আটকানো সম্ভব। হয়ে যেতে পারে মিরাকেল। তাই নয় কি? কালাজ্বরের জীবাণু ‘লিসমোনিয়া দোনোভ্যানি’ নামের পরজীবী নিয়ে এই গবেষণা করেছিলেন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলির বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই চালাকি শুধুমাত্র কালাজ্বরের জীবাণুই করছে না, করোনা, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়ার জীবাণুরা সংক্রমণের প্রথম ধাপে পোষক কোষ থেকে টুক টুক করে কোলেস্টেরল চুরি করে প্রথমে তাকে দুর্বল এবং অশক্ত করে তুলছে। শ্যামলবাবু বলেন, ঠিক যে জায়গায় হানা দিয়ে কেএমপি ১১ প্রোটিন কোলেস্টেরল চুরি করে তার নাম হল ‘মোটিফ’। তারা জীবাণু এবং পোষকের মাঝে ঝুলন্ত বাদুড়ের মতো থেকে এই কাজ করতে থাকে। কোষও হয়ে পড়ে দুর্বল। আর মানুষও সংক্রামিত!