শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

মৃত প্রাণীর হ্রদ

আমাদের এই পৃথিবী সত্যিই এক বিচিত্র জায়গা। এখানে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যার ব্যাখ্যা করা কঠিন। তেমনই কিছু জায়গার সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করাবেন কমলিনী চক্রবর্তী।

মৃত প্রাণীর হ্রদ

আপাত শান্ত হ্রদ ন্যাট্রন। আফ্রিকার তানজানিয়া এর ঠিকানা। কিন্তু অদ্ভুত সব জিনিস দেখা যায় এখানে। কোনও পশু বা পাখি যদি হ্রদের উপর পড়ে সঙ্গে সঙ্গে তা পাথরে পরিণত হয়। মিশরের মমির মতোই স্থির হয়ে জলের উপর পড়ে থাকে তা। আশ্চর্য লাগছে তো? এই হ্রদ সম্পর্কে আরও জানতে ইচ্ছেও করছে নিশ্চয়ই। চারদিক দিয়ে পাহাড়ে ঘেরা এই ন্যাট্রন হ্রদ। আর পাহাড় থেকেই নাকি নানা খনিজ পদার্থ চুঁইয়ে পড়ে হ্রদের জলে। শান্ত জলে সোডিয়ামের প্রলেপ পড়ে। সোডিয়াম মিশে জলকেই করে তোলে ক্ষারীয়। এতই বেশি মাত্রায় খনিজ পদার্থ জলে রয়েছে যে, এই জল দ্রুত অন্য পদার্থকে ক্ষয় করতে পারে। হাত দিলে চামড়া পুড়েও যেতে পারে। আর এমন জলে পাখিরা যেই না নেমে স্নান করে তেষ্টা মেটাতে যায় অমনি খনিজ যুক্ত প্রভাবে একেবারে পাথরে পরিণত হয়। আর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায় হ্রদের জলের উপর। দেখলে মনে হবে জলে ভাসমান মূর্তি বুঝি। বিখ্যাত ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার নিক ব্র্যান্ট প্রথম এই হ্রদে ফ্লেমিংগো পাখির মৃতদেহ আটকে থাকতে দেখেন। মৃত পাখির ছবি তুলে প্রকাশ করেন তিনি। এই হ্রদের ধারে পাহাড়ের নানা গুহায় ডিম পাড়তে আসে ফ্লেমিংগোর ঝাঁক। তার থেকেই কয়েকটা হয়তো বা হ্রদের জলে নেমে পাথরে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ কিন্তু জানা যায়নি। শুধুই খনিজ পদার্থ এবং ক্ষয়ের কারণেই প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়, নাকি লেকের জলে এমন কিছু রয়েছে, যার ফলে তাদের প্রাণহানি ঘটে তা এখনও জানা যায়নি। 
নিক ব্র্যান্ট তাঁর বর্ণনায় বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে ফিল্মের বাক্সটা ডুবিয়েছিলাম হ্রদের জলে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাক্সটার সব কালি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। সোনালি ফিল্মের বাক্স সাদা হয়ে উঠে এল জল থেকে।’ ভাগ্যিস এই হ্রদের জল কোনও সাগরে মেশে না। বরং পাহাড়ের কোলে আটকেই থেকে যায়। তাই পৃথিবীর অন্যত্র এখানকার জলের অতিরিক্ত সোডিয়াম কোনও প্রভাবই ফেলতে পারে না। কিন্তু তানজানিয়ার শান্ত ন্যাট্রন হ্রদ একাকী রয়ে যায় মৃত প্রাণীদের অকালমৃত্যুর সাক্ষী হয়ে।