যুদ্ধে ফেক নিউজের ব্যবহার মহাভারত থেকেই
কুরুক্ষেত্রের পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধে গুরু দ্রোণাচার্যের শরবৃষ্টিতে একের পর এক পাণ্ডব রথীদের মৃত্যু দেখে প্রমাদ গুনলেন শ্রীকৃষ্ণ। কিছুতেই তাঁকে প্রতিহত করা যাচ্ছে না।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
মে ১৪, ২০২৫
সন্দীপন বিশ্বাস: কুরুক্ষেত্রের পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধে গুরু দ্রোণাচার্যের শরবৃষ্টিতে একের পর এক পাণ্ডব রথীদের মৃত্যু দেখে প্রমাদ গুনলেন শ্রীকৃষ্ণ। কিছুতেই তাঁকে প্রতিহত করা যাচ্ছে না। দ্রোণের এক ব্রহ্মাস্ত্রে বিশ হাজার পাঞ্চাল সেনা, পাঁচশো মৎস্য সেনা, ছয় হাজার সৃঞ্জয় সেনা, দশ হাজার হস্তি এবং দশ হাজার অশ্বের পতন হল। কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, ‘দ্রোণকে যেভাবে হোক থামানো দরকার।’ অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কৃষ্ণ বললেন, ‘দ্রোণকে থামাতে প্রয়োজনে অধর্মের পথও ধরতে হবে। জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে ওসব বিচার করলে চলবে না। সুতরাং যেভাবে হোক দ্রোণের কাছে অশ্বত্থামার মৃত্যু-সংবাদ পৌঁছে দিতে হবে। দ্রোণ সবথেকে বেশি বিশ্বাস করেন যুধিষ্ঠিরকে।’
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির বললেন, ‘এই মিথ্যা সংবাদ আমি কিছুতেই দ্রোণকে জানাতে পারব না।’ কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, ‘জীবনরক্ষার জন্য মিথ্যা বলা পাপ নয়।’ ভীম বললেন, ‘একটা উপায় আছে। আজকের যুদ্ধে আমি একটি হস্তিকে বধ করেছি। তার নাম অশ্বত্থামা।’ সে কথা শুনে যুধিষ্ঠির যুদ্ধরত দ্রোণের দিকে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘অশ্বত্থামা হত’। একটু থেমে আবার অস্ফুটে বললেন ‘ইতি কুঞ্জরঃ’ অর্থাৎ পুরো কথাটার অর্থ হল, অশ্বত্থামা নামের একটি হাতি মারা গিয়েছে। শেষ দু’টি শব্দ দ্রোণ শুনতে পেলেন না। হতাশায়, পুত্রশোকে তিনি অস্ত্র ত্যাগ করলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁর দিকে ধেয়ে গেলেন এবং দ্রোণের শিরশ্ছেদ করলেন। এই একটা মিথ্যাচারই ঘুরিয়ে দিয়েছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের রং।
সেই মহাভারতের আমল থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন রণকৌশলের মধ্যে অন্যতম হল মিথ্যা প্রচার। মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে কীভাবে বিরুদ্ধ শিবিরকে হতোদ্যম করা যায়, মহাভারতই সেটা প্রথম দেখিয়েছে। কথায় আছে, প্রেমে ও রণে অন্যায় বলে কিছু নেই। পৃথিবীর আদি থেকে যত যুদ্ধ হয়েছে, তার মধ্যে একটা সাধারণ কৌশলই হচ্ছে ফেক নিউজ ছড়িয়ে শত্রু শিবিরের মনোবল ভেঙে দাও। ‘অশ্বত্থামা হত’ ছিল সেই ফেক নিউজের আদিরূপ।
এবার রামায়ণে একটু ঢুঁ মারা যাক। কন্দর্পকান্তি রামকে দেখে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে রাক্ষসী শূর্পণখা রক্তাক্ত হলেন। লক্ষ্মণ তাঁর নাক কেটে দিলেন। প্রিয় ভগ্নির অবস্থা দেখে ক্রুদ্ধ লঙ্কাধিপতি রাবণ প্রতিশোধ নিতে সচেষ্ট হলেন। তিনি বুঝলেন, কৌশলে এর বদলা নিতে হবে। তিনি মায়াবিশারদ মারীচের কাছে গিয়ে বললেন, ‘তুমি স্বর্ণমৃগ হয়ে রামকে ভুলিয়ে তাঁকে কুটির থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাও। সেই ফাঁকে আমি সীতাকে হরণ করব। মারীচকে ভয় দেখিয়ে সেই মিথ্যাচারে রাজি করিয়েছিলেন রাবণ। সীতাহরণের পরিণতি হয়েছিল রাম-রাবণের যুদ্ধ। যুদ্ধের পর রাজ্যের মানুষ যখন সীতার সতীত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে গুজব ছড়াচ্ছিলেন, তখন সেটা বিশ্বাস করেছিলেন রামচন্দ্রও। সন্দেহ মোচনে তিনি সীতার অগ্নিপরীক্ষার আয়োজন করেছিলেন। আসলে বহুক্ষেত্রে মিথ্যা প্রচার মানুষের মনে সত্য হিসাবে প্রতীতী তৈরি করে।
সুতরাং কখনও কখনও মিথ্যাচার, গুজব, ফেক নিউজ, ডিপ ফেক সত্যের থেকেও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়া আসার অনেক আগে থেকেই মিথ্যাচারের কৌশল প্রয়োগ করে বারবার হয়েছে যুদ্ধজয়ের প্রচেষ্টা। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার নমুনা ছড়িয়ে আছে। ২০১৭ সালে কলিন’স ডিকশনারিতে ‘ফেক নিউজ’ শব্দটি বছরের সেরা শব্দ হিসাবে মনোনীত হয়েছিল।
মিশরের যুদ্ধ, রোমের যুদ্ধ কিংবা নেপোলিয়নের যুদ্ধ, মার্কিন সিভিল ওয়ার অথবা বিশ্বযুদ্ধ সর্বত্রই কৌশল হিসাবে মিথ্যা প্রচারকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক কমান্ডার থেমিস্টোক্লেস পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধে এই কৌশল ব্যবহার করে বিজয়ী হয়েছিলেন। ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের আখামেনিড সাম্রাজ্যের রাজা দারিয়ূসের পুত্র জেরক্সেস গ্রিস জয় করতে অভিযান শুরু করেন। সেই বার্তা পেয়ে আতঙ্কে কেঁপে উঠল গ্রিস। জেরক্সেস তখন অপরাজেয়। জেরক্সেসকে আটকাতে বুদ্ধি প্রয়োগ করলেন এথেন্সের নৌবাহিনীর প্রধান থেমিস্টোক্লেস। তিনি জানতেন, সরাসরি যুদ্ধে তাঁরা এঁটে উঠবেন না। কারণ তাঁদের নৌবহরের সংখ্যা খুব বেশি হলে সাড়ে তিনশো আর জেরক্সেস যুদ্ধে এসেছেন প্রায় ১২শো নৌবহর নিয়ে। তাই তিনি গুজব ছড়িয়ে দিলেন, গ্রিক বাহিনীর যোদ্ধারা ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তাঁরা লড়াইয়ে প্রস্তুত নন। সেকথা শুনে জেরক্সেস ভাবলেন, এটাই মোক্ষম সময়। গ্রিক নৌবহর ভেঙে চুরমার করতে এগিয়ে গেলেন জেরক্সেস। এই কৌশলে থেমিস্টোক্লেস সংকীর্ণ সালামিস প্রণালীর দিকে টেনে আনলেন শত্রুপক্ষকে। তারপরই ঝঁপিয়ে পড়ে পারস্য নৌবহরকে ভেঙে চুরমার করে দিলেন। ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। জার্মান সেনাদের স্তালিনগ্রাদের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন রুশ সেনারা। তারপর তুষারপাত শুরু হতেই পথ বন্ধ!
প্রত্যেকটা দুষ্টু লোকের একজন করে জাঁদরেল সহযোগী থাকে। যেমন হিটলারের ছিলেন গোয়েবলস। আধুনিক কালে গোয়েবলসকে বলা হয় ‘মিথ্যাচারের জনক’। ১৯৩২ সালের জুলাই মাসে নির্বাচনে জিতে জার্মানিতে ক্ষমতায় এলেন হিটলার। তিনি দেশে তৈরি করলেন প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রি। তার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর চ্যালারাম গোয়েবলসকে। গোয়েবলস দায়িত্ব পেয়েই স্কুল, সংবাদপত্র, ফিল্ম, রেডিও, থিয়েটার, বিদেশ দপ্তর সবকিছুকে নিজের মন্ত্রকেই আওতায় নিয়ে এলেন। প্রথমেই তিনি জার্মান নাগরিকদের বিনামূল্যে একটি করে রেডিও দিলেন। সেখানে একের পর এক মিথ্যা প্রচার শুরু হল। সেখানে মূল কথাই ছিল ইহুদি নিধন, ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা এবং হিটলারের মিথ্যা সাফল্য গাথা। জার্মানরা সেই ‘গোয়েবলস কি বাত’ মন দিয়ে শুনতেন আর বিশ্বাস করতেন হিটলার হলেন ঈশ্বরের পুত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেই মিথ্যাপ্রচার তীব্রতর হয়ে ওঠে। হিটলারেরও ছিল গোদি মিডিয়া। তারা জার্মানির ফাঁপা জয়গাথা বিশাল করে প্রচার করত। হিটলারের মূল লক্ষ্যই ছিল ঘৃণাকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাঁদের হিংস্র করে তোলা। কিন্তু পাপ কখনও বাপকে ছাড়ে না! মিথ্যা কখনও চাপা থাকে না। ১৯৪৩ সালে স্তালিনগ্রাদে নাৎসি বাহিনীর পরাজয়ের পর সমস্ত মিথ্যা প্রচার প্রকাশ্যে আসে। তখন এক ভয়ঙ্কর চাপ তৈরি হয় গোয়েবলসের ওপর। বিখ্যাত ‘স্পোর্টপালাস্ট’ বক্তৃতায় অবশেষে গোয়েবলস স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, জার্মানি বিপদের মুখোমুখি। পাপের শাস্তি পেয়েছিলেন হিটলার এবং গোয়েবলস দু’জনেই। দু’জনেই পরপর দু’দিন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। গোয়েবলস তাঁর স্ত্রী এবং ছয় সন্তানকে বিষপ্রয়োগ করে মেরে ফেলেন, এরপর আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘ইতিহাস আমাদের মনে রাখবে পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা অথবা সর্বশ্রেষ্ঠ অপরাধী হিসাবে।’
বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেক নিউজ প্রচারে পিছিয়ে ছিল না ব্রিটেন কিংবা আমেরিকা। উইনস্টন চার্চিলের তৈরি ‘ব্রিটিশ পলিটিক্যাল ওয়ারফেয়ার এগজিকিউটিভ’ এবং আমেরিকার ‘দ্য অফিস অব ওয়ার ইনফরমেশন’ বেতার মাধ্যমে নানা প্রচার চালাত, যাতে মনে হয় যুদ্ধে তাঁদের দেশ শত্রুশক্তিকে মেরে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। রেডিও ছাড়াও লিফলেট, কার্টুনের মধ্য দিয়ে তখন মিথ্যা প্রচার চালানো হতো। এখনকার ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দ্য কেরল স্টোরি’র মতো প্রোপাগান্ডা ফিল্ম বানিয়েও মানুষের মনে গভীর বিশ্বাস তৈরির প্রয়াস দেখা দিয়েছিল। যেমন ফ্রাঙ্ক কাপ্রার পরিচালনায় আমেরিকা বানাল ‘হোয়াই উই ফাইট’। এটি সাতটি চলচ্চিত্রের একটি সিরিজ। আমেরিকার এই ছবি তৈরির উদ্দেশ্যই ছিল জনগণের প্রতি যুদ্ধোন্মাদনা বাড়িয়ে তোলা এবং মিত্রশক্তির প্রতি তাঁদের বিশ্বাস অটুটু রাখা। সেই সময় জার্মানি বানাল ‘দ্য নাজিস স্ট্রাইক’। অন্যরা বানাল, ‘ডিভাইড অ্যান্ড কঙ্কোয়ার’, ‘দ্য ব্যাটেল অব ব্রিটেন’ ইত্যাদি ছবি। সত্যকে লুকিয়ে মিথ্যা প্রচারের ঢক্কানিনাদে চাপা পড়ে গেল বহু সত্য।
তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রচার রাজনৈতিক খেলায় একটা শুভ উদ্দেশ্যও তৈরি করে। যেমন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ক্ষেত্রে। তিনি বিমান দুর্ঘটনার কৌশল করে আত্মগোপন করতে চেয়েছিলেন এবং পৌঁছে যেতে চেয়েছিলেন রাশিয়ায়। সেখান থেকে চালাতে চেয়েছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধ। ১৯৪৫ সালের পর নেতাজি রাশিয়া যেতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন নেতাজি–গবেষক পূরবী রায়। রাশিয়ার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আলেকজান্দার কালাশনিকভের বক্তব্যেই রয়েছে নেতাজি প্রসঙ্গ। ইনিই একে-৪৭ আগ্নেয়াস্ত্রের স্রষ্টা। নেতাজি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য অবশ্য কেউ খতিয়ে দেখলেন না। অনেকে তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনার কথা মানলেও ব্রিটিশরা কিন্তু তা বিশ্বাস করেনি। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি বলেছিলেন, নেতাজির বিমান দুর্ঘটনার কথা আমরা বিশ্বাস করি না।
১৮৯৮ সালে মার্কিন রণতরী ইউএসএস মেইন কিউবায় ডুবে গেল। খবর ছড়িয়ে দেওয়া হল স্প্যানিশরা এই রণতরী ডুবিয়েছে। মার্কিনরা খেপে গিয়ে বললেন, ‘বদলা চাই’। তারই ফলশ্রুতি আমেরিকা ও স্পেনের যুদ্ধ। এরকম অসংখ্য ‘মিথ্যা’ ইতিহাসে সত্য হয়ে বেঁচে আছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব এবং প্রযুক্তির উন্নতির পর ফেক নিউজ ছড়ানোটা জলভাত হয়ে গিয়েছে। এখন যাঁর হাতে মোবাইল, তিনিই সংবাদদাতা। তিনি তাঁর মতকে জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। আমরা আজ ‘ফ্যাক্ট’কে অস্বীকার করে নিজস্ব ইচ্ছাপূরণের জাল বুনতে ভালোবাসি। সেখানে কেউ মূল সত্যকে তুলে ধরলে আমরা তাঁকে তেড়ে গাল পাড়ি। ইউক্রেন যুদ্ধ, প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ বা পহেলগাঁওয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ফেক ছবি ও খবরের বন্যা বইছে। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা, তাই নিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত। চিলে কান নিয়ে গেছে বললে আজও দেখি মানুষ কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে ছোটেন। এই ‘ভ্রম’ আসলে এক মানসিক বিনোদন, যা আমরা উপভোগ করি। প্রশ্রয় দিই সেই মানসিক আত্মরতিকে!
রাশিফল
-
আজকের রাশিফল
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
অমৃত কথা
-
ধ্যান
- post_by বর্তমান
- জুন 14, 2025
এখনকার দর
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুন 14, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুন 13, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুন 13, 2025