শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সেনাবাহিনীর পোশাক-আশাক

মুঘলরা এদেশে শুধু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেনি, সঙ্গে এনেছিল মধ্য এশিয়ার সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস, স্থাপত্য রীতি, যুদ্ধবিদ্যা, আগ্নেয়াস্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ সহ নানা সাংস্কৃতিক উপাদান।

সেনাবাহিনীর পোশাক-আশাক

মুঘলরা এদেশে শুধু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেনি, সঙ্গে এনেছিল মধ্য এশিয়ার সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস, স্থাপত্য রীতি, যুদ্ধবিদ্যা, আগ্নেয়াস্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ সহ নানা সাংস্কৃতিক উপাদান। তবে সেনাবাহিনীর পোশাকে খুব একটা বদল আসেনি। প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত সামরিক পোশাকবিধি মুঘল আমলেও প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। বাঁধাধরা উর্দির প্রচলন ছিল না। অধিকাংশ সৈন্য লাল পাগড়ি পরত। বাহিনীতে বিভিন্ন অঞ্চল ও শ্রেণির মানুষ ছিল। তাঁরা সাধারণত নিজস্ব আঞ্চলিক পোশাক পরতেন। পারস্য, আফগান, তুর্কি ও রাজপুত সৈন্যদের মধ্যে এব্যাপারে পার্থক্য ছিল স্পষ্ট। সেনাপতি নির্ধারিত প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করতে হতো প্রত্যেক সৈন্যকে। সপ্তদশ শতক থেকে গাদা বন্দুক অশ্বারোহী সেনার প্রিয় অস্ত্র হয়ে ওঠে। তাই তাঁরা এমন পোশাক বেছে নিতেন, যা অস্ত্রশস্ত্র বহনের উপযোগী। মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের আমলে শিখ সেনাবাহিনীর পোশাকে কিছু নতুনত্ব আসে। পদাতিকদের জন্য সাদা জামা-ফুল প্যান্ট, কোমরে কালো বেল্ট এবং মাথায় পাগড়ি। অশ্বারোহী বাহিনীর কর্তারা উজ্জ্বল লাল রঙের পোশাক পরতেন। আর সৈন্যদের জন্য ছিল গাঢ় নীল ট্রাউজার্সের সঙ্গে লাল জ্যাকেট, সঙ্গে দু’টি কালো বেল্ট। মহারাজার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের পরনে থাকত হলুদ স্যাটিন কাপড় এবং সোনালি স্কার্ফ।
সে যুগে কোমরের নীচে আঘাত করা ছিল কাপুরুষতা। বীর যোদ্ধারা শত্রুকে মাথায় বা বুকে আঘাত করতেন। তাই সৈন্যদের শিরস্ত্রাণ ব্যবহার ছিল বাধ্যতামূলক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য তা পাগড়ি। উচ্চ পদাধিকারীরা পরতেন ধাতব মুকুট। আত্মরক্ষার জন্য জনপ্রিয় ছিল বেত বা মহিষ, হাতি ও বাঘের চামড়ার তৈরি ঢাল। কচ্ছপের খোলস বা ধাতব পদার্থও ব্যবহার করা হোত। কিছু কিছু ঢাল এত মজবুত ছিল যে, তা দিয়ে বন্দুকের গুলি বা ছোট কামানের গোলা পর্যন্ত প্রতিহত করা যেত। রাজা-বাদশাহদের ব্যবহৃত ঢালের বিশেষ নাম থাকত।
যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত বর্মগুলি পরিচিত ছিল ‘বাকতার’ নামে। সেগুলি কখনও লোহার জাল, কখনও বা লোহার চাদর দিয়ে তৈরি হতো। সৈন্যদের হাত, পা ও মুখ সুচারুভাবে আবৃত থাকত বর্মের আবরণে। হাতি ও ঘোড়ার বুক এবং মাথাও লৌহবর্মে অত্যন্ত যত্নে মুড়ে দেওয়া হত। রাজপুতরা হাতির চোখকে নরম কাপড়ে ঢেকে রাখতেন। যুদ্ধের প্রাক্কালে তা খুলে ফেলা হতো। মুঘল বাহিনীর কাছে সেই আবরণটি ‘পাখর’ নামে পরিচিত ছিল। 
ইংরেজরা শাসন ক্ষমতা দখল করার পর সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোয় বাঁধতে শুরু করে। তাতে ব্রিটিশ ঐতিহ্যের লাল রঙের ছোঁয়া বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ছিল। প্রতিটি প্রেসিডেন্সির জন্য ছিল আলাদা রঙের কারুকাজ—বাংলার সৈন্যদের জন্য লাল, বোম্বের জন্য ধূসর, আর মাদ্রাজের জন্য হলুদ। সমরনীতি, যুদ্ধকলা, অস্ত্রশস্ত্র, বর্ম ও শিরস্ত্রাণে ব্রিটিশ আধিপত্যের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠতে থাকে। এই পরিবর্তনের ফলে একটি নতুন সামরিক সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে।