শুক্রবার, 11 জুলাই 2025
Logo
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

থানায় জাল ‘ইনসপেক্টর’! প্রেমিকার মন পেতেই পুলিসের সাজ যুবকের

সকাল সাড়ে দশটা। খাঁকি ইউনিফর্ম পরে এন্টালি থানায় ঢুকলেন রাজ্য পুলিসের এক ইনসপেক্টর। বুকের নেমপ্লেটে লেখা ‘দীপ্তেন্দু বাগ, ইনসপেক্টর অব পুলিস’। 

থানায় জাল ‘ইনসপেক্টর’! প্রেমিকার মন পেতেই পুলিসের সাজ যুবকের

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সকাল সাড়ে দশটা। খাঁকি ইউনিফর্ম পরে এন্টালি থানায় ঢুকলেন রাজ্য পুলিসের এক ইনসপেক্টর। বুকের নেমপ্লেটে লেখা ‘দীপ্তেন্দু বাগ, ইনসপেক্টর অব পুলিস’। পোশাকে রাজ্য পুলিসের লোগো। কোমরে পুলিসের বেল্ট।  সঙ্গে তাঁর গার্লফ্রেন্ড। ইনসপেক্টর দেখে থানায় থাকা এক কনস্টেবল স্যালুট ঠুকলেন। থানার বড়বাবুর রুম পেরিয়ে গটগট করে সোজা সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। পিছনের দিকে যেতেই দেখা হল থানার সার্জেন্ট সায়ন্তন মিত্রের সঙ্গে। তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন  রাজ্য পুলিসের ওই ইনসপেক্টর। পুলিসের পোশাকেই সার্জেন্টকে প্রণাম করে বলেন, ‘স্যার আমাকে চিনতে পারছেন? তিন মাসে আগে শিয়ালদহ স্টেশনে মানিব্যাগ হারিয়ে গিয়েছিল। আপনি খুঁজে দিয়েছিলেন। টাকা না থাকায় আপনি একশো টাকাও দিয়েছিলেন বাড়ি ফেরার জন্য।’ খানিকটা ইতস্তত হয়ে ওই সার্জেন্ট বলেন, ‘আচ্ছা।’ এরপর খাঁকি উর্দিধারী প্রথমে তাঁকে বলেন, তিন মাস হল চাকরি পেয়েছেন। পরে ভুল স্বীকার করে জানান, তিন বছর হল চাকরি পেয়েছেন। ভবানীভবন এটিএসে পোস্টিং রয়েছেন। কিন্তু এত অল্প সময়ে প্রোমোশন কীভাবে সম্ভব, তাই নিয়ে প্রশ্ন জাগে সার্জেন্টের। সন্দেহ আরও বাড়ে সার্জেন্টকে ‘স্যার’ বলায়। একই সঙ্গে ওই যুবকের আচার-আচরণ ও কথাবার্তা পুলিসের ঢংয়ে না হওয়ায় তাঁকে তদন্তকারী অফিসারদের রুমে নিয়ে এসে বসানো হয়।
এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন অফিসাররা। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে ওই যুবক জানান, তিনি একটি বেসরকারি কলেজে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। তাঁর গার্লফ্রেন্ড এনআরএসে নার্সিং নিয়ে পড়াশুনা করছেন। দু’জনেই ক্যানিংয়ে পড়াশুনা করেছেন। স্কুল জীবনে আলাপ হওয়ার পর প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। পার্স হারানোর পর সুদর্শন ওই সার্জেন্টের সঙ্গে দেখা হলে তাঁর ইচ্ছা জন্মায় পুলিস হবেন। এরপর বাড়ি ফিরে ‘টুয়েলফথ ফেল’ সিনেমাটি দেখেন। পুলিস হওয়ার জন্য পণ করেন। গুগলে গিয়ে পুলিসের ইউনিফর্ম, বন্দুক চালানো ও থানার ছবি ডাউনলোড করেন। এরপরই খাঁকি পোশাক তৈরি করেন। গার্লফ্রেন্ডকে বলেন, পুলিসে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। এদিন গার্লফ্রেন্ডের মন জয় করতে ইউনিফর্ম পরে চলে আসেন। এনআরএসের সামনে দেখা করে প্রেমিকা নিয়ে চলে আসেন থানায়। কিন্তু পুলিসের পদ সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। প্রেমিকা পুলিসকে জানান, দীপ্তেন্দু তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিন মাস হল পুলিসে চাকরি পেয়েছেন। তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, দীপ্তেন্দু আসলে জাল পুলিস। তাঁকে গ্রেপ্তার করে এন্টালি থানা। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর খাঁকি পোশাক, বেল্ট, জুতো ও বাইক।  তিনি পোশাক কার কাছে পেয়েছিলেন, আগ্নেয়াস্ত্র রাখতেন কি না বা প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে তারা তাঁকে থানায় গিয়ে জয়েন করতে বলেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি পুলিসের পোশাক পরে তিনি কাউকে ঠকিয়েছেন কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে।

রাশিফল