বৃহস্পতিবার, 19 জুন 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

শুদ্ধচিত্ত

এই ঈশ্বরের অগ্রদূত, এই সুসমাচারবাহক যীশু সত্যলাভের পথ দেখাইতে আসিয়াছিলেন। তিনি দেখাইতে আসিয়াছিলেন যে, নানারূপ অনুষ্ঠান ক্রিয়াকলাপাদির দ্বারা সেই যথার্থ তত্ত্ব— আত্মতত্ত্ব লাভ হয় না; দেখাইতে আসিয়াছিলেন যে, নানাবিধ কূট, জটিল, দার্শনিক বিচারের দ্বারা সেই আত্মতত্ত্ব লাভ হয় না।

শুদ্ধচিত্ত

এই ঈশ্বরের অগ্রদূত, এই সুসমাচারবাহক যীশু সত্যলাভের পথ দেখাইতে আসিয়াছিলেন। তিনি দেখাইতে আসিয়াছিলেন যে, নানারূপ অনুষ্ঠান ক্রিয়াকলাপাদির দ্বারা সেই যথার্থ তত্ত্ব— আত্মতত্ত্ব লাভ হয় না; দেখাইতে আসিয়াছিলেন যে, নানাবিধ কূট, জটিল, দার্শনিক বিচারের দ্বারা সেই আত্মতত্ত্ব লাভ হয় না। আপনার যদি কিছুমাত্র বিদ্যা না থাকে, সে তো বরং আরও ভাল; আপনি সারা জীবনে যদি একখানি বইও না পড়িয়া থাকেন, সে‌ তো আরও ভাল কথা। এ সকল আপনার মুক্তির জন্য একেবারেই আবশ্যক নহে, মুক্তিলাভের জন্য ঐশ্বর্য্য, বৈভব, উচ্চপদ বা প্রভুত্বের কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই—এমন কি, পাণ্ডিত্যেরও কিছু প্রয়োজন নাই। কেবল একটা জিনিসের প্রয়োজন—তাহা এই—পবিত্রতা—চিত্তশুদ্ধি। ‘‘পবিত্রাত্মা বা শুদ্ধচিত্ত ব্যক্তিগণ ধন্য,’’—কারণ, আত্মা স্বয়ং শুদ্ধস্বভাব। উহা অন্যরূপ অর্থাৎ অশুদ্ধ কিরূপে হইতে পারে? উহা ঈশ্বরপ্রসূত—ঈশ্বর হইতে উহার আবির্ভাব। বাইবেলের ভাষায়, উহা ‘‘ঈশ্বরের নিঃশ্বাস স্বরূপ,’’ কোরাণের ভাষায়, উহা ‘‘ঈশ্বরের আত্মাস্বরূপ।’’ আপনারা কি বলিতে চান, এই ঈশ্বরাত্মা কখনও অপবিত্র হইতে পারে? কিন্তু হায়, আমাদেরই শুভাশুভ কর্ম্মের দ্বারা উহা যেন শত শত শতাব্দীর ধূলি ও মলের দ্বারা আবৃত হইয়াছে। নানাবিধ অন্যায় ধর্ম্ম, নানাবিধ অশুভ কর্ম্ম সেই আত্মাকে শত শত শতাব্দীর অজ্ঞানরূপ ধূলি ও মলিনতা দ্বারা সমাচ্ছন্ন করিয়াছে। আবশ্যক কেবল ঐ ধূলি ও মল অপসারণ,—তাহা হইলেই তৎক্ষণাৎ আত্মা আপন প্রভায় উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত হইতে থাকিবে। ‘‘শুদ্ধচিত্ত ব্যক্তিরা ধন্য, কারণ, তাহারা ঈশ্বরদর্শন করিবে।’’ ‘‘স্বর্গরাজ্য তোমাদের অভ্যন্তরেই বিরাজমান। সেই নাজারেথবাসী যীশু আপনাদিগকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, ‘‘যখন সেই স্বর্গরাজ্য এখানেই, তোমাদেরই ভিতরেই রহিয়াছে, তখন আবার উহার অন্বেষণের জন্য কোথা যাইতেছ? আত্মার উপরিভাগে যে মলিনতা সঞ্চিত হইয়াছে, তাহা পরিষ্কার করিয়া ফেল, উহা এখানেই বর্ত্তমান দেখিতে পাইবে। উহা পূর্ব্ব হইতেই তোমার সম্পত্তি। যাহা তোমার নহে, তাহা তুমি কি করিয়া পাইবে? উহা তোমার জন্মপ্রাপ্ত অধিকারস্বরূপ। তোমরা অমৃতের অধিকারী, সেই নিত্য সনাতন পিতার তনয়।’’
ইহাই সেই সুসমাচারবাহী যীশুখ্রীষ্টের মহতী শিক্ষা—তাঁহার অপর শিক্ষা—ত্যাগ; উহাই সকল ধর্ম্মের ভিত্তি-স্বরূপ। আত্মাকে বিশুদ্ধ কি করিয়া করিবে? ত্যাগের দ্বারা। জনৈক ধনী যুবক যীশুকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন,— ‘‘প্রভু, অনন্ত, জীবন লাভ করিবার জন্য আমাকে কি করিতে হইবে?’’ যীশু তাঁহাকে বলিলেন— ‘‘তোমার এখনও একটী অভাব আছে। বাড়ি যাও, তোমার যাহা কিছু আছে সব বিক্রয় কর, এবং ঐ বিক্রয়লব্ধ অর্থ দরিদ্রগণকে বিতরণ কর—তাহা হইলে স্বর্গে তুমি অক্ষয়সম্পদ্‌ সঞ্চয় করিলে। তার পর আসিয়া ক্রুস গ্রহণ করিয়া আমার অনুসরণ কর।’’ ধনী যুবকটী যীশুর এই উপদেশে দুঃখিত হইল এবং বিষণ্ণ হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার অগাধ সম্পত্তি ছিল। আমরা সকলেই অল্প বিস্তর ঐ ধনী যুবকের মত। 


ব্রহ্মচারী জ্ঞান মহারাজের ‘‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব’ থেকে