বৃহস্পতিবার, 19 জুন 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

স্বস্তির ও আনন্দের মুহূর্ত

অবশেষে মুক্তি পেলেন পাকিস্তানে বন্দি ভারতীয় জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ। বাংলার রিষড়ার এই যুবক বিএসএফে কর্মরত। পহেলগাঁওয়ে গণহত্যার পরদিন, ২৩ এপ্রিল তাঁকে আটক করা হয়। পাঞ্জাবের পাঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় তিনি ভুল করে পাকিস্তান ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন এবং গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

স্বস্তির ও আনন্দের মুহূর্ত

অবশেষে মুক্তি পেলেন পাকিস্তানে বন্দি ভারতীয় জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ। বাংলার রিষড়ার এই যুবক বিএসএফে কর্মরত। পহেলগাঁওয়ে গণহত্যার পরদিন, ২৩ এপ্রিল তাঁকে আটক করা হয়। পাঞ্জাবের পাঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় তিনি ভুল করে পাকিস্তান ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন এবং গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখনই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে আটক করে। সীমান্তে এমন ঘটলে, সাধারণভাবে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং সেরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ণমের বেলা পাকিস্তান রীতি মানেনি। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজক পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়েন পূর্ণমকুমার। ঘটনাক্রমে, পূর্ণমকে বন্দি করার দিন দশেক পর, ৩ মে রাজস্থানে একইভাবে সীমান্ত লঙ্ঘন করার কারণে ভারতের হাতে বন্দি হন এক পাক রেঞ্জার। দুইয়ে মিলে বারকয়েক ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ হয়েছে বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জার্সের মধ্যে। তবু জট কিছুতেই কাটছিল না। ইতিমধ্যে ৭ মে ঘটে যায় ‘অপারেশন সিন্দুর’। তার ধাক্কায় পূর্ণমের মুক্তিলাভ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। বাংলাসহ সারা ভারতেরও মন খারাপ হয়ে যায় এই কারণে। কারণ পূর্ণমকুমার একজন নিষ্ঠাবান দেশসেবক। তিনি সীমান্তের ‘কিষান গার্ড’। দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষকদের দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। যেসব ভারতীয় কৃষককে পাকিস্তানের সীমান্ত বেড়া পেরিয়ে গিয়ে চাষাবাদ করতে হয়, তাঁদের সাহায্য করাই তাঁর ডিউটি। এই কর্তব্য পালন করতে গিয়েই ভুল করে পাকিস্তানের দিকে চলে যান পূর্ণম। অমনি পাক সীমান্তরক্ষীরা তাঁকে আটক করে। 
তীব্র টানাপোড়েনের মাঝেই, নাটকীয়ভাবে, ১০ মে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। এত বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই দেখা দেয় নতুন আশার আলো। পূর্ণমকে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের উপর ভারত চাপও বাড়াতে থাকে। পাকিস্তান বাধ্য হয় ‘বন্দি বিনিময়’ মেনে নিতে। সেইমতো বুধবার সকালে প্রথমে পূর্ণমকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। অতঃপর ভারতে বন্দি পাক রেঞ্জারকে তুলে দেওয়া হয় পাকিস্তানের হাতে। ২২ দিনের এক রুদ্ধশ্বাস নাটকে যবনিকা পড়ে বুধবার। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পাঞ্জাবের আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে জয়েন্ট চেক পোস্টে রিষড়ার জওয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাঁর একগাল দাড়ি। যদিও শারীরিকভাবে সুস্থই তিনি। তবে এই মুহূর্তে তাঁকে কোনও ডিউটি দেওয়া হবে না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত তাঁকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তোলার জন্য কাউন্সেলিংই চলবে শুধু। পাকিস্তানের বেড়াজাল পেরিয়ে ভারতের মাটিতে পা রেখেই পূর্ণম ভিডিও কল করেন তাঁর স্ত্রী রজনীকে। তখন রজনী শ্রীরামপুরে আর পূর্ণম পাঠানকোটে। রাস্তাতেই কথা হয় তাঁদের। প্রথমে বিএসএফ ক্যাম্পের সেলুনে সাফসুতরো হন তিনি। অতঃপর জেসিপি স্টেডিয়ামের স্বর্ণজয়ন্তী দরজার সামনে সহযোগীদের সঙ্গে ফটোশ্যুটে অংশ নেন পূর্ণমকুমার। তিনি ফোনে স্ত্রীর কাছে প্রথমেই জানতে চান ছেলের কথা। ‘আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। চিন্তার কিছু নেই। দ্রুত রিষড়ার বাড়ি ফিরব।’—আশ্বস্ত করেন পরিবারকে। সকালেই ফোন পেয়েছিল সাউ পরিবার। শীর্ষ বিএসএফ কর্তাদের তরফে পূর্ণমের মুক্তির সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। 
বুধবার রিষড়ায় ‘সাউ ভিলা’য় আনন্দাশ্রু নিয়ে চলে মিষ্টিমুখের পালা। মিষ্টি বিলি হয় পাড়াতেও। রজনীর কথায় বারবারই প্রকাশ পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। রজনীর স্বামীকে তাঁর কাছে ফেরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে কতখানি সহযোগিতা করেছেন, সেকথা তিনি বলেছেন শতমুখে। মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন, কথা বলেছেন, তার পাশাপাশি স্থানীয় এমপি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দায়িত্ব দেন বিএসএফের ডিজির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য। মমতার মানবিকতায় যার পর নাই মুগ্ধ সন্তানসম্ভবা রজনী। পূর্ণমের মুক্তির খবরে খুশি কল্যাণ বলেন, ‘অবশেষে আমাদের উদ্যোগ সফল হল।’ বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ণমের স্ত্রীর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। বিএসএফের ডিজির সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রেখেছিলাম। রজনীকে পরশুদিনই বলেছিলাম, তাঁর স্বামী ভালো আছেন। তবে তাঁর মুক্তির প্রক্রিয়া একটু সময়সাপেক্ষ। আজ পূর্ণম ছাড়া পেয়েছেন। আমরা সবাই খুশি।’ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও বুধবার দিল্লি থেকে ফোনে পূর্ণমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এই পদক্ষেপে স্বস্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারও। রজনী কেন্দ্রকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সত্যিই, এ এক মধুর সমাপ্তি। এ এক আনন্দের ও স্বস্তির দিন আমাদের সবার জন্য। পূর্ণমকুমার সাউয়ের সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে সারা দেশ। বস্তুত এক অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য রাজ্য এবং কেন্দ্র দুই সরকারেরই।