বুধবার, 09 জুলাই 2025
Logo
  • বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

ম্যান ইউয়ের  কালো দিন

দু’দিন ধরে অঝোরে বৃষ্টি। পাল্লা দিয়ে তুষারপাতও। কিন্তু অভ্যাস তো আর বদলানো যায় না। সেদিন সকালেও তাই রানওয়েতে হাঁটতে গিয়েছিলেন মিউনিখ-রিয়েম বিমানবন্দরের মেনটেন্যান্স সুপারভাইজার টমাস উড। 

ম্যান ইউয়ের  কালো দিন

 দু’দিন ধরে অঝোরে বৃষ্টি। পাল্লা দিয়ে তুষারপাতও। কিন্তু অভ্যাস তো আর বদলানো যায় না। সেদিন সকালেও তাই রানওয়েতে হাঁটতে গিয়েছিলেন মিউনিখ-রিয়েম বিমানবন্দরের মেনটেন্যান্স সুপারভাইজার টমাস উড। তখনই দেখেন চারদিকে জল-তুষার-কাদার পুরু আস্তরণ। পা ফেলতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল তাঁর। রানওয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই তাঁদের কাজ। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তা এক ইউরোও বেতন বাড়েনি। অগত্যা হরতালের ডাক দিতে হয়েছে। গত তিনদিন কেউই কাজে নামেননি। উড জানেন, বিমানের ওঠানামায় অসুবিধা হতে পারে। তা সত্ত্বেও কিছু করার নেই। সংসারে অনটন। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই মর্নিং ওয়াক শেষ। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ৭টা।
উড ভাবতেই পারেননি, আগামী দশ ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে মিউনিখ এয়ারপোর্টের নাম কালো অক্ষরে লেখা হবে। দিনটা ছিল ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮, বৃহস্পতিবার। বেলগ্রেড থেকে মিউনিখে নামে ম্যাঞ্চেস্টারগামী ব্রিটিশ ইউরোপিয়ান এয়ারওয়েজ ফ্লাইট নম্বর ৬০৯। সেই বিমানেই ফিরছিল বেলগ্রেড রেড স্টার ক্লাবকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান কাপের সেমিফাইনালে ওঠা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড টিম। টিমের ম্যানেজার তখন কিংবদন্তি কোচ ম্যাট বুশবি। যে কারণে ম্যান ইউয়ের নামই হয়ে গিয়েছিল ‘বুশবি বেবস’। জ্বালানি ভরে বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে সেখান থেকে টেক-অফের সময়ই বিপর্যয়। আর তার প্রধান কারণ সেই কাদা। তাতেই আটকে যায় প্লেনের চাকা। ফলে বিমানের গতি ব্যাহত হয়ে দুর্ঘটনা। ৪৪ জন যাত্রীর মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ২৩ জন। ‘বুশবি বেবস’-এর অন্যতম তারকা মিডফিল্ডার ডানকান এডওয়ার্ডস ছাড়াও ম্যান ইউয়ের আরও সাত ফুটবলার এই দুর্ঘটনায় মারা যান। অক্ষত ছিলেন অ্যাটাকিং মিডিও ববি চার্লটন, গোলকিপার হ্যারি গ্রেগ। আট বছর পর ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করার নায়ক ছিলেন এই চার্লটনই।
মিউনিখ বিমান বিপর্যয়ের দশ বছর পর ইউরোপিয়ান কাপ জেতে ম্যান ইউ। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে পর্তুগালের বেনফিকাকে হারানোর পর ম্যাট বুশবি নাকি কেঁদে ফেলেছিলেন। অস্ফুটে উচ্চারণ করেছিলেন একটি শব্দ, ‘ডেস্টিনি’! বাংলায় যার অর্থ নিয়তি। কেন এরকম বলেছিলেন বুশবি? কারণ, মিউনিখে সেদিন বিমান টেক-অফের প্রথম দু’বারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। প্রচণ্ড তুষারপাতের মধ্যেই কোনওরকমে বাড়িওয়ালাকে টেলিগ্রাম পাঠান ডানকান এডওয়ার্ডস, ‘সব ফ্লাইট বাতিল। আগামী কাল উড়বে।’ কিন্তু পাইলট মিউনিখে রাত কাটাতে চাননি। তাই যাত্রীরা ফের বিমানে ওঠেন। কিন্তু কাদায় আটকে গতির হেরফের হওয়ায় সেটি রানওয়ের শেষ প্রান্তের বেড়া ভেঙে একটি বাড়িতে ধাক্কা মারে। বিমানের ডানদিক ভেঙে দেয় একটি খামারবাড়িকেও। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা জ্বালানি ভর্তি একটি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ডানকানকে। দিন পনেরো মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানেন তিনি।

রাশিফল