বুধবার, 25 জুন 2025
Logo
  • বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

নিজের কবর খুঁড়ছে পাকিস্তান

ভারতের প্রত্যাঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তান পায়ে ধরেছিল পশ্চিমি মুরুব্বিদের, একসময় ভারতেরও। শান্তিকামী ভারত শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। 

নিজের কবর খুঁড়ছে পাকিস্তান

ভারতের প্রত্যাঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তান পায়ে ধরেছিল পশ্চিমি মুরুব্বিদের, একসময় ভারতেরও। শান্তিকামী ভারত শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, পাকিস্তান ফের বেচাল হলে ভারত হিসেব বুঝে নেবে। অপারেশন সিন্দুরের মতোই প্রত্যাঘাত ফের করতে ইতস্তত করবে না ভারত। পাকিস্তান সরকার এই হুঁশিয়ারিকে কী চোখে দেখছে, সেটাই লক্ষণীয়। ইতিমধ্যে বৈদেশিক ঋণের (আইএমএফ) অর্থে জঙ্গিদের ১৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চলেছে তারা। পাশাপাশি লস্কর-ই-তোইবার ভারত বিরোধী চক্রান্ত থামেনি। উল্টে অপারেশন সিন্দুরের ক্ষতের প্রতিশোধ গ্রহণের প্ল্যান সাজিয়েছে এলইটি। ভারতীয় গোয়েন্দাদের খবর, অপারেশন সিন্দুরের পর‌ই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এলইটির কমান্ডার স্তরের একটি বৈঠক হয়েছে। পেশোয়ার থেকে মুলতান, লাহোর অথবা করাচি—পাক মুলুকের নানা প্রান্তে বিস্তৃত এলইটি কমান্ডাররা এই বৈঠকে যোগ দেয়। নেতৃত্বে ছিল আবু আমির হামজা এবং মহম্মদ শোয়েব। বৈঠকে স্থির হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা ধরে সীমান্ত বরাবর বিস্তীর্ণ অংশে সুড়ঙ্গ তৈরি হবে। সেই পথে তস্করের মতোই ভারতে পাঠানো হবে ফিদায়েঁ জঙ্গিদের। একসঙ্গে বিভিন্ন এলওসি পয়েন্ট টার্গেট করছে লস্কর। অনেকগুলি স্থানে এই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরুও করেছে তারা। এই ব্লু-প্রিন্ট কেন? অধিকৃত কাশ্মীরের নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গপথে জঙ্গিরা অনুপ্রবেশ করলে নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রহরারত ভারতীয় সেনা এবং বিএসএফের চোখে ধুলো দেওয়া সহজ হবে। এখানেই শেষ নয়, ভারতের শত্রুদের চক্রান্ত আরও মারাত্মক। একসঙ্গে অনেকগুলি জঙ্গি দল সীমান্তের এপারে তো ঢুকবেই, নাশকতার ওই ছকে অনুপ্রবেশ করবে কিছু পাকসেনাও! জঙ্গিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই ‘পবিত্র’ লড়াই করার ব্রত নিয়েছে পাক সরকার। 
এই প্রক্রিয়া পাক-ভারত সংঘাতের সময়ই শুরু হয়েছিল। পহেলগাঁও হামলার আগেই পাকসেনার তরফে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন চলছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতির আড়ালেও লাগাতার সুড়ঙ্গ খুঁড়েছে এই মানিকজোড়। তাদের লক্ষ্য ছিল, ভারতীয় বাহিনী গুলিযুদ্ধে ব্যস্ত থাকাকালেই সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ তারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর পাওয়ামাত্রই এলওসি বরাবর ভারতের তরফে সতর্কতা অবলম্বন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, পাকিস্তান কি তাহলে ভারতের হুঁশিয়ারিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না? পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের রাস্তা ছাড়লে এলইটির মতো জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের মাটি ব্যবহার করে ভারত-বিরোধী প্ল্যান যথাপূর্ব চালিয়ে যাচ্ছে কী করে? এরই মধ্যে রবিবার পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছে রাজাউল্লাহ নিজামনি। সে গাজি আবু সাইফুল্লাহ খালিদ নামেও পরিচিত ছিল। ২০০৬ সালে নাগপুরে আরএসএস সদর দপ্তরে ব‌্যর্থ হামলা প্রচেষ্টার নেপথ্যে ছিল সে। এছাড়া ২০০৫ সালে বেঙ্গালুরু ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এবং রামপুর সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলার ঘটনাতেও তার নাম রয়েছে। তার আগে নেপালেও একাধিক অপারেশনের মাস্টারমাইন্ড এই গাজি।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বড় ধাক্কা খেয়েই সে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিল। পাকিস্তানে সে এলইটি এবং জামাত-উদ-দাওয়ার বড় বড় নেতাদের সঙ্গে কাজ করছিল। তার স‌্যাঙাতদের মধ্যে ছিল ইউসুফ মুজাম্মিল (এলইটি’র জম্মু ও কাশ্মীরের কমান্ডার), মুজাম্মিল ইকবাল হাসমি, মহম্মদ ইউসুফ তাইবি প্রভৃতি। পাকিস্তান সরকারই গাজিকে ভিভিআইপির মতো নিরাপত্তা দিত। আর সেই কিনা খুন হয়ে গিয়েছে সিন্ধুর বাদিন জেলার মাতিল এলাকায়! রবিবার গাজি যখন তার বাড়ি থেকে বেরচ্ছিল ঠিক তখনই তাকে লক্ষ্য করে গুলি চলে। পহেলগাঁও টার্গেট কিলিংয়ের পর পাকসেনা এবং আইএসআই এলইটি জঙ্গিদের সকলকেই হুঁশিয়ার করেছিল যে, কেউ এই মুহূর্তে খোলামেলা ঘুরে বেড়াবার হিম্মত দেখাবে না। তাতে যেকোনও মুহূর্তে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। কিন্তু হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ এই দুর্বৃত্ত এতটাই বেপরোয়া যে, কোনও চেতাবনিকেই সে আমল দেয়নি। কিন্তু এই মোস্ট ওয়ান্টেড লস্কর জঙ্গি বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল কোন সাহসে? স্বাভাবিকভাবেই রহস্য ঘোরালো হচ্ছে, লস্করের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের আততায়ী তাহলে কে? প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, ‘পিকচার অভি বাকি হ্যায়!’ ভুল বলেননি রাজনাথ। পড়শির সঙ্গে শত্রুতার নীতিতে যত বেশি শান দেবে, শান্তিপ্রতিষ্ঠার শর্ত যত ভাঙবে, পাকিস্তান তত বেশি নাস্তানাবুদ হবে অভ্যন্তরীণ গোলযোগে। গৃহযুদ্ধেই ছারখার হতে থাকবে দেশটির নানা প্রান্ত। বিপুল অঙ্কের জঙ্গিভাতা এবং জঙ্গিদের ক্ষতিপূরণ দিয়েও এসব থামাতে পারবে না পাক প্রশাসন। রক্তবীজের ঝাড়েরই সৌজন্যে টুকরো টুকরো হবে পাকিস্তান।