বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

ব্রহ্ম

জন্মগত বিচারে সবাই শূদ্র। জৈবী অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই শূদ্রের মুখ্য কাজ। তাদের পক্ষে অন্নই ব্রহ্ম। “অন্নং ব্রহ্মেতি।” মানুষ যখন আরও উন্নত হয়, তখন তারা শুধু অন্নকে ব্রহ্মের বিকাশ হিসেবেই দেখে না, তারা ব্রহ্মকে অন্য ভাবেও উপলব্ধি করে। কাজেই মানুষের কাছে ব্রহ্ম নিজেকে অভিব্যক্ত করেন অন্ন বা শস্যকণা হিসেবে।

ব্রহ্ম

জন্মগত বিচারে সবাই শূদ্র। জৈবী অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই শূদ্রের মুখ্য কাজ। তাদের পক্ষে অন্নই ব্রহ্ম। “অন্নং ব্রহ্মেতি।” মানুষ যখন আরও উন্নত হয়, তখন তারা শুধু অন্নকে ব্রহ্মের বিকাশ হিসেবেই দেখে না, তারা ব্রহ্মকে অন্য ভাবেও উপলব্ধি করে। কাজেই মানুষের কাছে ব্রহ্ম নিজেকে অভিব্যক্ত করেন অন্ন বা শস্যকণা হিসেবে। “জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ” বলতে এটাই বোঝায়। পরবর্ত্তীকালে মানুষ বোঝে যে কেবল ভৌতিক অন্নই মানুষের ক্ষুধা দূর করে না। তখন কী হয়? “সংস্কারাৎ দ্বিজ উচ্যতে”। মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক এষণা জাগে। প্রাচীনকালে একে বলা হত বৈদিকী দীক্ষা। বৈদিকী দীক্ষায় মানুষের অতিজাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষুধা বেড়ে যায়। যখন অতিজাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষুধা জাগে তখন মানুষ করে কী? —না, মনের সেই ক্ষুধার নিবৃত্তির জন্যে তারা উপায় খুঁজতে থাকে। এ অবস্থায় তাদের বলা হয় দ্বিজ (যার দু’বার জন্ম হয়)। তাদের জীবনে প্রথম বার জেগেছিল অন্নের ক্ষুধা, দ্বিতীয় বার পরমাত্মার কৃপায় জাগে আর এক ধরনের ক্ষুধা। শুধু মাত্র স্থূল অন্ন দিয়ে এই দ্বিতীয় প্রকার ক্ষুধার উপশম হবে না।
“বেদপাঠে ভবেৎ বিপ্রঃ”। বৌদ্ধিক ক্ষুধা সম্বন্ধে আমরা কী বলতে পারি? যাঁরা ধর্মশাস্ত্র বা ওই ধরনের মূল্যবান শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন জ্ঞানের ক্ষুধা মেটাবার জন্যে তাঁদের আমরা বলি বিপ্র (intellectuals)। যখন পরমাত্মার কৃপায় মানুষ তান্ত্রিকী দীক্ষা পায় ও সাধনার দ্বারা তাদের ঈশ্বরোপলব্ধি হয় তাদের বলা হয় ব্রাহ্মণ। “ব্রহ্ম জানাতি ব্রাহ্মণঃ”। প্রথম স্তরে মানুষ ব্রহ্মকে উপলব্ধি করে অন্ন হিসেবে… ‘অন্নং ব্রহ্মেতি’। দ্বিতীয় স্তরে মানুষ ব্রহ্মকে উপলব্ধি করে কর্ম হিসেবে… “কর্ম ব্রহ্মেতি কর্ম বহু কুর্বীত”।
কর্ম কী? বস্তুত স্থান পরিবর্তনকে বলে কর্ম। স্থান কী? প্রাথমিক আপেক্ষিক তত্ত্বসমূহের অন্যতম হ’ল স্থান—স্থান-কাল-পাত্র নিয়ে এই আপেক্ষিক জগৎ। যেখানে কর্ম সেখানে স্থান-কাল-পাত্র তিনটে তত্ত্বকে থাকতেই হবে। পরমপুরুষ ইচ্ছে গেলে মনের ভেতরে কোন কিছু সৃষ্টি করে তাকেই আবার মনের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেন। কোন কিছু সৃষ্টিকালে সেখানে চলমানতা থাকবেই, আর যেখানে চলমানতা আছে সেখানে কর্মও আছে। আর যেখানে কর্ম আছে সেখানে স্থানিক, কালিক ও পাত্রিক এই আপেক্ষিক তত্ত্বসমূহের বন্ধনও আছে।
“কর্ম ব্রহ্মেতি কর্ম বহু কুর্বীত।” আমরা দেখতে পাই, জনসেবার জন্যে যা আধ্যাত্মিক প্রগতির জন্যে যে কর্ম করা হয় তাতে বস্তুর স্থান পরিবর্ত্তন হয় বৈ কি। জৈবী প্রগতির আদিম অধ্যায়ে সব মানুষের আমিত্ব-বোধটা ছিল কিছুটা পশুর মত। পরবর্তী কালে উন্নতির ধারা বেয়ে সেটা হ’ল মানুষের মত, আরও পরে একদিন হবে দেবতার মত—দেব-মানবের মত, শেষ ধাপে একদিন সে পরমাত্মায় গিয়ে মিশে যাবে। তাহলে পথে রয়েছে চলমানতা, রয়েছে কর্ম... তাই “কর্ম বহু কুর্বীত”।
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্‌’ (১ম-৩য় খণ্ড) থেকে

রাশিফল