মঙ্গলবার, 08 জুলাই 2025
Logo
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

চাকা ভাঙা রথ

কাল থেকে মাইকে পুরনো দিনের গান বাজছে। মন ব্যাকুল করা সব সুর। সেই সুর কোন সুদূরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। 

চাকা  ভাঙা রথ

ছন্দা বিশ্বাস: কাল থেকে মাইকে পুরনো দিনের গান বাজছে। মন ব্যাকুল করা সব সুর। সেই সুর কোন সুদূরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আজ খুব ভোরবেলা উলুধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেল। বুঝতে পারলাম, নুড়ির দধিমঙ্গল হচ্ছে। গতকাল দুপুরে নুড়ি এসেছিল আমাদের বাড়িতে। আমি তখন চিলেকোঠা ঘরে বসে ম্যাথসের কিছু জটিল প্রবলেম সল্ভ করছিলাম। নুড়ি কখন ঘরে ঢুকে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে খেয়ালই করিনি।
একসময়ে নুড়িকে দেখে বেশ অবাক হলাম। সবুজ পাড়ের লাল তাঁতের শাড়ি, লাল ব্লাউজ, কপালে লাল টিপ পরেছে। পিঠে ছড়ানো কোঁকড়ানো চুলের রাশি। তারই দু-একটা উড়ে এসে কপালে পড়েছে। নুড়ি বাঁ হাতটা টেবিলের উপরে রাখল। অনামিকায় জ্বলজ্বল করছে হীরক খচিত আংটি। পাত্রপক্ষ এই আংটি দিয়ে নুড়িকে আশীর্বাদ করে গিয়েছে। 
খাতা থেকে কলম সরিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালাম। বললাম, ‘কিছু বলবি?’
নুড়ি উত্তর দিল না। চুপ করে থাকল। 
আজ কেন জানি নুড়ির এই রূপ দেখে আমার ভারী অস্বস্তি হচ্ছে। খাতার পাতায় হাবিজাবি দাগ কাটতে থাকলাম।
দেখি নুড়ির চিবুক বেয়ে জল গড়াচ্ছে অবিরত।  চিলেকোঠা ঘরে তখন এক বিষণ্ণ বাতাস পাক খাচ্ছে। 
আবার নুড়ির মুখের দিকে তাকালাম। হঠাৎ নুড়ি চোখের জল মুছে আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর বলল, ‘তোর খুব দেমাক, তাই না রে সেতু?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘তার মানে?’
‘তুই লেখাপড়ায় ভালো বলে ধরাকে একেবারে সরা জ্ঞান করিস, তাই তো? শোন, ওই পড়াশোনার না কোনও দাম নেই, যে নিজের জীবনের অঙ্কটাই ঠিকমতো কষতে না পারে।’ কথাটা বলে সে একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল। 
সিঁড়ি দিয়ে নামার শব্দ শুনতে পেলাম। 
আমার মাথায় কিছুই ঢুকল না। একটু কি রাগ হয়েছে আমার উপরে?
কিন্তু কীসের জন্যে সে রাগ করেছে বুঝতে পারলাম না।
দুই
নুড়ি আমার জন্মানোর ঠিক ছয় মিনিট আগে পৃথিবীতে আসে। কার্তিকের এক সকালে ছয় মিনিটের ব্যবধানে আমাদের দুই বাড়িতে প্রতিবেশী মহিলাদের উলুধ্বনির সংখ্যা এবং জোরালো উপস্থাপনার তারতম্য শুনে পাড়ার সকলে বুঝতে পারে ঘোষালবাবুর মেয়ে এবং দত্তবাবুর ছেলে হয়েছে। 
ছয় মিনিটের বড় বলে নুড়ি খুব ছোটবেলা থেকেই আমার উপরে খবরদারি করত। কথা শুনলে মনে হবে ছয় বছরের বড় দিদি হবে।  
নুড়ি আমার থেকে নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিল। 
কোন মেঘে বৃষ্টি নামে জানত। মুখে ডিম নিয়ে পিঁপড়ের দল দেওয়াল বেয়ে উঠলে নুড়ি বলত, ‘দেখবি সেতু, আজ ঠিক বৃষ্টি হবে।’
আর হতোও। খুব বৃষ্টি। একেবারে মুষলধারায়। আমি আর নুড়ি উঠোনে নয়তো ছাদে বৃষ্টিতে ভিজতাম। কখনও খুব জ্বর আসত বৃষ্টিতে ভিজে। 
দু’জন জ্বরে পড়ে থাকতাম হপ্তাখানেক। মনে পড়ে, সেবার আমি আর নুড়ি আলপথ ধরে বেশ খানিকটা দূরে চলে গিয়েছি। হঠাৎ একখণ্ড কালো মেঘ রোদ্দুরের ঝুঁটি ধরে উড়িয়ে নিয়ে গেল। ঘন কালো মেঘে আঁধার ঘনিয়ে এল। নুড়ি আমার হাত ধরে বললে, ‘সেতু, দৌড় দে, কালবৈশাখী আসছে—।’
আলপথ ধরে এলোপাথাড়ি ছুটছি দু’জনে। কখনও পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি। পড়তে গিয়েও ধরে ফেলছে নুড়ি। আবার ছুটছি, দৌড় দৌড় দৌড়— এত দৌড় জীবনে দৌড়েছি কি না বলতে পারব না। 
ক্লাস ফাইভে উঠে দু’জন দুই স্কুলে ভর্তি হলাম। মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল, ‘এবারে কার সঙ্গে স্কুলে যাবি, সেতু?’
‘নুড়ি কার সঙ্গে স্কুলে যাবে মা?’
আমার কথার উত্তরে মা গম্ভীর গলায় বলল,‘ও একাই যাবে। ও তো তোর মতো অমন হ্যাবলা-ক্যাবলা নয়, যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে।’
পরের দিনগুলো খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছিল। আমি আর নুড়ি তখন ক্লাস টেনে উঠেছি। একদিন রাতে ঘুম ভেঙে যায় মা-বাবার কথায়। শুনতে পাই, নুড়ির বাবা রমেনকাকুর অবস্থা খুব খারাপ। কাকুর নাকি দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ডায়ালিসিস করতে হবে। 
মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে  বললে, ‘এবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।’
চিকিৎসা করেও বাঁচানো গেল না কাকুকে। 
তিনটে মেয়েকে নিয়ে কাকিমা অথই সাগরে পড়লেন। 
কোনওমতে মাধ্যমিক পাশ করে ইলেভেনে ভর্তি হল নুড়ি। সকালে আর বিকেলে পাড়ার কয়েকটা বাচ্চাকে পড়ায়। কাকিমা মেশিনে সেলাই করে কোনওমতে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়া ছেড়ে দিল নুড়ি।
তিন
সেদিন নুড়িদের বাড়িতে বেশ কিছু লোকজনের কথাবার্তা শুনতে পেলাম।
রাতে খেতে বসে শুনলাম, নুড়ির আজ পাকা দেখা হয়ে গেল।
মা বলল, ‘ছেলেটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। সেই পক্ষের একটা ছেলে আর একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা হতে গিয়েই বউটা মারা যায়। তাই বাচ্চা দুটোকে দেখার জন্যেই বিয়ে করা।’
আমি বললাম, ‘এ আর খারাপ কী? শুনলাম, খুবই অবস্থাপন্ন? নুড়ি ভালোই থাকবে। কাকু বেঁচে নেই। ওর আরও দুটো বোন আছে।’
মা বিরস মুখে বলল, ‘পাত্রের বয়স নুড়ির প্রায় ডাবল। এই বিয়েতে ওর মত নেই। শুধু সংসারের কথা ভেবে—।’ 
মা কিছুটা সময় চুপ করে থাকল। মুখ দেখে মনে হল মা অখুশি। 
মায়ের খুশিতে কী-ই বা যায় আসে।  
চার
হাতেগোনা আর ক’টা দিন পরই নুড়ির বিয়ে। নুড়িকে আজকাল বাইরে দেখা যায় না। সেদিন দেখি, ওদের বাড়িতে দু’জন লোক এসেছে। বিয়ের জন্যে কয়েকটা আম আর কাঁঠাল গাছ বিক্রি করে দিয়েছে কাকিমা। কিছু টাকা-পয়সা তো দরকার। 
নুড়িদের কালো দুধেল গোরুটাকেও সস্তায় বেচে দিল। গোরুটা কাকিমা আর নুড়ির ভীষণ প্রিয় ছিল। বাইরে বেরিয়ে দেখি দালাল গোরুর দড়ি ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলেছে। গোরুটা কিছুতেই যেতে চাইছে না। বারে বারে পিছন ফিরে তাকাচ্ছে আর হাম্বা হাম্বা করে ডাকছে। 
 কাকিমা আঁচলে চোখ মুছছে। নুড়ি পিলার ধরে ঠায় দাঁড়িয়েছিল। ওর বুকের ভিতরে করাত টানার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। 
সেদিন রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙে যেতেই শুনতে পেলাম একটা গানের সুর ভেসে আসছে।
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি নুড়ি বারান্দার পৈঠার উপরে বসে আপন মনে গান গাইছে। শুক্লপক্ষের চাঁদের স্নিগ্ধ আলো এসে পড়েছে ওর মুখে। মনে হল ও কাঁদছে। রক্তে মিশে গিয়েছে কান্না। 
পাড়ার কাকু, জেঠুরা আর সিনিয়র দাদারা দেখি মিটিং করে ওর বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। প্রতিদিনই নুড়িদের বাড়িতে মিটিং বসছে। ছেলের বাবা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন খরচের ব্যাপারে চিন্তা না করতে। কত কী লাগবে শুধু টাকার অঙ্কটা জানিয়ে দিলেই হবে। তবে চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। তাই যাদের নিমন্ত্রণ না করলেই নয় খুব সংক্ষেপে নিমন্ত্রণ সারতে গিয়েও দেখা গেল দেড়শো লোক হবে। 
নুড়ি যেন আজকাল অসূর্যম্পশ্যা হয়ে গিয়েছে। ঘর থেকে বের হয় না। ওদের বাড়ির পিছন দিকে মস্ত বড় বাগান আছে। নারকেল, সুপারি ছাড়াও আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, সবেদা, বাতাবি লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি নানান মরশুমি ফলের গাছ আছে। দিনের বেলাতেও বাগানটা কেমন ছায়াচ্ছন্ন হয়ে থাকে। কত নাম না জানা পাখি আসে বাগানে। 
আঁজলা আর শ্যাওলাকে দেখি প্রায়ই বাজারে যেতে। দিদির বিয়ে বলে কথা।  কাকিমা চিন্তায় চিন্তায় ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সবসময়ে মনমরা হয়ে থাকে। রাতেও মনে হয় ঠিকমতো ঘুমায় না। মায়ের কাছে এসে আঁচলে মুখ চাপা দিয়ে কাঁদতে দেখেছি।  
পাঁচ
আজ সকাল থেকে পুরনো দিনের সব কালজয়ী গান বাজছে। গান বাজানোর দায়িত্বে শান্তনু। মান্না-হেমন্ত-কিশোর- শ্যামলের সঙ্গে আশা-লতা-আরতি- সন্ধ্যার গান বাজাচ্ছে। এই সব গান শুনলে মনটা উদাস হয়ে যায়। 
বেলা যত গড়াচ্ছে লোকের আনাগোনা ততই বাড়ছে। হইচই, চিৎকার-চেঁচামেচি, হাঁক-ডাক, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখর বাড়িটা। বিয়েবাড়ি বলে কথা। 
মাকে দেখছি, এটা সেটা নিতে ঘন ঘন আসা যাওয়া করছে। 
সন্ধে হয়ে এল। লোকজনে পরিপূর্ণ বাড়ি। আলোয় ঝলমল করছে। 
রাত আটটার দিকে বরযাত্রী ও বরের গাড়ি এল। বরের গাড়ির সামনে পাড়ার মেয়েদের সে কী হুটোপাটি, ঠেলাঠেলি, গেট ধরাধরি। হইচই, হাসি-মশকরা, সে এক মজার ব্যাপার।
বান্টি হঠাৎ আমার কানে কানে বলল, ‘নুড়িকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘সে কী!’
এদিকে বর বিয়ের আসরে বসে গিয়েছে। ঘন ঘন উলুধ্বনি আর শঙ্খ বাজছে। ঠাকুরমশাই জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছেন। 
কিছুক্ষণ আগেও নুড়িকে দেখলাম ওর বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছে। তখনও পর্যন্ত বর আসেনি। ওর বান্ধবীরা ওকে ঘিরে বসেছিল। ভাবছি, কোথায় যেতে পারে নুড়ি? 
মা, কাকিমা আরও কয়েকজনের গলা কানাঘুষো শুনতে পাচ্ছি। ঘরের কোণে এমনভাবে কথা বলছে যাতে বাইরের কেউ না জানতে পারে। কাকিমা মায়ের হাত ধরে কাঁপছে, ‘কী হবে গো দিদি? ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’ 
মা বলছে, ‘দাঁড়াও মাথা ঠান্ডা রাখ। এইটুকু সময়ের ভিতরে কোথায় আর যাবে!’ 
মা দেখি নুড়ির বান্ধবীদের ডেকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘নুড়িকে দেখেছিস?’
‘না তো। বর এসেছে শুনে সকলে তো বর দেখতে গেলাম। তারপর বরযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম।’
কী মনে করে বাড়ির দিকে এলাম। দেখি উপরের ঘরে আলো জ্বলছে। অথচ আমার মনে আছে আমি নিজের হাতে উপরের ঘরের আলো নিভিয়ে এসেছি। 
কথাটা ভাবতে ভাবতে দ্রুত ছাদের ঘরে চলে এলাম। ভিতরে ঢুকে দেখি টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে। 
টেবিল ল্যাম্পটা আবার কে জ্বালল? এগিয়ে যেতেই দেখি একটা কাগজ টেবিল ল্যাম্পটার নীচে রাখা।
কাগজটা এক টানে বের করে ভাঁজ খুলে চোখের সামনে মেলে ধরলাম। নুড়ির হাতের লেখা—
‘সেতু, বাগানের শিউলি গাছ তলায় আয়, কথা আছে।’
আমার সমস্ত শরীর তখন থরথর করে কাঁপছে। কী বলতে চায় নুড়ি? ও কি পাগল হয়ে গিয়েছে? বিয়ের আসরে সকলে অপেক্ষা করছে আর ও এখন বাগানে! 
দুদ্দাড় সিঁড়ি পেরিয়ে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে প্যান্ডেলের পিছন দিয়ে নুড়িদের বাড়ির পিছনে বাগানে চলে এলাম। 
এদিকটা বেশ অন্ধকার। সামনের আলোর বন্যা পিছনের দিকটা ঘনান্ধকার করে তুলেছে। ভয়ঙ্কর নিঃস্তব্ধ বাগানটা। নহবতের করুণ সুর শোনা যাচ্ছে। ডালপালা সরিয়ে ফলের বাগানের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময়ে গা-টা কেমন ছমছম করে উঠল। কী অন্ধকার রে বাবা! কিছুই তেমন ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। একটা টর্চ থাকলে ভালো হতো। 
অন্ধকার হাতড়ে এগিয়ে চলেছি। কুল, জারুল আর তেঁতুল গাছ ছাড়ালে একটা গন্ধরাজ গাছ। তার পাশে বেশ বড় একটা শিউলি ফুলের গাছ আছে। শরৎকালে ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছতলা। ছোটবেলায় আমি আর নুড়ি কতদিন এই শিউলি ফুল তুলে দু’জনে মিলে মালা গেঁথেছি। 
ল্যাম্প পোস্টের কিছুটা আলো এসে পড়েছে। পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই শিউলি গাছের দিকে। আলো আঁধারিতে দেখতে পাচ্ছি বেনারসী শাড়ি পরা নুড়িকে। 
শিউলি তলায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
নুড়ি নিরুত্তর। এ সময়ে আমাকে এখানে কেন ডেকেছে? কেউ জানতে পারলে তো একটা কেলেঙ্কারি ব্যাপার হবে। 
কথাটা ভেবে আমি নুড়ির দিকে দুই পা এগিয়ে যাই। বলি,‘কী রে, এখানে কী করছিস?’
নুড়ি কোনও উত্তর দেয় না। 
এদিকে লগ্ন বয়ে যাচ্ছে ভেবে নুড়ির হাত ধরে টান দিয়ে বলি, ‘এই নুড়ি, হচ্ছেটা কী?’
হঠাৎ মনে হল নুড়ির সর্বাঙ্গ দুলে উঠল। 
আমি চমকে উঠে দু’পা পিছিয়ে গেলাম। নীচের দিকে তাকিয়ে দেখি নুড়ির পা দুটো মাটি থেকে কিছুটা উপরে। শরীরটা দুলছে তখনও। 
...
নহবত থেমে যায়। কোলাহল শান্ত  হয়ে আসে। 
হাসপাতাল, মর্গ, পোস্টমর্টেম, দাহক্রিয়া— সব কিছু নির্বিঘ্নে শেষ হয়। চিলেকোঠা ঘরের জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি নুড়িদের বাড়িতে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ভুলু কুকুরটা দুই পায়ের উপরে মুখ রেখে শূন্য উঠোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ভিতরে একটা বিষাদের বল গড়িয়ে যাচ্ছে। 
এত কাছে ছিল নুড়ি, অথচ আমি কখনও বুঝতে পারিনি। আজ মনে হচ্ছে এত বড় আকাশটার সবটা জুড়ে ও আছে।  
রাত বাড়ে। ছাদে এসে দাঁড়াই। আলসেতে ভর করে রাতের আকাশ দেখি। 
তারায় ভরা রাতের আকাশ। নক্ষত্র বাগানে খুঁজতে থাকি। রাত ভোর হয়ে যায়। জানি আমৃত্যু চলবে এ খোঁজ। আকাশ থেকে ঝরে পড়ে নক্ষত্র। 
আমি আঁজলা পেতে থাকি। দেখি, হাতে কমলা রঙের বোঁটায় সাদা শিউলি। 

রাশিফল